মো: সাব্বির হোসেন মিরাজ

দেশের সর্ববৃহৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ২১ অক্টোবর ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২,২৫৭টি কলেজ রয়েছে। সারাদেশে প্রায় সব জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে থাকা হাজারো কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা কাঠামো নয়, এটি সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রতিচ্ছবি। সে কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন (NUCSU Election) কেবল একটি ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব বাছাই নয়, এটি বাংলাদেশের শিক্ষার পরিবেশ ও গণতান্ত্রিক চর্চার ভবিষ্যৎ ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত স্বল্প কিছু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কলেজগুলো হলো-সরকারি ব্রজমোহন (বি.এম.) কলেজ, বগুড়া সরকারি কলেজ, আজিজুল হক কলেজ, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ ও ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ। এগুলো ব্যতীত বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ অন্য কোনো কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে প্রতিটি কলেজে আবাসন সংকট, নিরাপত্তাহীনতা, লাইব্রেরি ও ল্যাব সমস্যাসহ নানা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের দাবি যথাযথভাবে উপস্থাপন করার জন্য নির্বাচিত ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের সমর্থিত গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব থাকলে প্রতিটি কলেজ প্রশাসনের ওপরও একটি জবাবদিহিতা তৈরি হয়, যা সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করে তোলে।

অতীতের নানা সময় দেখা গেছে, রাজনৈতিক অগণতান্ত্রিক প্রভাব, সাংগঠনিক আধিপত্য ও কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে শিক্ষাঙ্গনের শান্ত পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক সময় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব স্বাধীনতা অনুযায়ী পরিচালনা করতে পারেনি কলেজ প্রশাসন। সবসময় রাজনৈতিক কালো ছায়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিক্রম করতে হয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে এসব প্রভাব কমে এসে নিয়মিত প্রতিটি কলেজ ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে। নেতৃত্ব আসবে দক্ষ, জনপ্রিয়, যোগ্য শিক্ষার্থীদের হাতেÑযারা সহিংসতার পরিবর্তে আলোচনা ও সমঝোতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে।

বাংলাদেশের বড় অংশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন থেকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিশাল পরিসরের ছাত্র সংসদ নির্বাচন তরুণদের গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা, নির্বাচন পরিচালনা, নীতি নির্ধারণের সব বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা দেবে। আগামী দিনের জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি করতে এটি হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্ম।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে ডিজিটাল ভোটিং, অনলাইন মনোনয়ন, স্বচ্ছ পর্যবেক্ষণসহ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উদাহরণযোগ্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। এতে দেশব্যাপী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ ছড়িয়ে থাকা কলেজগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা সহজ হবে এবং নির্বাচন আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ সকল কলেজ যেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পূর্ণ অধিকার পায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা যেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানান।

লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, বরিশাল।