গত এপ্রিল মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্তত ৬০টি দেশের রপ্তানির পণ্যের উপর উচ্চহারে বাড়তি শুল্কারোপ করেছিল। এ ইস্যু নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রচন্ড উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীতে তিন মাসের জন্য বাড়তি শুল্কারোপ স্থগিত রাখা হয়। এ সময় কোনো কোনো দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার তাদের রপ্তানি পণ্যের উপর আরোপিত বাড়তি শুল্কহার ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। বিশষ করে ভিয়েতনামের রপ্তানি পণ্যের উপর আরোপিত শুল্ক হার ৪৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। আর বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ৩৭ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল। পরর্বর্তীতে দ্বিতীয় দফা আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের উপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে তৈরি পোশাক। আর বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ভিয়েতনাম। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ যদিও তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কিন্তু ভিয়েতনাম যে কোনো সময় বাংলাদেশকে অতিক্রম করে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার তথ্য মতে, ২০০৪ সালে বাংলাদেশ মোট ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাজার হিস্যা হচ্ছে ৬দশমিক ৯০ শতাংশ।

আর ভিয়েতনামের বাজার হিস্যা হচ্ছে ৬দশমিক ০৯ শতাংশ। আগামীতে ভারত এবং তুরস্কও বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক তৈরি পোশাক বাজারে তুরস্কের বাজার হিস্যা হচ্ছে ৩দশমিক ২১ শতাংশ এবং ভারতের বাজার হিস্যা হচ্ছে ২ দশমিক ৯৪শতাংশ। চীন আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে থাকে। তাদের বাজার হিস্যা হচ্ছে ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ভিয়েতনাম এবং ভারতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাংলাদেশের অনেক বেশি। তারা তৈরি পোশাক শিল্পের বেশির ভাগ কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে যোগান দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ বেশির ভাগ কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও মধ্যবর্তী পণের চাহিদা আমদানির মাধ্যমে মিটিয়ে থাকে। আগামীতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এবং স্থানীয় কাঁচামাল নির্ভরতা বাড়ানো না গেলে শুধু সস্তা শ্রমিক দিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে।