সম্পাদকীয়
জুমআর নামাজ কি ঔপনিবেশিকতার চিহ্ন
মানবসমাজটা কী মানবিক হবে, নাকি হবে পাশবিক? এমন প্রশ্নে অনেকেই বিরক্ত হতে পারেন। বলতে পারেন-মানুষের সমাজ তো মানবিকই হবে। না, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় তেমন বাস্তবতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
Printed Edition
মানবসমাজটা কী মানবিক হবে, নাকি হবে পাশবিক? এমন প্রশ্নে অনেকেই বিরক্ত হতে পারেন। বলতে পারেন-মানুষের সমাজ তো মানবিকই হবে। না, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় তেমন বাস্তবতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। স্বনামধন্য বড় বড় রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকালেও বিষয়টি উপলব্ধি করা যাবে। অনেক ক্ষেত্রেই মানবসম্মত বিবেচনাবোধ কাজ করছে না, বরং লক্ষ্য করা যাচ্ছে পশ্চাদাচার। শক্তিমান হলে গরুর মতো গুঁতো মারতে চায়, বিবেচনাবোধ কাজ করে না। প্রসঙ্গত এখানে ‘সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু’ বিষয়টা উল্লেখ করা যেতে পারে।
খবরটির শিরোনাম হলো, ‘জুমআ নামাজের বিরতি বন্ধ করে দিল আসামের বিধানসভা’। ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রকাশিত খবরটিতে বলা হয়, ৯০ বছরের রীতির অবসান ঘটিয়ে আসাম বিধানসভা অধিবেশনে জুমআ নামাজের সময়ের প্রচলিত দু’ঘন্টার বিরতি তুলে দেওয়া হলো। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মার নেওয়া বিতর্কিত সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে গেল আসাম বিধানসভায়। শুক্রবার আসামের মুসলিম বিধায়করা জুমআর নামাজের জন্য দু’ঘণ্টার বিরতি পেলেন না।
আসাম বিধানসভায় গত আগস্টে পাস হওয়া একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতেই এ পদক্ষেপ। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছিলেন বিষয়টি নিয়ে। তাতে লিখেছিলেন, ‘আমরা কাজকে অগ্রাধিকার দিতে চাই। তাই আসাম বিধানসভায় জুমআ নামাজের দু’ ঘন্টা বিরতির প্রথা তুলে দেওয়া হচ্ছে। মুছে ফেলা হচ্ছে ঔপনিবেশিকতার আরও একটি চিহ্ন।’ উল্লেখ্য যে, ১৯৩৭ সালে মুসলিম লীগের সৈয়দ সাদউল্লা এ প্রথা চালু করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মার ইচ্ছে মতো ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল ওই প্রথা খতিয়ে দেখার জন্য। তারা কর্তার ইচ্ছায় কর্ম করলেন। ওই সিদ্ধান্তে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অসন্তুষ্ট এআইইউডিএফ বিধায়ক রফিকুল ইসলাম বলেছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিষয়টি সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো। তিনি আরও বলেন, বিধানসভায় ৩০ জন মুসলিম বিধায়ক আছেন। আমরা এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করছি। কিন্তু বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তা চাপিয়ে দিল। উল্লেখ্য যে, জুমা নামাজ পড়তে যাওয়ায় মুসলিম বিধায়করা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নিতে পারেননি।
বিষয়টি পর্যালোচনা করলে অবাক হতে হয়। আসামের বিধায়করা কি ভারতের সংবিধানের দর্শন কিংবা মর্মকথা উপলব্ধিতে সক্ষম নন? সেখানে তো বৈচিত্র্যের ঐক্যের কথা বলা হয়েছে। সবাইকে নিয়ে সম্মানের সাথে বসবাসের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু হেমন্ত বিশ্বশর্মারা কী করলেন? তারা তো পশ্চাচার করলেন। গুরুর মতো গুঁতো দিয়ে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকারে আঘাত করলেন। ৯০ বছর ধরে প্রচলিত জুমা পড়ার অধিকারকে হরণ করলেন। এমন উগ্রতার কি কোনো প্রয়োজন ছিল? যারা জুমআর জন্য সময় বরাদ্দের বিরোধিতা করে প্রস্তাব আনলেন, পরখ করলেন, সিদ্ধান্ত নিলেন-তাদের কা-জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন জাগে। তারা কি সোশ্যাল হারমনি কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব বোঝেন না? দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য এই বিষয়টি তো অপরিহার্য। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, মুখ্যমন্ত্রী নামাজের বিরতির বিষয়টি তুলে দেওয়ার সাথে যুক্ত করলেন, ‘ঔপনিবেশিক চিহ্ন’ মুছে দেওয়ার বিষয়টিকে। উপনিবেশের সংজ্ঞা কী? জুমা কি কোনো ঔপনিবেশিক বিষয়? ভ্রস্ট রাজনীতির নেতারা বোধহয় সুস্থ ও স্বাভাবিক চিন্তার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এরা আসলে কারো জন্যই কল্যাণকর নয়। ভারতের নাগরিকরা বিষয়টি উপলব্ধি করলে মঙ্গল।