প্রফেসর ড. এবিএম মাহবুবুল ইসলাম

১৯ এপ্রিল নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান শিরীন পারভিন হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নিকট তাদের রিপোর্ট পেশ করেন। ড. ইউনূস তা অতীব উৎসাহের সাথে গ্রহণ করেন এবং বলেন, সুপারিশগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে এবং তা আমাদের দ্বারা বাস্তবায়ন করা উচিত এবং একে অন্যান্য দেশের জন্য একটা উদাহরণ হিসেবে স্থাপন করতে সক্ষম হব আমরা। তিনি আরো বলেন, এ প্রতিবেদনটি বই আকারে পাঠ্যপুস্তকের মতো মুদ্রিত এবং বিতরণ করা হবে। এটা শুধু সরকারি অফিসে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয় বরং জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছিয়ে দিতে হবে। একদিকে নারীবাদীদের আস্ফালন আর ড. ইউনূসের মাঝে খুশির জোয়ারÑ অপরদিকে দেশের সর্বস্তরের বিবেকবান মানুষ এ সংস্কার রিপোর্টের বিপক্ষে সরব এবং সোচ্চার। একদিকে আস্ফালন আর উচ্ছ্বাস অপরদিকে প্রতিবাদের ঝড়। এ বিষয়গুলোর সংক্ষিপ্ত জবাব দানের লক্ষ্যেই পেশ করা হলো এ প্রতিবেদনটি।

নারী সংস্কারবাদীদের দাবির উৎস : নারী-পুরুষের সমঅধিকারের দাবি নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে সৃষ্টিকর্তার দেয়া নির্ধারিত নিয়ম-নীতির বিপক্ষে অবস্থান নেয়া এক শ্রেণির মানুষের ব্যাধিতে পরিণত হয়ে আসছে। অতএব এটি ইসলাম বিদ্বেষেরই ফসল। দ্বিতীয়ত: ১৯৮০-এর দশকের দিকে তসলিমা নাসরিনের লেখনি এবং আন্দোলন। তৃতীয়ত: ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূল বিষয়ক কনভেনশন (CEDAW), চতুর্থত: সরকার কর্তৃক প্রণীত নারীনীতি-২০০৮, পঞ্চমত: ২০০০ সালে হাইকোর্ট কর্তৃক পতিতাবৃত্তিকে বৈধ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, ষষ্ঠত: ড. ইউনূসের প্রত্যক্ষ সমর্থন ইত্যাদি।

উল্লেখিত প্রতিটি সূত্র বা উৎসের আলোচনা সময়সাপেক্ষ বিষয় হেতু এর বিস্তারিত আলোচনা না করে চলমান সংস্কার প্রস্তাবের যৌক্তিকতা-অযৌক্তিতার বিষয়েই আলোচনা সীমিত রাখা হবে।

মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে প্রদত্ত যেকোনো কথা বা দাবি যখন আইনদাতা আল্লাহর আইনের বিপক্ষে চলে যাবে একে নির্ভুলভাবে দেবলিক বা শয়তানিক কর্ম বলতেই হবে। যেমন- একসাথে চারজন স্বামী রাখার যৌক্তিকতা, আল কুরআনের ব্যাপক সংশোধনের দাবি তসলিমা অনেক পূর্বেই করে আসছিলেন। নারী সংস্কার কমিশন কিন্তু পতিতা কর্মকে বৈধতা দানের বা আইনের স্বীকৃতির দাবি করছেন না বরং পতিতাদের মর্যাদা দানের দাবি করছেন। আইনী স্বীকৃতি চাচ্ছেন না- কারণ হলো- ২০০০ সাল থেকে হাইকোর্ট পতিতাবৃত্তিকে পেশা বলে রায় দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ঐ সময় প্রায় শতাধিক পতিতা এবং এনজিওকর্মী তাদের উচ্ছেদকে চ্যালেঞ্জ করে এবং তাদের কর্মকে বৈধ পেশার স্বীকৃতি দাবি করলে আদালত তা আমলে নেয় এবং বলে যেহেতু তারা সরকার গঠনে ভোট দেয়, কর দেয় অতএব তাদের জীবিকা অর্জনের এ কর্মটিও একটা বৈধ পেশা। এ রায়ের ফলে শত শত পতিতা আনন্দ মিছিল বের করে। আদালত একে তাদের মৌলিক অধিকার বলেও স্বীকৃতি দেয়। দেহ বিক্রির পক্ষের পক্ষ থেকে দেশ-বিদেশে এ রায়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও পাওয়া যায়- পতিতাদের স্বাস্থ্যসেবায় অনুদানও পাওয়া যায়। এ যেন এক মহান পেশা!। কেয়ার (CARE) এর পক্ষ থেকে এক পদস্থ কর্মকর্তাও বলেছিলেন, কোনো দেশের উচ্চ আদালত কর্তৃক পতিতাবৃত্তিকে বৈধ স্বীকৃতির কথা এই প্রথম শুনলাম। এটা ঐতিহাসিক! CEDAW (Convention of Elimination of All Forms Of discrimination against women 1979) ) হচ্ছে নারী-পুরুষের সমঅধিকারের প্রধান মানদণ্ড। এই কনভেনশনের ৩০টি ধারার সবকটিই বলা যায় ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। এর মধ্যে ধারা নং-২ এবং ১৬ হচ্ছে চরমভাবে দেশ, জাতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। ২ নং ধারাতে বলা হয়েছে, ‘নারী-পুরুষের সমঅধিকার, নারীর ক্ষমতায়নসহ নারীকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সর্বাধিক সুযোগ দানের ক্ষেত্রে ‘সিডও’ অনুমোদনকারী প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন, প্রথা যদি এই কনভেনশন এর সাথে সাংঘর্ষিক হয়- তাহলে তা বাতিল করতে হবে।

(To take all appropriate measures including legislation, to Modify or abolish exiting law, regulations, customs and practices which Constitute discrimination against women and to repeal all national penal provisions which constitute discrimination against women.) ১৬ নং ধারায় ধারাবাহিকভাবে ৮ প্রকারের সমতার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে বিয়ে এবং তালাকের ক্ষেত্রে, শিশুদের অভিভাবকত্ব, লালন-পালন, ট্রাস্টিশিপ এবং দত্তক গ্রহণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিতকরণ।

শেখ হাসিনার ২০০৮ সালের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পূর্বের সরকার ধারা নং ২ এবং ১৬ ছাড়া অপরাপর সকল শর্ত মেনে তা অনুমোদন করেছিল। ২০০৮ সালে CEDAW-এর ধারা নং ২ (সি.এফ) ধারা নং ১৬ (সি.এফ)-এর ব্যাপারে শর্ত সাপেক্ষে শেখ হাসিনা সরকার তা অনুমোদন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে CEDAW-এর আলোকে নারী নীতি প্রণয়নও করেছে- আর সেই নারী নীতিই নারী অধিকারবাদীদের জন্য ‘মহাভারত’ সমতুল্য। শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক প্রণীত নারীনীতি ২০০৮ কে সিডিও এর প্রতিরূপ (Replica) বলা যায় নির্দ্বিধায়। আওয়ামী সরকারের এবং ‘সিডোও’ এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে সরকারের। তবে জনরোষের কারণে প্রকাশ্যে তা অনুমোদনের ঘোষণা দেয়নি। জাতিসংঘের অগ্রগতির তথ্য পেশ করতে গিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, সিডোএ’র পূর্ণ অনুমোদনের জন্য আইনি এবং রাজনৈতিক ভিত্তি খুঁজে বের করার কাজ করছে সরকার। তবে নারীদের জন্য সমান অধিকার প্রদানের জন্য যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছে। বলেছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি নুরুন নাহার বেগম। ডেইলি স্টার, ইন্টারনেট সংস্করণ, ৮ মার্চ-২০১৯)।

জাতীয় নারী উন্নয়নে নীতির আড়ালে মূলত হাসিনার সরকার জাতিসংঘ প্রণীত সিডোর বাস্তবায়ন করে আসছিল। এ নীতিই মূলত চলমান নারী সংস্কার কমিশনের নীতি। ২৩টি ধারা বিশিষ্ট এ নীতির ২ এবং ৩ ধারার কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো :

২ নং ধারার ১৯টি উপধারা এবং ৩ নং ধারার সবগুলো উপধারাই সমঅধিকারের নিশ্চয়তা সংবলিত। এতে বলা আছে : জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা, বিদ্যমান বৈষম্যের অবসান, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, পারিবারিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে সমান অধিকার, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপে সিডও এর বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ, বৈষম্যমূলক আইন বিলোপ সাধনকরণ ইত্যাদি। এই যখন সরকারের নীতিÑ তখন নারীবাদীদের দোষ কোথায় (?)। চলমান নারীবাদীদের উৎসাহ-উদ্দীপনার বাতিঘর হচ্ছেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট গ্রহণকালীন তার বক্তব্য এবং বডি ল্যাংগুয়েজ প্রমাণ করে তিনি মহাখুশি তার আত্মার আত্মীয় যেন তিনি খুঁজে পেয়েছেন কমিশনের সদস্যদের মাঝে- যাকে বলে সরিষার মাঝেই ভূত। এটাই মুসলিম জনগোষ্ঠীর দুঃখ। শুধু বাংলাদেশে নয় সকল সমকালীন মুসলিম রাষ্ট্রের একই হাল-হাকিকত।

নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট : এত আপত্তি কেন : ১৯ এপ্রিল নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ১৫টি নির্দিষ্ট বিষয়ে ৪৩৩টি সুপারিশ পেশ করেন সরকার প্রধান ড. ইউনূসের নিকট, যা তিনি হাসিমুখে গ্রহণ করেন। তবে কমিশনের এ সংস্কার বিষয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবাদের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে : এ সংস্কারগুলো করতে গেলে কুরআন-সুন্নাহর সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো বাদ দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। তাহলে বিষয়গুলো দেখা দরকার যা পালনের জন্য আল্লাহকেও প্রত্যাখ্যান করতে হবে। অতএব সংক্ষিপ্ত পরিসরে এর কয়েকটি জঘন্য দিকই শুধু তুলে ধরা হবে।

সংস্কারবাদীদের দাবি হচ্ছে : যৌনকর্মী তথা পতিতাদের শ্রমিকের মর্যাদা দিতে হবে, ইসলাম প্রদত্ত উত্তরাধিকারী আইন বাদ দিতে হবে, বিয়ের ক্ষেত্রে ধর্মপ্রদত্ত আইন বা প্রথা বাতিল করতে হবে। বহু বিবাহের ক্ষেত্রে এবং তালাকের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার থাকতে হবে। রেপিং বা জবরদস্তিমূলক যৌনকর্মের জন্য স্বামীর বিরুদ্ধে রেপিং-এর মামলা করার অধিকার থাকতে হবে, দত্তক বা পালক নেয়াদের নিজ সন্তানের মর্যাদা দিতে হবে। ধর্মীয় বিধান দ্বারা সংবিধান শুরু করা যাবে না, প্রচলিত আইন বাতিল করে নারীবান্ধব আইন রচনা করতে হবে ইত্যাদি।

নারী আমাদের মা, খালা, স্ত্রী, মেয়ে, দাদি, নানি, বোন, ভাগিনি, নাতনি। এদের অধিকার পাওয়ার অর্থই হলো পরিবারের সকলের সম্মান বৃদ্ধি হওয়া। আর এ অধিকারের ধরন এবং সীমারেখা বিধানদাতা আল্লাহই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এর বাইরে গিয়ে কিছু দাবি করার অর্থ হলো সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা, অমান্য করা। উপরে বর্ণিত দাবিগুলো মানতে হলে কুরআন এবং হাদিসকেই বর্জন করতে হবে। অতি সংক্ষেপে এতদবিষয়ে কুরআনের সংশ্লিষ্ট আইনগুলো তুলে ধরা হলো : যৌনতা অর্থাৎ বিবাহ-বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন, এটা সুস্পষ্ট জেনা (adultery)। আল্লাহ তায়ালার এ বিষয়ে নির্দেশ হলো জেনার কাছেও যেও না। (বনি ইসরাঈল : ১৭:৩২)। এর শাস্তি হলো ১০০ বেত্রাঘাত আর বিবাহিত হলে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা। (আন নূর : ২৪ : ২)। নারী এবং পুরুষ মানুষ হিসেবে উভয়ের মর্যাদা সমান। তবে অধিকার, দায়-দায়িত্বের ক্ষেত্রে উভয়েই সমান নয়। (আন নিসা : ৪ : ৩২)। তিনি বলেন, পুরুষ হচ্ছে নারীর উপর কর্তৃত্বশীল এটা এ জন্য যে, পুরুষ নারীর ব্যয়ভার বহনকারী। মিরাস বা সম্পত্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অংশীদার নয়। সাধারণভাবে বোন পাবে ভাইয়ের অর্ধেক। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, পৈতৃক সম্পত্তির ক্ষেত্রে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, একজন পুরুষ পাবে দু’জন নারীর সমান (দুই-তৃতীয়াংশ)। (আন নিসা : ৪ : ১১)। অর্থাৎ পিতার মৃত্যুর পর তার সম্পদকে ৩ ভাগে ভাগ করা হবেÑ দুই ভাগ পাবে ছেলে সন্তানরা, আর এক ভাগ পাবে মেয়ে সন্তানরা। এ ক্ষেত্রে ছেলে সন্তান না থাকলে কখনো মেয়ে সন্তানের দুই-তৃতীয়াংশ আবার কখনো অর্ধেক অংশ পেয়ে যাবে। নারীবাদীর দাবি ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে পুরো সম্পত্তিই মেয়েকে দিতে হবে। অকৃতজ্ঞ আর কাকে বলে। নারীকে সমান অংশ বা পুরো অংশ দিতে হলে কুরআনের আয়াত বাতিল বা রহিতকরণ ছাড়া তা কি করা সম্ভব?

তাদের দাবি বিয়ের, বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে, বিয়ের শর্তাবলী পালনের ক্ষেত্রেও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠাবে বরপক্ষ, প্রস্তাব গ্রহণ করবে কনে পক্ষ, বিয়ের জন্য সাক্ষীর ক্ষেত্রে দু’জন পুরুষ থাকতে হবে, আর পুরুষ একজন হলে মহিলা দু’জন থাকতে হবে। বিয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে একজন পুরুষ একই সাথে চারজন স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবে- নারীর ক্ষেত্রে মাত্র একজন স্বামীই স্বীকৃত। তালাক দেয়ার চূড়ান্ত অধিকার স্বামীর, স্ত্রী তালাকের অনুমতি চাইতে পারে মাত্র। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করতে হলে তাকে অপর একজন পুরুষের সাথে বিয়ে হতে হবে দ্বিতীয় স্বামী ইন্তেকাল করলে অথবা তাকে তালাক দিলেই ঐ তালাকপ্রাপ্ত নারী তার প্রথম স্বামীর নিকট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। নারীবাদীরা এসব কিছুই মানতে রাজি নয়Ñ তাদের দাবি পুরুষ যা পারবে বা করবে তাদেরকেও তা করতে দিতে হবে। বিয়ের প্রস্তাবের এবং স্ত্রীর সংখ্যার ব্যাপারে আইনদাতার নির্দেশ, তোমরা (পুরুষগণ) তোমাদের পছন্দ মতো বিয়ে কর দুই-তিন চারজনকে। (আন নিসা : ৪ : ৩)। স্বামীর ব্যাপারে তার নির্দেশ হলো, তোমাদের পুরুষদের পক্ষ থেকে দুজন, দুজন পুরুষ না পাওয়া গেলে ১ জন পুরুষ আর দু’জন নারীকে সাক্ষী রাখবে (আল বাকারা : ২৮২)। তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে তার নির্দেশ, হে নবী (পুরুষ) যখন তুমি তোমার স্ত্রীদের তালাক দেবে। (আত তালাক : ৬৫ : ১)। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিয়ের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ হলো : তালাকপ্রাপ্ত সে স্ত্রী তোমাদের জন্য হালাল নয়, যতক্ষণ না অন্য পুরুষের সাথে তার বিয়ে হয়... (আল বাকারা : ২ : ২৩০)। নারী তথা পতিতাকে Sex Worker গণ্য করে তাকে শ্রমিকের মর্যাদা দানের দাবি এটা শুধু নিন্দনীয় নয়, বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আল্লাহর নির্দেশ হলো যারা সৎ জীবনযাপন করতে চায় তাদেরকে জেনার পথে ডেকো না। (আন নিসা : ৪:১৫, ১৬; আন নূর : ২৪:৩৩)

সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অল্প কয়েকটি বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা হলো মাত্র। শেষ অবধি অতীব প্রত্যয়ের সাথে বলা যায়, নারীবাদীদের এ সংস্কার প্রস্তাবের অধিকাংশ প্রস্তাব মানতে গেলে কুরআনকেই সংস্কার করতে হবে। অর্থাৎ ইসলাম বর্জন করতে হবে। অথচ সরকার প্রধান উৎসাহের সাথে তাদের এ প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন এবং বিশ্বময় তা ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন। দেশ, জাতি ও ধর্মীয় শিক্ষা ও জ্ঞানের দুর্দিন না হলে কতিপয় নারী এ দুঃসাহস দেখাতে পারতো না। আর রাজনীতিবিদরাও এতে সন্তোষ প্রকাশ করতেন না। এ মহাব্যধির স্বল্প মেয়াদি কোনো উপশম নেই। তবে আশার কথা হলো ইসলামপ্রিয় নারী, আলেম-ওলামাসহ বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, সংগঠন এ দুষ্কর্মের প্রতিবাদ করছেন, বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এটা স্বল্প মেয়াদি উপশম। আর দীর্ঘমেয়াদি উপশম বা সমাধান হলো শিক্ষা সংস্কৃতিসহ সমাজের সকল স্তরে ইসলামের শিক্ষাব্যবস্থা চালুকরণ আর সমাজ, রাষ্ট্র পরিচালনায় সঠিক ইসলাম চর্চাকারীদের অবস্থান সুদৃঢ়করণ। এর আর কোনো বিকল্প নেই।

লেখক : নর্দান ইউনিভার্সিটি আইনের অধ্যাপক, সাবেক ডীন ও চেয়ারম্যান আইন অনুষদ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশা বিশ্ববিদ্যালয়।