॥ অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন ॥

হয়ে গেল ডাকসু-জাকসু নির্বাচন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে কয়েক বছর পূর্বে নির্বাচন হলেও জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো প্রায় ৩৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর। বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্টাফ, বিভিন্ন প্রশাসনসহ মিডিয়ার মাধ্যমে যা জানা গেল তা এ যাবৎকালের সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে বলে জাতি স্বস্থির নিঃশ^াস ফেলে শুকরিয়া আদায় করছে।

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় নিরপেক্ষতা শব্দটির কবর রচিত হওয়ার পর মানুষ সকল নির্বাচন থেকে মুখ ফিরে নিয়েছে। একনায়কত্ব ও স্বৈরাচার ব্যবস্থার জাঁতাকলে জাতি নিষ্পেষিত ও মেরুদ-হীন হয়ে পরেছিল। ছাত্রজনতার আন্দোলনে বহুসংখ্যক প্রাণের বিনিময়ে ও পঙ্গুত্ব বরণের মাধ্যমে দেশ আজ খোলা আকাশ, মুক্ত বাতাস ও স্বাধীন মত প্রকাশের এক অমূল্য সম্পদ লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে জন্মলাভ করা সরকার ৬ টি কমিশন গঠন করে নানামুখী সংস্কার জুলাই সনদ নামে সংবিধানের অংশ হিসেবে গ্রহণের চেষ্টা করছে এবং জাতি আশা করছে তার প্রেক্ষিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংস্কারগুলোতে ঐকমত্যের কোন বিকল্প নেই এ বিষয় সরকারসহ রাজনৈতিক ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ মতামত প্রকাশ করেছে।

জাতীয় সংসদের প্রস্তুতি সম্পর্কে খুব জোর দিয়ে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য এসেছে যা দীর্ঘ ১৬ বছরের কালিমা লেপনে লুন্ঠিত গণতান্ত্রিক অধিকারকে নতুনভাবে জীবন দিয়ে জাতিকে উপহার দিবে। দীর্ঘদিনের কলংক মুছে দিয়ে এক অবাধ-নিরপেক্ষ, সমঅধিকার, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতি পাবে যা ইতিপূর্বে হয়নি। আমরা আশা করি, জাতি তা পাবে। ভুলে গেলে চলবে না খাসিলত পরিবর্তন করা খুব কঠিন কাজ। কথায় আছে কাঁঠাল পাকলে আমার আর পঁচে গেলে তোমার অর্থাৎ নিজের পক্ষে রায় হলে সব ঠিক বিপক্ষে গেলে সব বেঠিক।

দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক নির্বাচনী ব্যবস্থায় যখন যারা জয়লাভ করতে পেরেছে তখন তা খুব উৎকৃষ্ট পথ আর যখনই সে পদ্ধতিতে কারও পরাজয় হয়েছে তখনি বলা হয়েছে কিছু কারচুপি, মিশ্র কারচুপি অনেক খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে করা হয়েছে নানা মিথ্যাচার। এ চরিত্রই দেখা যাচ্ছে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ক্ষেত্রে।

বিজয়ীরা কেন বিজয় লাভ করেছে একটি বিশেষ দল ছাড়া গোটা জাতি আজ এ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছে। যারা এ নির্বাচন বয়কোট করেছে বা পক্ষপাতিত্ব বলছে, এছাড়া তাদের মুখ রক্ষা করার আর কোন বিকল্প ছিল না। তাদের জানা ছিল এ নির্বাচনে তাদের বৈঠা পানি পাবে না। তারা জানতো তাদের মন্দ কাজ-কর্ম ছাত্র সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। পরাজয়ের কারণগুলো জাতিও ভালভাবে জানে।

প্রথম থেকে যদি দৃষ্টি আকর্ষণ করি কেন বিজিতরা বারে বারে রিট করেছে, শিবিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালিয়েছে, নারী সংক্রান্ত কুৎসিত মন্তব্য করেছে-এর পিছনে কী কারণ ছিল? এতে তাদের ফল পক্ষে না বিপক্ষে গিয়েছে? ভিসিসহ নির্বাচন কমিশন, প্রিজাইডিং অফিসারগণ ও নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত সকলকে যেভাবে অপমানিত ও লাঞ্চিত করা হয়েছে এবং পক্ষপাতের ধোঁয়া তুলেছে এর পিছনে কী ইঙ্গিত বহন করছে? এখানে যারাই দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে কি বিজিতদের মনমানসিকতার কর্মকর্তা কর্মচারী ছিলেন না? তাঁরা সকলেইতো নিরপেক্ষ থেকে সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য জান প্রাণ দিয়ে কাজ করেছেন। তদুপরি সবাইকে পক্ষপাতদুষ্টে দোষী করার জন্য উঠে পরে লেগেছে। নাচ্তে না জানলে উঠান বাঁকা-এ থিওরী থেকে সরে এসে নিজেদের মূল্যায়ন করা জ্ঞানীর কাজ। পরে হলেও মুরুব্বিদের মধ্যে এ বিষয়ে ভাববার বা চিন্তার উদ্রেগ হয়েছে। আবার কাউকে কাউকে দেখা যাচ্ছে ইসলামের মুফতি সেজে বক্তব্য দিতে দিতে এমন বেসামাল হয়ে পরেছেন যে গন্তবে পৌঁছতে সব পথ এলোমেলো করে হাতরানো শুরু করেছেন। দুটি বিশ^বিদ্যালয়ের নির্বাচনে তাদের ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পাবলিক প্রতিনিধি নির্বাচনে যদি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির এমন পথ সৃষ্টি করা হয় যা গত স্বৈরাচারদের বৈশিষ্ট্য ছিল তখন কি করা হবে?

ডাকসু-জাকসুতে সবদিক দিয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সকলে মিলে এতটা চেষ্টা করার পরও যেসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলো, অপপ্রচার করা হলো, পক্ষপাতের ধ্বনি তোলা হলো, আশংঙ্কা হয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর ধারাবাহিকতা কী হতে পারে?

এ জন্য সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে এখন সাবধান হতে হবে এবং শিক্ষা নিতে হবে কেমন পরিস্থিতির সম্মুখীন তাদেরকে হতে হবে। এটিকে তাদের টেস্ট কেস হিসেবে গ্রহণ করে সংস্কারের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পথ অনুসরণ করে জাতির লুন্ঠিত গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা লওয়ার এখনই সময়। লেভেল প্লেইং ফিল্ড বলতে যা বুঝায় তার এতটুকুও ঘাটতি রাখলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমাদের সকলের ত্যাগ ধ্বংস হয়ে যাবে। সাবধান হতে হবে বাঁকা পথ অনুসরণে যারা অভ্যস্থ তারা সহজেই সেখান থেকে হাত গুটিয়ে রাখবে না।

লেখক : রাজনীতিক।