দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে পবিত্র ঈদ উল ফিতর সমাগত। সাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে রমযানের সমাপ্তি। আর তার পরেই ঈদের দিনের শুরু। সন্ধ্যায় ঈদের চাঁদ দেখা আমাদের একটি আনন্দঘন মুহূর্ত। ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরই আনন্দের সূচনা। ঈদের দিন সকালে ঈদগাহ বা মসজিদে নামায আদায়ে রত হই আমরা।

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। এ বছর ভিন্ন এক আবহে, স্বৈরাচার মুক্ত পরিবেশে পবিত্র রমযান পালিত হয়েছে। রোজা পালনে, ইফতার আয়োজনে, ধর্মপালনে আগের সময়কার মতো কোন বাধাবিঘ্ন এ বছর ছিল না। ফলে মুক্ত পরিবেশে মানুষ রমযানের রোজা পালন করেছেন। ইসলাম ধর্ম পালনে, ইসলামী সংস্কৃতির চর্চায় বিগত ১৬টি বছর মানুষকে অনেক নিগৃহীত হতে হয়েছে। নিজ ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে নানা অপবাদ ও ট্যাগ লাগানো হয়েছে। ইফতার মাহফিলের মতো নিরীহ কর্মসূচী পালন করতে দিতে চায়নি। বিগত সরকারের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়েছে। এবারে আনন্দের পরিবেশ ফিরে এসেছে বলা যায়। এ বছর জিনিসপত্রের দামে অন্যান্য বছরের মতো উল্লম্ফন ততটা দেখা যায়নি। আসন্ন ঈদ সবার জন্য আনন্দের হয়ে উঠুক এই আমাদের কামনা।

ঈদের প্রকৃত আনন্দ কখনো মলিন হতে পারে না। ঈদ তো এমন এক উৎসব, যার অর্থই আনন্দ। মাসভর কঠোর সিয়াম শেষে মনপ্রাণ তাজা করে তোলার উদ্দেশ্যেই এই মহোৎসবের আয়োজন। রোজ সকালে সূর্যের উদয় যেমন নতুন, তেমনি বছর শেষে ঈদের ফিরে আসাও নতুন আনন্দের আগমন। মন খুলে ঈদ মোবারক বলায় তাই এমন পরিতৃপ্তি।

ঈদের সাধারণ একটা রূপ যেমন আছে একটা অনন্তরূপও আছে। তাতে রয়েছে কিছু ধর্মীয় বিধান আর অনুষ্ঠান। তবে তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে মানব জীবনের আনন্দকে পরিপূর্ণ করে তোলার উদ্দেশ্যেই ঈদের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা। ঈদের দু’রাকাত ওয়াজিব নামায আদায় করলেই দিনটির আনুষ্ঠানিকতার সমাপ্তি, এমনটি নয়। বরং নামাযের আগেই ফিতরা আদায়ের মধ্য দিয়ে যার সূচনা, শেষটা ঘটে সম্প্রীতির বন্ধনকে দৃঢ় করার মাধ্যমে। কারণ ঈদ সব মানুষের। কালো ধলো, ধনী গরীব সবার।

সমাজের সব মানুষ একই আর্থ-সামাজিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে নেই। বৈষম্য রয়েছে আনন্দের ডাকে সাড়া দেওয়ার সামর্থ্যেরও। তাই পিছিয়ে থাকা সদস্যরাও যাতে আনন্দের আয়োজনে শরিক হতে পারে সে উদ্দেশ্যেই বিধান করা হয়েছে ফিতরা ও জাকাতের। আর অনেকে এ উদ্দেশ্য নিয়ে এ সময়ই জাকাতও বিলি করে থাকেন।

উৎসব কখনো একা একা উদ্যাপিত হয় না। হতে পারে না। প্রয়োজন হয় অন্তত কিছু মানুষের অংশ নেওয়ার। এদিক থেকে দেখতে গেলে আমাদের ধমীর্য় উৎসব ঈদের পরিসর অনেক অনেক বেশি বিস্তৃত। সমাজের প্রত্যেক সদস্যই এর আওতাভুক্ত। সামাজিক উৎসব হিসেবে তাই এ ঈদের গুরুত্বও একটু বেশি। অন্য সময় যাকে দূরে ঠেলে রাখি, ঈদের দিনে অন্তত তার সঙ্গেও বুক মেলাই। মুখে ফোটাই শুভেচ্ছার বুলি। এতে কৃত্রিমতার মিশেল থাকলেও আচরণের পৌনঃপুনিকতা ইতিবাচক কিছু আছর ফেলতে পারে, এমনটা আশা করা তো যায়ই। বিধান বা রেওয়াজগুলোর কিছুই তাই তাৎপর্যহীন নয়।

আমরা যখন ঈদ পালন করতে যাচ্ছি সে মুহূর্তে গাজাবাসী রয়েছে দুর্বিপাকে। ইসরাইল তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে এক ভয়ংকর যুদ্ধ। যুদ্ধ বিরতি উপেক্ষা করে নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরাইলী বাহিনী। গাজাবাসী ঈদ পালন করার পরিবর্তে জীবন বাঁচানোর লড়াইয়ে লিপ্ত। আমরা মনে করি বিশ্বের প্রধান প্রধান দেশগুলোর উচিত হবে গাজায় যুদ্ধ বিরতি আবার শুরু করে গাজাবাসীকে একটি স্বস্তি দেয়া। আমরা তাদের জন্য আল্রাহর দরবারে দোয়া করি। সবশেষে বলবো ঈদ আমাদের জীবনে যথাযথ আনন্দ বয়ে আনুক।