গাজা নিয়ে আসলে কী হচ্ছে? এটা কি সভ্যতার শাসকদের ধ্বংসলীলার কোনো এক্সিবিশন? মানবজাতি কি এতটাই নপুংষক, জালেমের অত্যাচার শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে যাবে? যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহুকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র মন্দ আমরা জানলাম, কিন্তু অপরাপর পরাশক্তি ভালো কিভাবে? তারা তো মজলুম ফিলিস্তিনকে রক্ষায় এগিয়ে আসলো না। পরাশক্তিগুলো আসলে কী করছে? ওরা কি মিলেমিশে ভাগাভাগি করে পৃথিবীটাকে শাসন ও শোষণ করে যাচ্ছে? এমন বিবেচনা ভুল মনে করলে সঠিক বিবেচনার বিস্তার ঘটান। পৃথিবীতে পণ্ডিতের সংখ্যা তো কম নয়, কিন্তু তাদের বয়ানে ভূমিপুত্র ফিলিস্তিনিরা আপন জনপদের স্বাধীনতা তো পেলো না। বরং ইহুদিরা উড়ে এসে জুড়ে বসলো ফিলিস্তিনে। শুধু জুড়েই বসেনি, পাশ্চাত্যের সমর্থনে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের করেছে উদ্বাস্তু। হত্যাযজ্ঞের রেকর্ডও সৃষ্টি করেছে ওরা। তবুও নীরব সভ্যতা!
১৮ মে প্রকাশিত এএফপি ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় নতুন করে বিমান হামলা জোরদার করেছে ইসরাইলি বাহিনী। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় নতুন হামলায় ১৪৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার অধিকাংশ নারী ও শিশু। শনিবার গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। বিমান হামলা জোরদার করার বিষয়টিকে ইসরাইলের নতুন করে স্থল অভিযান শুরুর প্রস্তুতি বলে ধারণা করছেন ফিলিস্তিনিরা। উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে বৃহস্পতিবার অন্যতম প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ হয়েছে গত শুক্রবার। এ সফরে গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য ছাড়ার পর থেকেই হামলা জোরদার করেছে ইসরাইল। এরমধ্যে কোনো বার্তা থাকলেও থাকতে পারে। উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক মারওয়ান আল-সুলতান বলেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ৫৮ জন শহীদের লাশ পেয়েছি, তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু হতাহত রয়ে গেছেন। হাসপাতালের ভেতরের অবস্থা ভয়াবহ। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিগত ২৪ ঘন্টায় ইসরাইলি হামলায় ৪৫৯ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী শনিবার জানিয়েছে, তারা গাজা উপত্যকায় অভিযান সম্প্রসারণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে এবং সেনা মোতায়েন করছে, যাতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কিছু অংশের কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়। সীমান্তে সাঁজোয়া বাহিনী জড়ো করাসহ নতুন এ স্থল অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন গিডিয়নস ওয়াগনস।’ সেনা জড়ো করার বিষয়টি এ অভিযানের প্রাথম ধাপের অংশ। ইসরাইলের দাবি, হামাসকে পরাজিত করতে ও জিম্মিদের মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে নতুন অভিযান শুরু হচ্ছে। এর আগে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান শুরু হবে না। শুক্রবার ট্রাম্পের সফর শেষে হামলা শুরু হয়ে গেছে। এদিকে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, ৭৬ দিন আগে ইসরাইল গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পর সেখানে দুর্ভিক্ষের আশংকা দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের ত্রাণ প্রধান টম ফ্লেচার এ সপ্তাহে নিরাপত্তা পরিষদে প্রশ্ন করেছেন, তারা কি গণহত্যা ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নেবে?
এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ৫ মে ঘোষণা করেন, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইল একটি সম্প্রসারিত ও তীব্র সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করছে। তার নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা এমন একটি পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে, যা পুরো গাজা উপত্যকা দখল ও ত্রাণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। প্রশ্ন হলো, নেতানিয়াহুর এমন ঘোষণার আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল কি? এমন ধারার অপকর্ম তো ইসরাইলি বাহিনী আগে থেকেই করে আসছিল, আর তাতে শুধু ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার নয়, মার্কিন প্রশাসনেরও অনুমোদন ছিল। উপলব্ধি করা যায়, গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও হতাহতের মাত্রা আরও বাড়বে। তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও অপরাপর পরাশক্তির কী আসে যায়? ন্যায় ও নীতিহীন এ বিশ্বব্যবস্থায় ফিলিস্তিনিদের দুঃখের মাত্রা হয়তো আরও বাড়বে। পৃথিবীর ক্ষুদ্র প্রভুদের জুলুম আকাশের মহাপ্রভুর দৃষ্টির সীমানায় আছে। জালেমদের শাস্তি তিনি অবশ্যই দেবেন।