১৩ নভেম্বরের তথাকথিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্র এখন আর গোপন নেই। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্য ও তদন্ত প্রতিবেদন বলছে- ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করছে না, বরং সক্রিয়ভাবে দেশের ভেতরে অরাজকতা ছড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, যা দেশের অর্থনীতির প্রধান লাইফলাইন, সেটিকেই ‘ম্যাসাকার’-এর টার্গেট করা হয়েছে বলে দৈনিক সংগ্রামের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। এমন গুরুতর অভিযোগ কোনো সাধারণ রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ নয়Ñএটি দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতা ধ্বংসের সুপরিকল্পিত নীলনকশা।

এর অংশ হিসেবে সোমবার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যালয়, ইবনে সিনা ডায়াগনোস্টিকের বিভিন্ন শাখাকে টার্গেট করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয় এবং সে সাথে ২০টির বেশি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দৈনিক সংগ্রামের প্রতিবেদেনে গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে আরো দাবি করা হয় যে, ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র ও মাদক ঢুকাচ্ছে আওয়ামী লীগ-সম্পৃক্ত একটি সংগঠিত সিন্ডিকেট। বিজিবির সাম্প্রতিক অভিযানে মাদকের পাশাপাশি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছেÑযা প্রথমবারের মতো দেখা গেল এমন মাত্রায়। বিজিবি অধিনায়ক নিজেই বলেছেন, “দেশে অরাজকতা তৈরির উদ্দেশ্যে মাদকের সঙ্গে অস্ত্র পাঠাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট।” অর্থাৎ, দেশের অভ্যন্তরে সশস্ত্র নাশকতার প্রস্তুতি আগেই নেওয়া ছিল।

এরই মধ্যে বিভিন্ন মহাসড়কে এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ধারাবাহিক ঝটিকা মিছিল পরিচালনার তথ্য আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, পুরো পরিকল্পনার পেছনে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় রয়েছে। গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শত শত ক্যাডার ত্রিপুরায় পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকেই তারা অনলাইনে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। সাবেক একাধিক মন্ত্রী ও দলটির বেশ কিছু হেভিওয়েট নেতা ত্রিপুরা সীমান্তে অবস্থান করে নির্দেশনা দিচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। অভিযোগ আরও আছেÑবাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সুযোগ পেলেই তারা কুমিল্লা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বড় ধরনের সহিংসতা ঘটানোর পরিকল্পনা করছে। আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলোÑ অনেক আওয়ামী লীগার নিজের পরিচয় গোপন করে বিএনপি বা জামায়াতের পরিচয় ব্যবহার করছে এবং সীমান্তপথে অস্ত্র ঢোকাতে বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, দেশকে অস্থির করার নোংরা রাজনীতি একদলীয় স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, নির্বাচন এবং সাধারণ মানুষের জীবনÑসবকিছুই আজ ঝুঁকিতে। আওয়ামী লীগের এই পরিকল্পনাগুলো সত্যি হলে তা সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডের শামিল। সরকার, নিরাপত্তা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই কঠোর, দ্রুত ও পক্ষপাতহীন ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বাস্তবতায় সরকারকে নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনীতিহীনভাবে, প্রমাণভিত্তিকভাবে কাজ করতে হবে; সন্দেহজনক যেকোনো অস্ত্রচোরাচালানের চেইন, অর্থায়ন ও সরবরাহের রুট উন্মোচন করতে হবে। একইসাথে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কঠোর করা ও আন্তঃসীমান্ত সমন্বয় বাড়াতে হবেÑত্রিপুরা সীমান্তসহ যেসব পয়েন্ট থেকে অস্ত্র ও মাদক প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা, সেখানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অটল রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারব্যবস্থার ওপর গণমাধ্যম ও নাগরিক নজর রাখা প্রয়োজন; তদন্তে স্বচ্ছতা না থাকলে জনগণের আস্থা যেতে পারে।

রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ অসংগত আচরণ ও সশস্ত্র বা আকস্মিক সহিংসতায় জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। অন্যথায় অর্থহীন রাজনৈতিক সুরক্ষা নতুন সহিংসতা অনুপ্রেরণা দেবে। দেশের ভবিষ্যৎকে অশান্তির দিকে ঠেলে দেওয়ার অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের নেইÑগতকাল ছিলো না, আজও নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না।