বাংলাদেশে পান থেকে চুন খসলেই প্রতিবেশি দেশে অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ক্ষেত্রবিশেষে আবার শোকাবহ পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়। আসলে আমাদের নিকট প্রতিবেশী আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে কোনভাবেই স্বীকার করে না। সঙ্গত কারণেই ঢাকায় বৃষ্টি হলে দিল্লীতে ছাতা ধরার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে সে প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। কিন্তু তারা একেবারেই ভুলে বসে যে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। অনেক ত্যাগ ও কুরবানির বিনিময়ে আমরা এ স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তাই যেকোন বিষয়ে আমাদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশটি বোধহয় সব বিষয়ে নাক গলাতেই বেশি পুলকবোধ করে। দাবি করা হয়, এমনটা নাকি তাদের অধিকারের আওতাভুক্ত। প্রসঙ্গ হিসাবে টানা হয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের কথা। ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে মিত্রশক্তি ছিলো এবং দেশটি এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে একথা আমরা কেউই অস্বীকার করি না বরং এজন্য দেশটির কাছে চিরকৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ। কিন্তু বিয়েতে সহযোগিতা বা ঘটকালী করেছেন বলে বউটাই দাবি করে বসবেন তা শুধু অনাকাক্সিক্ষতই নয় বরং বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মস্তিষ্ক বিকৃতি ও রুচিহীনতারই পরিচয় বহন করে।
স্বাধীনতাত্তোর ভারত বাংলাদেশের জনগণের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে মোটেই আগ্রহী ছিলো না। অথচ উভয় দেশের জনগণের মধ্যে রয়েছে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক। রয়েছে জোরালো ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধন। কিন্তু ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী উভয় দেশের জনগণের আবেগ-অনুভূতিকে কোনভাবেই সম্মান প্রদর্শন করেন নি বরং এদেশে একটি আজ্ঞাবাহী শ্রেণি তোষণকেই অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে শ্রেণিবিশেষের সাথে শাসকগোষ্ঠীর দহরম-মহরম লক্ষ্য করা গেলেও বাংলাদেশের জনগণের সাথে সৃষ্টি হয়েছে যোজন যোজন দূরত্ব। এজন্য মূলত ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর অধিপত্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী মনোভাবই দায়ী। বিষয়টিকে ভারতীয়রা ভারতবিরোধীতা হিসাবে বিবেচনা করলেও বাস্তবতা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। আসলে বাংলাদেশের মানুষ আত্মমর্যাদাবান ও স্বাধীনচেনা। তারা পরাধীনতা কোনভাবেই মানতে রাজী নয়। এর সর্বশেষ প্রমাণ গত বছরের আগস্ট বিপ্লব। তারা রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশকে দ্বিতীয়বারের মত স্বাধীন করেছে। এ ক্ষেত্রে পরাক্রমীদের পরাক্রম ও শক্তি-সামর্থ্যকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
প্রতিবেশী দেশ যে আমাদের দেশে একটি আজ্ঞাবাহী শাসকগোষ্ঠী রাখতে চায় তা প্রমাণ করার জন্য খুববেশী অতীতে যাওয়ার দরকার নেই। একথা কারো অজানা নয় যে, দীর্ঘ ১৬ বছরের আওয়ামী অপশাসন-দুঃশাসন প্রতিবেশী দেশের সার্বিক সহযোগিতায় টিকে ছিলো। তারা চায়নি বাংলাদেশে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও স্বাধীন সরকার কাঠামো গড়ে উঠুক। যার জলন্ত প্রমাণ ২০১৪ সালের আমাদের জাতীয় নির্বাচন। সে নির্বাচনে বাংলাদেশের কোন স্বীকৃত বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা সংকটে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিলো। সে সময় আওয়ামী লীগকে সে সংকট থেকে উদ্ধারের জন্য প্রতিবেশী দেশ ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বাংলাদেশে পাঠানো হয় তদানীন্তন বিদেশ সচিব মিসেস সুজতা সিংকে। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে নির্বাচনে আসতে এক প্রকার বাধ্য করেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এরপর থেকে বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে যত প্রহসন হয়েছে সবগুলোর প্রতি অকৃত্রিম সমর্থন দিয়ে গেছে আমাদের এ নিকট প্রতিবেশী। শুধু তাই নয় গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচারি ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের লজ্জাজনক পতনের পর ব্যাপক গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের নেতাকর্মীদের তাদের দেশে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের আবেগ-অনুভূতির প্রতি চরম অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে। ফলে দেশটি এখন গণহত্যাকারী ও অপরাধীচক্রের অভয়ারণ্য।
শুধু তাই নয় বরং সকল ক্ষেত্রেই তারা পতিতদের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান ঘোষণা করেছে। অপশাসন-দুঃশাসন, দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস, ব্যাপকভিত্তিক গণহত্যা, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র এবং গণহত্যার বিচার বানচালের অপচেষ্টার অভিযোগে গত ১২ মে অন্তর্বর্তী সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করার পর দেশটি অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ নিরপেক্ষ থাকতে পারেনি বরং ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে নিজেদের কদর্য চেহারা বিশ্ববাসীর সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। দেশটি জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন। গত ১৩ মে নয়াদিল্লীতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ওই দেশে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা খর্ব হওয়ায় ভারত স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত। যথাযথ পদ্ধতি না মেনে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় ভারত স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত। জয়সওয়াল তার বক্তব্যে ভারতের পুরোনো মনোভাব স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই, বাংলাদেশে দ্রুত সুষ্ঠু, অবাধ ও সবার অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।’
অবশ্য এর আগে ভারত বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেখতে আগ্রহ জানিয়েছিলো। গত ৪ এপ্রিল ব্যাংককে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এ আশা প্রকাশ করেছিলেন। নরেন্দ্র মোদি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস তাকে জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত বিষয়ও আলোচনা হয়।
ভারত শুধু আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেনি বরং শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে যত ঘটনা ঘটেছে সবকিছুতেই অনাকাক্সিক্ষতভাবে অযাচিত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এমনকি গত ৬ ফেব্রুয়ারি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে ভাঙচুরের নিন্দা জানিয়ে এ কাজকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে দেশটি। ৭ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’র এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়। ভাঙচুরের বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘দখলদারিত্ব ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের প্রতীক শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাসভবনটি ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ধ্বংস করা হয়েছে। এটি দুঃখজনক।’
অবশ্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নয়াদিল্লীর এমন মন্তব্যকে অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত বলে উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সে সাথে পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে সৃষ্ট জনগণের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবের বাড়ি ভাঙার ঘটনায় ভারত সরকারের দেওয়া বক্তব্যকে ‘অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশিত’ বলেছে বাংলাদেশ সরকার। বিষয়টির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জানানো হয়, ‘আমরা প্রতিবেশী দেশটিতে নানা ধরনের বিরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হতে দেখেছি। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো বক্তব্য দেয় না। অন্যদের কাছ থেকেও বাংলাদেশ একই ধরনের আচরণ আশা করে।’ অবশ্য বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের হামলা-ভাঙচুর থামানোর আহ্বান জানালেও সেজন্য শেখ হাসিনাকেই দায়ী করেছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলেছে, ‘পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে’। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতকে আমরা লিখিতভাবে অনুরোধ করেছি যে, শেখ হাসিনাকে বিরত রাখার জন্য, যেন উনি এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি না দেন। এটা বাংলাদেশের বিপক্ষে যাচ্ছে। আমরা এটার জবাব পাইনি এখনও’। এর প্রত্যুত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে যে মন্তব্যগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো তিনি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে করেছেন, যাতে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই। এগুলোকে ভারত সরকারের অবস্থানের সঙ্গে মেলানো হলে তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু বয়ে আনবে না’। শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যকে দায়িত্বহীন ও শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বোদ্ধামহল। কারণ, সাবেক ও পতিত এ প্রধানমন্ত্রী সে দেশেই নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। তাই তার যেকোন ধরনের নেতিবাচক মন্তব্যের দায়ভার ভারত কোনভাবেই এড়াতে পারে না।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বের অনন্য সাধারণ দেশ। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া সব সময় অপপ্রচার চালিয়ে আসছে যে, বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। আগস্ট বিপ্লবের পর এ প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়। আর সে আগুনে রীতিমত ঘি ঢেলে দেন পতিত স্বৈরাচারের প্রতিভূরা। বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক ঘটনাকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা হিসাবে চালিয়ে দেওয়া হয়। আর এসব ঘটনাকে ভিত্তি ধরেই গত ৯ এপ্রিল ভারতের কোলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্বাচন নিয়ে এক প্রতিবেদন ছাপা হয়। এতে নয়াদিল্লী নতুন করে নড়েচড়ে বসে। এ বিষয়ে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে আগেও বাংলাদেশের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা কথা হয়েছে ভারতের। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যে ভাবে আচরণ করা হয়, তাঁদের উপর যে নির্মমতার অভিযোগ উঠে আসে, তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে বাংলাদেশকে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনাগুলোকে শুধুমাত্র ‘রাজনৈতিক কারণে’ ঘটেছে বা ‘সংবাদমাধ্যমের অতিশয়োক্তি’ বলে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এ ধরনের নৃশংসতায় যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের (অন্তর্বর্তী) সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করি।’
ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছিল সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের বেশির ভাগ ঘটনাই রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে। পরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছিল, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মোট ২৩৭৪টি অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে ১২৫৪টি অভিযোগ সে দেশের পুলিশ যাচাই করে দেখেছে। ওই যাচাই করা অভিযোগগুলোর মধ্যে ৯৮ শতাংশই রাজনৈতিক কারণে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ’। যা বাংলাদেশের পক্ষে ভারতীয় সরকার ও মিডিয়ার দাঁতভাঙা জবাব বলেই মনে করা হচ্ছে।
মূলত, আগস্ট বিপ্লবের পর থেকে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনা প্রবাহ নিয়ে যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে যাচ্ছে তা কোনভাবেই সৎপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ নয় বরং তা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ। দেশটি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে যেভাবে আইন-কানুন, রীতিনীতি তুলে ধরে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে কিন্তু গত ১ আগস্ট একইভাবে বাংলাদেশের বৃহত্তর ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তারা এখন বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন দিলেও আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করলেও তাদেরকে কখনো উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি বরং দেশটি এক্ষেত্রে রীতিমত সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে। তারা একথা বেমালুম ভুলে গেছে যে, আওয়ামী দুঃশাসনে কোন নির্বাচনই অন্তর্ভুক্তিমূলক ছিলো না বরং তারা প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে গেছে। ২০১৪ সালে নির্বাচনে দেশটি প্রকাশ্য হস্তক্ষেপের মাধ্যমে একটি সাজানো-পাতানো নির্বাচনকে প্রকাশ্যে বৈধতা দিয়েছিলো। পরবর্তীতে বাংলাদেশে যত প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে ভারত সবক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে অকৃত্রিম সমর্থন দিয়ে গেছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হলেও সেসব অভিযোগ পুরোপুরি বায়বীয় ও ভারতীয় অপপ্রচার বলে প্রমাণিত হয়েছে। পক্ষান্তরে ভারতই একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র তা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তাই বাংলাদেশের গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে ভারতের মায়াকান্না ‘মাছের মায়ের পুত্রশোক’ হিসাবেই বিবেচিত হচ্ছে। মূলত, ভারতই বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ধ্বংসের নেপথ্যের কারিগর বলেই মনে করা হয়।