বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রধান শহর বরিশাল- যা এক সময় ‘ভেনিস অব দ্য ইস্ট’ নামে খ্যাত ছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিচারে বরিশাল দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজও এ অঞ্চলে নেই রেল সংযোগ। এটি শুধু একটি অবকাঠামোগত ঘাটতি নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি অবহেলার প্রতিফলন।

দেশের সবকটি বিভাগের সাথে রেলপথের সংযোগ থাকলেও বরিশাল এখনও সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অথচ রেললাইন একটি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম চালিকাশক্তি। রেল সংযোগ থাকলে পণ্য পরিবহন যেমন সহজ হয়, তেমনি মানুষের চলাচলও হয় নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বরিশালের মতো একটি অঞ্চলে রেললাইন না থাকাটা সত্যিই বিস্ময়কর।

বরিশালের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিশাল। এখানে রয়েছে চাষযোগ্য উর্বর জমি, নদীনির্ভর মৎস্য সম্পদ এবং পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকত, দুর্গাসাগর দীঘি, গুঠিয়া মসজিদসহ নানা দর্শনীয় স্থান প্রতিবছর বহু পর্যটককে টানে। একটি রেললাইন এই পর্যটন শিল্পকে বহুগুণে বিকশিত করতে পারে। একইসাথে বরিশাল অঞ্চলের কৃষিপণ্য ও মাছ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহজে পরিবহন করা সম্ভব হবে, যা কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

সরকার ইতিমধ্যেই দেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে রেললাইন সম্প্রসারণ করেছে। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে রেল সংযোগ, আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন চালু ইত্যাদি পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। তাই প্রশ্ন জাগে, বরিশাল কেন এখনো অপেক্ষায়? এখানে রেললাইন নির্মাণ শুধু একটি উন্নয়ন প্রকল্প নয়; এটি হবে দক্ষিণাঞ্চলের প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ।

বরিশালবাসী বহুদিন ধরে “বরিশালে রেললাইন চাই” এই দাবিতে সোচ্চার। সামাজিক আন্দোলন, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে তারা তাদের দাবি জানিয়ে আসছে। এখন সময় এসেছে এই দাবি বাস্তবায়নের। এটি কেবল বরিশালের উন্নয়ন নয়, এটি হবে দক্ষিণাঞ্চলের সামগ্রিক অগ্রযাত্রার সোপান।

-আনিকা ইসলাম

শিক্ষার্থী : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।