ফ্যাসিবাদী শাসনামলের শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরি নওফেলের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে আরটি ইন্টারন্যাশনাল। মহিবুল হাসান চৌধুরি চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরির সন্তান। পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসলে নওফেলকে শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। আর ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর তাকে পূর্ণশিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তখন তার বয়স সবে ৪০ বছর। এ বয়সে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়টি তখন বেশ আলোচিত হয়েছিল। তবে সার্বিকভাবে এ নিয়োগটি শেখ হাসিনার সাথে তার ঘনিষ্ঠতার ইংগিত বহন করে।
নওফেলের বাবা তথা চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরির রাজনীতিতে উত্থান ঘটেছিল বন্দর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরি বাবুর সাথে বিরোধকে কেন্দ্র করে। একাধিকবার মেয়রও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। আর নওফেলের উত্থানের নেপথ্য কারণ হিসেবে শুরু থেকেই তার ভারত কানেকশনকেই মূল ফ্যাক্টর হিসেবে মনে করা হয়। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর নওফেল দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তার ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৪১টি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ১১৩ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে এ একাউন্টগুলো ফ্রিজ করার নির্দেশনাও প্রদান করা হয়েছে।
সম্প্রতি এ নওফেল রাশিয়ান সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত আরটি টুডে ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াকে অজ্ঞাত স্থানে থেকেই একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এ সাক্ষাৎকার নিয়ে এরই মধ্যে যথেষ্ট আলোচনা ও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সাক্ষাৎকারে তিনি জুলাই বিপ্লব ও আওয়ামী সরকারের পতন ঘটানোর নেপথ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষ করে দেশটির অন্যতম বৃহৎ দাতাসংস্থা ইউএসএইড এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকেও দায়ী করেছেন। তিনি ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে দাঙা হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগে বাধ্য করার জন্য পরিচালিত এ দাঙ্গাকে ইউএসএইডের অর্থ দিয়ে সুচিন্তিতভাবে পরিকল্পিত ও পরিচালিত বলেও আরটি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন। গত সোমবার এ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ্যে আসে। এর আগের সপ্তাহে শেখ হাসিনার একটি লিখিত সাক্ষাৎকার তিনটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হওয়ার পর এ সপ্তাহে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরি নওফেল এ বোমা ফাটালেন।
ভিডিও সাক্ষাৎকারে নওফেল আরো বলেন, “কিছু এনজিও-র কার্যক্রম, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কিছু সংস্থা-যেমন ইউএসএইড (USAID), কিংবা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট IRI)। তারা আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সাল থেকেই প্রচারণা চালাচ্ছিল।” অবাক করা বিষয় হলো, নওফেল এ অভিযোগগুলো করলেন শেখ হাসিনার নাটকীয়ভাবে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় পরে। উল্লেখ্য ২০২৪ সালের আগস্টে চাকরির কোটা পদ্ধতি বাতিল ও বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে শিক্ষার্থী-নেতৃত্বাধীন কয়েক সপ্তাহের আন্দোলন দেশজুড়ে সহিংসতায় রূপ নেয়, যাতে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয় আর আহত হয় আরো প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থান হিসেবে পরিচিত যেখানে সমাজের সকল স্তরের ও পেশার মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
প্রাথমিকভাবে ছাত্ররা এ আন্দোলন শুরু করলেও পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সরকারের নির্দেশে আইনশৃংখলা বাহিনী মারণাস্ত্র ব্যবহার করে ছাত্রদেরকে হত্যা করতে শুরু করলে অভিভাবকসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষেরা এ আন্দোলনের সমর্থনে রাজপথে নেমে আসতে শুরু করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন পেশার মানুষও এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়। এই আন্দোলনকে বিগত সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসন ও ফ্যাসিবাদের প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ আওয়ামী লীগ এই দীর্ঘ সময়ে তিনটি জাতীয় নির্বাচন করলেও তাতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল না। তারা একতরফাভাবে নির্বাচন করে নিজেদের লোককে সংসদে পাঠিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রজন্ম তাদের ভোটাধিকার প্রাপ্তির পর থেকে কখনো ভোট প্রয়োগ করার সুযোগই পায়নি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের গুম, খুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জুলুম, নির্যাতন, মিডিয়ার স্বাধীনতা হরণ, আয়নাঘর ও বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ থাকার কারণে সাধারণ মানুষ আগে থেকেই ক্ষিপ্ত হয়েছিল। সবকিছুর একইসাথে বিস্ফোরণ ঘটে জুলাই আন্দোলনে। কিন্তু শেখ হাসিনা এ আন্দোলনে দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করাসহ বিগত সময়ে তার সরকারের সম্পাদিত অপরাধগুলো কখনোই স্বীকার করেননি। কখনো দুঃখপ্রকাশ বা অনুশোচনা করেননি। বরং তিনি জুলাই বিপ্লবীদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং একে বিরোধী দলগুলোর সুপরিকল্পিত প্রয়াস হিসেবে ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। আর এখন ব্যারিস্টার নওফেলও একই অহমিকার পথ অনুসরণ করলেন।
শেখ হাসিনা, যিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ বছর ধরে অত্যন্ত কঠোর হাতে বাংলাদেশ পরিচালনা করেছেন, এর প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ মানুষ তার সরকারি বাসভবন তথা গণভবন অভিমুখে যাত্রা শুরু করলে একটি পর্যায়ে তিনি দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। দিনের পর দিন কার্ফু দিয়ে এবং পুলিশ ও বিজিবি দিয়ে নিজ দেশের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেও তিনি আন্দোলনকে থামাতে পারেননি। যদিও মহিবুল হাসান চৌধুরি দাবি করেন যে, এ আন্দোলন তরুণদের কোনো বিদ্রোহ ছিল না, বরং পশ্চিমা স্বার্থের পৃষ্ঠপোষকতায় “সুচিন্তিতভাবে পরিকল্পিত” এক অপারেশন ছিল। তার মতে, “ক্লিনটন পরিবার এবং অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকারের মধ্যে বহু পুরোনো এক যোগসূত্র আছে,” তিনি অভিযোগ করেন। তারা বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের ব্যাপারে মরিয়া ছিল বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
মহিবুল হাসান চৌধুরি নওফেল বাংলাদেশে মার্কিন সাহায্য বা দাতব্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। ইউএসএইড-এর কাজ বন্ধ করে দেয়ার পর এর তহবিলে থাকা কোটি কোটি ডলারের অর্থ কোথায় হারিয়ে গেল তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, “আইআরআই IRI) সক্রিয় থাকায় ইউএসএইড-এর তহবিলের অর্থ ফিরে যায়নি বরং পুরোটাই শেখ হাসিনার সরকার পরিবর্তনের কর্মকাণ্ডের জন্যই বরাদ্দ করা হয়।” তবে নওফেলের এ সাক্ষাৎকার প্রকাশ্যে আসার পর নতুন করে ব্যাপক সমালোচনাও শুরু হয়েছে। রক্তে সিক্ত হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের মধ্যে যে কোনো অনুশোচনা নেই তা মানুষ বুঝতে পেরেছে। গত কয়েকদিনে দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ যেভাবে ককটেল বিস্ফোরণ এবং বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে তাতেও আওয়ামী লীগের সহিংস ও ভয়ঙ্কর রূপ জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অতীতের মতোই দেশের জনগণকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিতেও যে কার্পন্য করবে না- জনগণ তা অনুধাবন করছে নতুন করে। এমনকী ড. ইউনুস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষেত্রবিশেষে দুর্বলতাকে কেন্দ্র করে যাদের ভেতর আওয়ামী লীগের বিষয়ে কিছুটা নমনীয়তা ও সহানুভূতি ফিরতে শুরু করেছিল, তারা বিগত কয়েকদিনের আওয়ামী সহিংসতায় যেন দলটির ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী রূপ নতুন করে উপলব্ধি করেছে।
ভাবতে অবাক লাগে, পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা আগুন সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলতেন। বার্ণ ইউনিটে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ মানুষদের নিয়ে শোকাহত হওয়ার ভান করতেন। অথচ ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগ হলো আগুন সন্ত্রাসীদের দল। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে জীবিত যাত্রীসহ বাস পুড়িয়ে হত্যার ইতিহাস আছে আওয়ামী লীগের। নতুন করে তারা আজ আবার বাস পুড়িয়ে আগুন সন্ত্রাস পরিচালনা করেছে। আরেকটি বিষয় হলো, বেশ কয়েকটি ককটেল ফোটানোর সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে যে, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জুব্বা ও বড়ো পাঞ্জাবি পড়ে ককটেল ফাটিয়েছে। সম্ভবত সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগ যে স্যাবোটেজগুলো করবে সেখানেও তারা ধর্মীয় লেবাস ব্যবহার করবে যাতে দায়টা ইসলামপন্থীদের ওপর চাপানো যায়।
জুলাই বিপ্লব যে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ভাষা অথবা অর্গানিকভাবেই যে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নেমে এসেছিল এই সত্যটুকু শেখ হাসিনার মতো তার ঘনিষ্ঠভাজন নওফেলও বুঝতে পারেননি। এর নেপথ্যে বিদেশি কানেকশন অনুসন্ধান করে কার্যত তিনি বাংলাদেশের মানুষের আবেগ ও রক্তদানকে নিয়ে তামাশা করেছেন। যদিও ব্যরিস্টার নওফেলকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেকবেশি। তারপরও বরাবরই তার ওপরই আস্থা রেখেছে আওয়ামী লীগ। দেশে না থেকেও দেশকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, রক্তাক্ত বিপ্লবে শেখ হাসিনার মাফিয়া শাসনের অবসানের পর অন্যদের মতো পালিয়ে যেতে বাধ্য হন পতিত স্বৈরাচারী সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে গর্তে লুকিয়ে থেকেও দেশ বিরোধী নানা চক্রান্ত আর সন্ত্রাসে মদত দিয়ে যাচ্ছেন স্বৈরাচারের এ সুবিধাভোগী। দেশকে অস্থিতিশীল করে হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দেওয়ার যে অপচেষ্টা চলছে তার অন্যতম কুশীলব চট্টগ্রামের এই সন্ত্রাসী গডফাদার। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার মাসদুয়েকের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চক্রান্তে স্বঘোষিত ইসকন সদস্যের সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি সে সময়ে আলোচিত হয়েছিল। তার উস্কানিতেই ইসকনের সদস্যরা চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে সহিংসতা চালায় যাতে এডভোকেট আলিফ নামে নিরীহ একজন মানুষ নিহত হন। এছাড়াও মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ইসকনের একাধিক প্রোগ্রামে গিয়ে নিজেকে এ সংগঠনের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে অহম দেখিয়েছিলেন নওফেল। শিক্ষামন্ত্রী থাকা অবস্থায় মাদরাসাকে কোনঠাসা করে এবং পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামিক উপকরণ বাদ দিয়ে এর পরিবর্তে ভারত থেকে আমদানি করা নানা বিষয় সংযোজন করার প্রয়াসও চালিয়েছিলেন তিনি।
নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ভয়ঙ্কর সব সন্ত্রাসীদের জড়ো করে চট্টগ্রামে বড় ধরনের নাশকতার ছক এঁকে চলেছেন এ নওফেল-এমন তথ্যও এসেছে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠা নওফেল প্রথমে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বিগত ৭ জানুয়ারির আমি আর ড্যামির নির্বাচনের পর তাকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেন মাফিয়া সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য এ নওফেলকেই দায়ী করেন সাধারণ মানুষ। রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর চট্টগ্রামে তার একের পর এক কর্মকাণ্ড বিতর্কের জন্ম দেয়। দলের ভেতরে কলহ কোন্দল এবং দলীয় প্রতিপক্ষকে দমনে সরাসরি সন্ত্রাসে মদদ দিয়ে চরম ঘৃনার পাত্র হয়ে উঠেন তিনি। বিগত দেড় দশকে চট্টগ্রামের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পাড়া মহল্লায় তার বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল। চট্টগ্রামের পুরো অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। তার বাহিনীর কাছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও ছিলেন কোণঠাসা।
বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি বানচালে তার ক্যাডার বাহিনী সক্রিয় ছিলো সব সময়। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামে নির্বিচারে গুলি বর্ষণকারীরা তার লালিত ক্যাডার বাহিনীর সদস্য। তাদের গুলিতে ১১জনের মৃত্যু হয়েছে। নওফেলের নির্দেশে ছাত্র আন্দোলনে গুলি করে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। তাদের অনেকে এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও তিনি যে পতিত স্বৈরাচারী সরকারের ক্যাডার বাহিনীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে অন্তর্ঘাতমূলক অপকর্মের নীল নকশা তৈরি করছেন তার তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর গোপালগঞ্জ জেলার পর চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম হাসিনার পক্ষে মিছিল বের করার দুঃসাহস দেখায় ছাত্রলীগ। আর এর নেপথ্যে নওফেল সম্পৃক্ত ছিলেন মর্মেও বেশ কিছু সংবাদসূত্র নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, আড়ালে থেকে নওফেল চট্টগ্রামে তার বাহিনীর সদস্যদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে চলেছেন। তাদের নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। আর এবার তিনি আরটি ইন্টারন্যাশনালকে মিথ্যা ও ভয়ঙ্কর তথ্যে ভরপুর একটি সাক্ষাৎকার দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগের মিথ্যা ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠার রাজনীতিকে জনগণের সামনে পরিচিত করলেন। আওয়ামী লীগ অপরাধ করলেও অপরাধবোধে ভোগে না; বরং মিথ্যা দোষারোপের রাজনীতিতেই তারা সিদ্ধহস্ত- এই সত্যটি নওফেলের সাক্ষাৎকারের পর আরো একবার অনুধাবন করলো বাংলাদেশ।