ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ বিশ্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এখন বিশ্ব। গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ববাসীর জন্য একটি অশনিসংকেত ছিল। এখন ইসরাইলের আগ্রাসী মনোভাবের ফলে তারা নতুন একটি রণাঙ্গন উন্মুুক্ত করে দিয়েছে। এই যুদ্ধের সর্বশেষ আপডেট হলো সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তাতে দমে না গিয়ে ‘যুদ্ধ শুরু’র ঘোষণা দিয়েছেন। এ আশঙ্কার মধ্যেই ইসরাইল আর ইরান একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। বুধবার ভোর রাতেও তেল আবিবে কয়েকদফা অত্যাধুনিক মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইরান। অবশ্য মুহূর্তে মুহূর্তে অবস্থার বদল হচ্ছে। এ লেখা পড়ার সময় সে আপডেটগুলো মাথায় রাখতে হবে সহৃদয় পাঠককে।
মোট কথা সংঘাত আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিষয়ে নিজেই বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এরপরই মুখ খুলেছেন খামেনি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, যুদ্ধ শুরু হলো। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ বার্তা দেন বলে গত বুধবার জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। এদিকে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড কোর আইআরজিসি জানিয়েছে তেল আবিবে বুধবারের হামলায় তারা হাইপারসনিক ফাতাহ ওয়ান মিসাইল ব্যবহার করেছে। যা ইসরাইলী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম ভেদ করতে সক্ষম। অবশ্য আয়রন ডোম অকার্যকর করে চার দিন ধরেই ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে ইরান। এতে প্রায় অর্ধ শত নিহত ও কয়েক শ আহত হয়েছে। আল জাজিরার খবর, সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে জেরুলেম এবং বৃহত্তর তেলআবিব অঞ্চলে। এতে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। এ হামলা ছিল গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানের অষ্টম তরঙ্গের হামলা। ইসরাইল স্বীকার করেছে, বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র আয়রন ডোম সিস্টেমে প্রতিহত করা হলেও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটা ঠিক যে গোপনীয়তার কারণে সব সত্য প্রকাশ করছে না তেলআবিব।
কয়েক দিনের ঘটনা পর্যালোচনা করে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইসরাইল ইটটি মেরে পাটকেল খেতে শুরু করেছে। গত শুক্রবার প্রথম দিন হামলা চালিয়ে ইরাানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করলেও কয়েকঘন্টার মধ্যেই ইরান পাল্টা হামলা শুরু করে। এর ফলে ইসরাইল যা কখনো ভাবতে পারেনি সে রকম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বলতে গেলে এরপর যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয় তেহরান। দেশ ছেড়ে পালান নেতানিয়াহু এমন খবরও প্রচারিত হয়। অপর সূত্র বলছে তিনি বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন। তেল আবিব ও হাইফা বন্দর জ্বলছে বলে খবর। ইসরাইলী বাহিনির সদর দপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের দফতরও ধ্বংস হয়েছে বলে খবর। ইসরাইলী নাগরিকরা ক্রমাগত হামলা ও সাইরেনের শব্দে দিশেহারা বলে আলজাজিরাসহ নির্ভরযোগ্য বার্তা মাধ্যমের খবর। খোদ ইসরাইল রাষ্ট্র অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবে কি না শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
যেভাবে যুদ্ধ শুরু : ইসরাইল ইরানের উপর গত শুক্রবার ভোর রাতে হামলা চালায়। এ হামলা এক অর্থে নজিরবিহীন। এই অভিযানের নাম তারা দিয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। ইরানও পাল্টা জবাব দিয়েছে আর তার ফলে পরিস্থিতি বদলেছে। প্রসঙ্গত, ১৯৮০-১৯৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর ইসরাইলের এ হামলা ইরানের ভূখণ্ডের ওপর চালানো সব চাইতে বড় হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার ভোরের আলো ফোটার আগে ইসরাইলী বিমান বাহিনী শুধুমাত্র ইরানের পরমাণু কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত স্থাপনাগুলোকেই নয়, সে দেশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলোকেও নিশানা করে হামলা চালায়। হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬০০ জন ইরানি নিহত হয়েছেন বলে কোন কোন সূত্রের খবর। ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের মতে, নিহত ৯০ শতাংশ মানুষই বেসামরিক। জানা গেছে, ইরানের সামরিক কমান্ড এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রধান ব্যক্তিদের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছিল ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নেটওয়ার্ক। এ হামলায় ইরানের ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। মোসাদ ইরানের অভ্যন্তরে ঢুকে অবস্থান চিহ্নিত করতে পারার ঘটনায় বিস্মিত হন সমরবিদ ও বিশ্লেষকরা। তবে দ্রুতই এ ক্ষত কাটিয়ে উঠে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। আর সেটা এত ব্যাপক যে তেলআবিব কার্যত তা ধারণাও করতে পারেনি। এরপর বুধবার এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত ৬ষ্ঠ দিনে গড়ায় যুদ্ধ। ইরানের আইআরজিসি বলেছে, তারা ইসরাইলে একটি সামরিক গোয়েন্দা সেন্টার ও মোসাদের একটি অপারেশন পরিকল্পনা কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলী গণমাধ্যমে বলা হয়, ইসরাইলের মধ্যাঞ্চলের শহর হার্জলিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। এছাড়া আরেকটি এফ-৩৫ ধ্বংস করা হয়েছে, যা ইসরাইলের জন্য অন্ধকার পূর্বাভাস । মঙ্গলবার তাবরিজ শহরের আকাশে ভূপাতিত করা হয়েছে এটি।
প্রশ্ন উঠছে এখন কী হবে? বাকি বিশ্ব কী ভাবছে বা করছে? বিশ্বের বাদবাকি মোড়লরা কোথায়? ইরানের প্রতিবেশি আরব দেশগুলোই বা কোথায়? এ যুদ্ধ বাদবাকি বিশ্বের জন্য বড় হুমকি কেন? এ যুদ্ধ বিশ্বের জন্য বড় হুমকি এ কারণে যে এ যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার কারণে আরো ব্যাপকভিত্তিক বিস্তৃতি পেতে পারে। তা থেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যাওয়াও অমূলক নয়। সম্প্রতি কানাডায় অনুষ্ঠিত শিল্পোন্নত দেশগুলোর গ্রুপ জি-৭ এর বৈঠকে দেশগুলোর নেতারা সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলে উল্লেখ করে ইরানে হামলাকে বৈধ করে দিয়েছেন। তারা ইরানের পরমাণুশক্তি অর্জনের বিষয়েও ইসরাইলী-মার্কিন ধারায় কথা বলেছেন। ফলে তারা বিষয়টির গভীরতা উপলব্ধিতে ব্যর্থ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে সেখানে ভিন্ন কথা বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। মঙ্গলবার কানাডার কানানাসকিসে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ম্যাক্রোঁ বলেন, আমার মতে, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ভুল হবে সামরিক উপায়ে ইরানে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করা। কারণ এতে পুরো অঞ্চলজুড়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। মূলত একদিন আগেই প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার টানাপোড়েন তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জি-৭-এর বৈঠক শেষ না করেই হোয়াইট হাউজে ফিরে যান। ম্যাক্রোর বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর সেটা কী তা বুঝতে পারা কঠিন নয়।
এদিকে রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্ততার প্রস্তাব দিয়েছে। ইরানে চালানো ইসরাইলের হামলাকে অবৈধ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। তারা তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দ্বন্দ্বের কূটনৈতিক সমাধানে জোর দিয়েছে। আরেক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি চীন এ অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করে যুদ্ধরত ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। তবে দেশটি ইরানের উপর হামলা সঠিক হয়নি বলেও মত দিয়েছে। চীন অভিযোগ করেছে, ইরান-ইসরাইলের মধ্যকার চলমান সংঘাতের আগুনে ‘ঘি ঢেলেছেন ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মূলত ইরানের নাগরিকদের তেহরান ছেড়ে যেতে বলার পরই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এনেছে চীন।
তুরস্ক, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ ও ওআইসি ইরানে ইসরাইলী হামলার নিন্দা করেছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেন, নেতানিয়াহু ইতোমধ্যে গণহত্যার অপরাধে নিষ্ঠুর হিটলারকেও পেছনে ফেলেছেন। ইরান ইসরাইলের এ সন্ত্রাসবাদ ও দস্যুতা রুখে আত্মরক্ষা করছে, এটি একেবারে স্বাভাবিক, বৈধ ও আইনসঙ্গত অধিকার। পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন একে পার্টির সংসদীয় দলের সভায় প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, মানবতার চোখের সামনে সংঘটিত এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং বহু রাষ্ট্র নীরব থেকেছে; কেউ কেউ আবার এ দস্যুবৃত্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জর্দানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ মঙ্গলবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এক ভাষণে সতর্ক করে বলেছেন, ইসরাইলের এ ‘আক্রমণাত্মক সম্প্রসারণ’ শুধু তার অঞ্চল নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই হুমকি। অন্যদিকে কাতার ইসরাইলী হামলার নিন্দা জানিয়ে যুদ্ধ অবসানে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে প্রতিবেশী আরব দেশগুলো পর্যাপ্ত ভূমিকা নিচ্ছে না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন।
আমেরিকা কি যুদ্ধে জড়াবে? বলা হচ্ছে ইরান আর ইসরাইলের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে। আর এমন আশঙ্কার মধ্যেই বুধবার ভোররাতে পূর্ব ইংল্যান্ডের রয়্যাল এয়ারফোর্স লেকেনহিথ থেকে অন্তত চারটি এফ ৩৫ বিমান ঘাঁটি ছেড়ে গেছে বলে বিবিসির খবর। গত তিনদিনে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৩০টি মিলিটারি বিমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্পেন, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসব বিমান ইরান ইসরাইল সংঘাতের কারণে ইউরোপে নেয়া হয়েছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যাচ্ছে না। সিবিএস নিউজের সূত্র বলছে, ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের কেন্দ্রগুলোতে হামলায় ইসরাইলের সাথে যোগ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। প্রসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বৈঠকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের মধ্যে হামলার বিষয়ে পুরোপুরি মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে সর্বশেষ খবরে জানায় সিবিএস। কয়েক দিন ধরে ট্রাম্প ইরানকে আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যেই দেশটির সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি না, সে বিষয়ে বিবেচনা শুরু করেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ দাবি করেন। এরকম পরিস্থিতিতে বুধবার ভোরে ইরানের শীর্ষ নেতা আলী খামেনি বলেছেন, ইরান জায়নিস্টদের সাথে সমঝোতা করবে না। সামাজিক মাধ্যম এক্সে খামেনির প্রোফাইল থেকে দেয়া পোস্টে উল্লেখ করা হয়, জায়নিস্টদের কোনো দয়া দেখানো হবে না।
পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিতে পারে এ প্রশ্নে বিশ্লেষকরা স্পষ্ট কিছু বলতে চাইছেন না। তাদের মতে পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। তবে ইরানে হামলা চালিয়ে ইসরাইল মহাভুল করেছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। তাদের মতে, এর মধ্যদিয়ে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে, তাহলো-ইসরাইলের অন্যসব উসকানিমূলক পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা তাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আর তা থেকেই এ অনৈতিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে দেশিিট। এখন এর খেসারত তাকে এবং বাকি বিশ্বকেও দিতে হবে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।