গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বদলে বরং আতঙ্কের রাজনীতি এখন প্রবল হয়ে উঠছে ভারতের নির্বাচনে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক খেলা। নির্বাচন সামনে রেখে এবার ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ তকমাকেই হাতিয়ার করছে বিজেপি ও সমমনা উগ্র ডানপন্থী দলগুলো। বিশেষ করে বাংলাদেশে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে ‘বাংলাদেশি খেদাও’ ক্যাম্পেন জোরদার করেছে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ-এর নেতৃত্বাধীন বিজেপি। বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ঘিরেও সে একই পথে হাঁটছে ভারতের কট্টরপন্থী রাজনীতি। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারে বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই যেন বিভাজনের রাজনীতি তীব্র হচ্ছে। রাজ্যের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিশানগঞ্জসহ সীমান্ত অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিশেষ করে বাংলাভাষী শেরশাহবাদী মুসলিম সম্প্রদায় এখন চরম আতঙ্কে আছে। তাদের দিকে বারবার আঙুল তোলা হচ্ছে ‘বাংলাদেশ অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে। এমন ঘৃণামূলক প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জাতিশুমারি অনুযায়ী বিহারের ১৩ কোটির বেশি জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা ১৭.৭ শতাংশ (২ কোটি ৩১ লাখ ৪৯ হাজার ৯২৫ জন)। এদের একটি বড় অংশ প্রায় ১৩ লাখ শেরশাহবাদী মুসলিম। তারা কাটিহার, আরারিয়া, পূর্ণিয়া এবং কিশানগঞ্জ সমন্বিত সীমানা অঞ্চলে বসবাস করেন। কিশানগঞ্জ জেলাটি বিহারের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ। এ সম্প্রদায়ের ভাষা বাংলা উপভাষার সঙ্গে উর্দু ও হিন্দি শব্দের মিশ্রণ। তাদের এ ভাষাগত স্বাতন্ত্র্য ও ভৌগোলিক অবস্থানকে ব্যবহার করে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল ‘অনুপ্রবেশকারীর’ তকমা দিচ্ছে। এ ঘটনার সূত্রপাত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং মোদিমিত্র জিতনরাম মাঝির হাতে। কিশানগঞ্জের এক জনসভায় শেরশাহাবাদী মুসলিমদের ‘বাংলাদেশ থেকে আসার অনুপ্রবেশকারী’ বলে আখ্যা দেন তিনি। এরপর থেকে এ বিতর্ক আরও তীব্র হয়। ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক মুক্তার আলমের মত স্থানীয় শেরশাহবাদী মুসলিমরা বলছেন এ বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের প্রভাব তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কেও পড়ছে। ফেসবুকে এক মন্তব্যের জেরে তার এক বাল্যবন্ধুও তাকে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ বলায় তাদের বহু বছরের বন্ধুত্বের চিড় ধরেছে।

উল্লেখ্য, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি এই ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুটিকে তাদের প্রচারণার প্রধান হাতিয়ার করে তুলেছে। গত বছর পূর্ণিয়ার এক নির্বাচনী প্রচারে মোদি সীমাঞ্চলকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশের কেন্দ্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, হাইপাওয়ার্ড ডেমোগ্রাফি মিশন গঠন করে অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে বের করা হবে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং সীমান্তাঞ্চলের এক জনসভায় শেরশাহবাদী মুসলিমদের ইঙ্গিত করে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অনেক রাক্ষস এসেছে; সে রাক্ষসদের মেরে ফেলতে হবে।’ উপলব্ধি করা যায়, মিথ্যার রঙে রঞ্জিত এসব বক্তব্য কতটা ঘৃণামিশ্রিত। এসব বক্তব্যে না আছে সত্য, না আছে তথ্য। বরং রাজনৈতিক মতলবে নিজ দেশের নাগরিকদের আতঙ্কে রাখা হচ্ছে এবং প্রতিবেশী দেশের ওপর আরোপ করা হচ্ছে অনুপ্রবেশের ভিত্তিহীন দোষারোপ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এছাড়া ঘৃণার রাজনীতি করতে গিয়ে নিজেরাই রাক্ষস হয়ে উঠছেন কিনা, সেটাও এক বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।