পবিত্র কালামে হাকীমে ঘোষিত হয়েছে, ‘আমি এটি (কুরআন) নাযিল করেছি ক্বদরের রাতে। তুমি কি জান ক্বদরের রাত কী ? ক্বদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও উত্তম। ফেরেস্তারা ও রূহ (জিব্রাইল আ.) এ রাতে রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি হুকুম নিয়ে নাযিল হয়। এ রাতটি পুরোপুরি শান্তিময় ফজরের উদয় পর্যন্ত’। (সুরা আল ক্বদর) এ মোবারক মাসের মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের অন্যত্র ঘোষণা করা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) এক মুবারক রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়’। (সূরা আদ-দুখান) সুরা বাকারার ১৮৫ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘রমযান মাস, যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে’। মূলত কুরআন নাযিল ও লাইতুল ক্বদরের জন্যই রমজান মাস অন্য মাসের চেয়ে অধিক সম্মানিত। আর ‘লাইলাতুল ক্বদর’ অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রজনী! এর অন্য অর্থ হলো ভাগ্য, পরিণাম ও তাকদীর নির্ধারণ।

‘ক্বদর’ শব্দের আরও অনেক অর্থ রয়েছে। যেহেতু এ রাতে মাখলুকাতের জন্য অনাদি তাকদীরে যা লেখা ছিল, তার যে অংশ এ বছর থেকে আগামী রমজান পর্যন্ত সংঘটিত হবে-তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ফিরিশতার হাতে প্রদানের হুকুম দেয়া হয়। এ কারণে এ রাতকে ‘লাইলাতুল ক্বদর’ বলা হয়। শব্দটির আরেকটি অর্থ হচ্ছে মূল্যায়ন, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব। যেহেতু এ রাতও সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী তাই তাকে ‘লাইলাতুল ক্বদর’ বলা হয়। এ রাত সম্মানিত ও মর্যাদাবান হওয়ার দু’টি উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করা হয়। ক) যে ব্যক্তি রাত জেগে ইবাদত করবে সে আল্লাহর কাছে সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। খ) এ রাতে যে ইবাদত করা হয় তা অন্যান্য রাতের ইবাদতের তুলনায় বেশি সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী।

ইবনে আবী হাতেম-এর রেওয়ায়েতে আছে, রসূল (সা.) একবার বনী-ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জিহাদ মশগুল থাকে এবং কখনও অস্ত্র সংবরণ করেনি। মুসলমানগণ একথা শুনে বিস্মিত হলে এ সূরা কদর অবতীর্ণ হয়। এতে এ উম্মতের জন্যে শুধু এক রাত্রির ইবাদতই সে মুজাহিদের এক হাজার মাসের এবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা হয়েছে। ইবনে জরীর অপর একটি ঘটনা এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বনী-ইসরাঈলের জনৈক ইবাদতকারী ব্যক্তি সমস্ত রাত্রি ইবাদতের মশগুল থাকত ও সকাল হতেই জিহাদের জন্যে বের হয়ে যেত এবং সারাদিন জিহাদে লিপ্ত থাকত। সে এক হাজার মাস এভাবে কাটিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তায়ালা সূরা-ক্বদর নাযিল করে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এ থেকে আরও প্রতীয়মান হয় যে, শবে-কদর উম্মতে মুহাম্মদীরই বৈশিষ্ট্য। (তাফসীরে মাজহারী)

হাদীসে রাসুল (সা.) এর বর্ণনায় এসেছে, লাইলাতুল ক্বদরের রজনীতে যে বা যারা আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকে, আল্লাহ তাকে বিশেষ মর্যাদা দান করেন। এ সম্পর্কিত হাদীসটি হল, সমস্ত রজনী আল্লাহ তাআলা লাইলাতুল কদর দ্বারাই সৌন্দর্য ও মোহনীয় করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা এ বরকতময় রজনীতে বেশি বেশি তাসবিহ-তাহলিল ও ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকো। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, তোমরা তোমাদের কবরকে আলোকিত পেতে চাইলে মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর রাতে জেগে রাতব্যাপী ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দাও।

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, লাইলাতুল ক্বদরে হযরত জিবরাঈল (আ.) ফেরিশতাদের সাথে দলবদ্ধ হয়ে অবতরণ করেন। তারা ঐসব লোকদের জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকেন, যারা রাত জেগে দাঁড়িয়ে বা বসে আল্লাহর জিকির ও ইবাদতে মশগুল থাকেন। তারপর রমজান গত হয়ে যখন ঈদুল ফিতর আসে, তখন আল্লাহ তা’আলা স্বীয় বান্দাদের নিয়ে ফেরেস্তাগণের সামনে গর্ববোধ করেন। তখন তিনি ফেরেস্তাদের জিজ্ঞেস করেন, ঐ শ্রমিকদের পারিশ্রমিক কী হতে পারে, যে পূর্ণ শ্রম ব্যয় করেছে। উত্তরে তারা বলে, তাদের প্রতিদান হলো পূর্ণ পারিশ্রমিক দিয়ে দেয়া। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে ফেরেস্তারা! আমার বান্দা ও বান্দীরা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণরূপে পালন করেছে, অতঃপর আমার নিকট দোয়া করতে করতে ঈদগাহে বের হয়েছে। আমার সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের কসম! জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আমি তাদের দু’আ কবুল করব। তারপর (বান্দাদের উদ্দেশে) বলেন, তোমরা ঘরে ফিরে যাও, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। রাসূল (সা.) বলেন, অতঃপর তারা বাড়ি ফিরে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে।’ (শুআবুল ঈমান-৩/৩৪৩, মিশকাত-১৮২)

হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) বললাম, হে আল্লাহ রাসূল! আমি যদি জানতে পারি যে, এটা ক্বদরের রাত তাহলে আমি কী দু’আ চাইব ? রাসূল (সা.) বললেন, তুমি এই দু’আ পড়বে- ‘হে আল্লাহ! তুমি অনেক বড় ক্ষমাশীল। তুমিতো ক্ষমা পছন্দ কর। তুমি আমার গুনাহসমূহকে ক্ষমা করে দাও।’ (তিরমিযী-২/১৭১, ইবনে মাজাহ-২৮২, মুসনাদে আহমদ-৬/১৭১, মুসতাদরাকে হাকেম-১/৫৩০, শুআবুল ঈমান-৩/৩৩৯) হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, একবার রমজান শুরু হওয়ার পর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের কাছে একটি মাস এসেছে, যাতে একটি রাত আছে, যা হাজার রাতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এ রাত থেকে বঞ্চিত সে হাজারো কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত। আর যে ব্যক্তি শবে ক্বদরের বরকত থেকে বঞ্চিত, সে প্রকৃতপক্ষে বঞ্চিত। (ইবনে মাজাহ)

মূলত, রাসূল (সা.) এবং তাঁর ইসলামী দাওয়াতের জন্য কোন ঘটনা বা ব্যাপারে সঠিক নির্দেশ লাভের প্রয়োজন দেখা দিলে তখনই আল্লাহ কুরআনের সূরা ও আয়াতগুলো রচনা করতেন না। বরং সমগ্র বিশ্বজাহান সৃষ্টির পূর্বে অনাদিকালে মহান আল্লাহ পৃথিবীতে মানব জাতির সৃষ্টি, তাদের মধ্যে নবী প্রেরণ, নবীদের ওপর কিতাব নাযিল, সব নবীর পরে মুহাম্মাদ (সা.)কে পাঠানো এবং তাঁর প্রতি কুরআন নাযিল করার সমস্ত পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেছিলেন। ক্বদরের রাতে কেবলমাত্র এই পরিকল্পনার শেষ অংশের বাস্তবায়ন শুরু হয়। এ সময় যদি সমগ্র কুরআন অহী ধারক ফেরেশতাদের হাতে তুলে দেয়া হয়ে থাকে তাহলে তা মোটেই বিস্ময়কর নয়। কোন কোন তাফসীরকারক কদরকে তকদীর অর্থে গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ এ রাতে আল্লাহ তকদীরের ফায়সালা জারী করার জন্য তা ফেরেশতাদের হাতে তুলে দেন। সূরা দুখানের নিম্নোক্ত আয়াতটি এই বক্তব্য সমর্থন করে -

‘এই রাতে সব ব্যাপারে জ্ঞানগর্ভ ফায়সালা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।’ (আয়াত-৪) অন্যদিকে ইমাম যুহরী বলেন, কদর অর্থ হচ্ছে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা। অর্থাৎ এটি অত্যন্ত মর্যাদাশালী রাত। এ অর্থ সমর্থন করে এ সূরার নিম্নোক্ত আয়াতটি ‘কদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও উত্তম’। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কোন রাত ছিল। এ ব্যাপারে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে উলামায়ে কিরাম ও তাফসিরকারকদের মধ্যে। এ সম্পর্কে প্রায় ৪০ টি মতের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে আলেম সমাজের সংখ্যাগুরু অংশের মতে রমযানের শেষ দশ তারিখের কোন একটি বেজোড় রাত হচ্ছে কদরের রাত। আবার তাদের মধ্যেও বেশীরভাগ লোকের মত হচ্ছে সেটি সাতাশ তারিখের রাত। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত নির্ভরযোগ্য হাদীসগুলো উল্লেখ করা হলো।

হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেছেন, রসূল (সা.) লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বলেন, সেটি সাতাশের বা উনত্রিশের রাত। (আবু দাউদ) হযরত আবু হুরাইরার (রা) অন্য একটি রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে সেটি রমযানের শেষ রাত। (মুসনাদে আহমাদ) যির ইবনে হুবাইশ হযরত উবাই ইবনে কা’বকে (রা) কদরের রাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি হলফ করে কোন কিছুকে ব্যতিক্রম হিসেবে দাঁড় না করিয়ে বলেন, এটা সাতাশের রাত। (আহমাদ, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে হিব্বান) হযরত আবু যারকে (রা) এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, হযরত উমর (রা), হযরত হুযাইফা (রা.) এবং রাসূল (সা.) এর বহু সাহাবার মনে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ ছিল না যে, এটি রমযানের সাতাশতম রাত। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা)

হযরত উবাদাহ ইবনে সামেত (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা.) বলেন, রমযানের শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতগুলোর যেমন একুশ, তেইশ, পঁচিশ, সাতাশ বা শেষ রাতের মধ্যে রয়েছে কদরের রাত। (মুসনাদে আহমাদ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা.) বলেন , তাকে খোঁজ রমযানের শেষ দশ রাতের মধ্যে যখন মাস শেষ হতে আর নয় দিন বাকি থাকে। অথবা সাত দিন বা পাঁচ দিন বাকি থাকে। (বুখারী) অধিকাংশ আলেম এর অর্থ করেছেন এভাবে যে রসূল (সা.) এখানে বেজোড় রাতের কথা বলতে চেয়েছেন।

হযরত আয়েশা (রা) বর্ননা করেছেন, রাসূল (সা.) বলেন, কদরের রাতকে রমযানের শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে তালাশ করো। (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, তিরমিযী) হযরত আয়েশা (রা) ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এও বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) ওফাতের পূর্ব পর্যন্ত রমযানের শেষ দশ রাতে ইতিকাফ করেছেন।

মূলত, আল্লাহ মানুষকে দুনিয়াতে খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আর প্রতিনিধির দায়িত্ব হলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদেশ ও নিষেধ পুরোপুরি পালন করা। আর ভাল কাজের পুরস্কার গ্রহণের জন্য আল্লাহ মানুষ মৃত্যু নামক নিয়ামতও দান করেছেন। কালামে পাকে বলা হয়েছে, আল্লাহ বলেন, ‘যিনি (আল্লাহ) জন্ম ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে এর দ্বারা তিনি তোমাদের যাচাই করে নিতে পারেন কর্মক্ষেত্রে কে তোমাদের মধ্যে সৎকর্মশীল’। সুরা আল মূলক, আয়াত-২। এতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, দুনিয়া আমাদের জন্য পরীক্ষা ক্ষেত্র। তাই আল্লাহর দেয়া আদেশ ও নিষেধ যথাযথভাবে পালন করে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করতে হবে। আর ইবাদাত-বন্দেগী করার জন্য আমাদেরকে অনেক মর্যাদাপূর্ণ দিন ও সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। মহামহিমান্বিত লাইতুল ক্বদর এর মধ্যে অন্যতম।

তাই লাইলাতুল ক্বদরের রাতের মর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে বেশি বেশি নফল ইবাদাতসহ এই রাতে কুরআন তেলাওয়াত, অর্থসহ পঠন, হৃদয়ঙ্গম ও বাস্তবজীবনে তার প্রতিফলন জরুরি। কুরআন নিয়ে গবেষণা ও অন্যদের কুরআন শেখানোও এই রাতের খুবই মর্যাদাপূর্ণ আমল। আসলে এই রাতে আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদসহ বেশি বেশি নফল আমল করার নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়াও তাওবা, অতীত কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে লজ্জিত হওয়া, অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করার জন্য প্রত্যয় গ্রহণসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ ও রাসুল (সা.) এর জীবনাদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করার শিক্ষাও নিহিত আছে। কারণ, আমাদেরকে সন্তুষ্ট চিত্তে এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে সেই মহান প্রভুর কাছে ফিরে যেতে হবে।

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার মালিকের কাছে ফিরে যাও সন্তুষ্ট চিত্তে ও তাঁর প্রিয়ভাজন হয়ে। অতপর শামিল হয়ে যাও আমার নেক বান্দাদের মধ্যে এবং প্রবেশ করো আমার জান্নাতে’। (সুরা আল ফজর, আয়াত-২৭-৩০)। তাই লাইলাতুল ক্বদরের মর্যাদা ও গুরুত্ব কাজে লাগিয়ে স্বীয় আত্মাকে প্রশান্ত করেই আমাদেরকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সে তাওফিক দান করুন-আমীন!

[email protected]