সৃষ্টিজগতে মানুষ যদি উন্নত প্রাণী হয়ে থাকে, তবে তাদের সমাজতো উন্নত হওয়ারই কথা। আর তাদের বিশ্বসমাজ? এ সমাজতো সভ্য সমাজ, আর এ সমাজের যারা সেরা এবং অধিকর্তা তাদের তো সত্য ও ন্যায়ের সঙ্গ দেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কী? ৯ নভেম্বর রয়টার্স পরিবেশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনার মতো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আইনজীবীরা এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে গত বছর গোয়েন্দ তথ্য সংগ্রহ করেছিল। পাঁচ সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। এ ধরনের গোয়েন্দা তথ্য আগে প্রকাশিত হয়নি। এ গোয়েন্দা তথ্যকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কর্মকর্তারা যুদ্ধ চলাকালে দেশটির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্যের মধ্যে একটি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ভেতরই তাদের কৌশলের বৈধতা নিয়ে যে সন্দেহ ছিল, তা তুলে ধরা হয়।

এদিকে দু’সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, বাইডেন প্রশাসনের শেষদিন পর্যন্ত সরকারের ভেতরে এসব তথ্য তেমন জানাজানি হয়নি। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে কংগ্রেসনাল ব্রিফিংয়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়। এ গোয়েন্দা তথ্যের পর ওয়াশিংটনের উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। আর ইসরালের দাবি, বেসামরিক অবকাঠামোর মধ্যে অবস্থান করা হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করার জন্য তারা হামলা চালাচ্ছে। তবে ওয়াশিংটনের উদ্বেগ ছিল, ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লোক ও ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, যা সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ। যদিও ইসরাইল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা এ তথ্যগুলো দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, বিশেষ করে যখন গাজায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকে। তারা বলেন, এতে ইসরাইলের সামরিক অভিযানে আন্তর্জাতিক আইনি মনদণ্ড লংঘন হতে পারে।

উল্লেখ্য, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে যুদ্ধাপরাধের তথ্য সংগ্রহ করার আগেও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কয়েকজন আইনজীবী বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইসরাইল যুদ্ধাপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আইনজীবীরা এক সভায় ব্লিঙ্কেনকে বলেছিলেন-তাদের বিশ্বাস, গাজায় ইসরাইলের সামরিক কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন ও সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের সমতুল্য হতে পারে।

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের কথা বিশ্বের মানুষ জানে। গাজায় গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের ঘটনাও খুবই খোলামেলা বিষয়। তবে রয়টার্স-এর প্রতিবেদনে জঘন্য ওইসব বিষয়গুলো এমনভাবে এসেছে যাতে মনে হতে পারে, নেতানিয়াহু ও তার পরিষদবর্গ খুবই মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ, তারা যা কিছু করেছে নিতান্ত দেশ রক্ষার খাতিরে করেছে, হামাসকে নির্মূলের জন্য করেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারও অতীব উচ্চ মানবিক মূল্যবোধের এক সরকার। ইসরাইল সরকার যা কিছু করেছে, তাদের অগোচরেই করেছে, গোয়েন্দা রিপোর্ট পেতে কিছুটা বিলম্ব ঘটে গেছে। এসব বক্তব্য আসলে সাজানো-গোছানো বিষয়, অতিশয় প্রতারণামূলক বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো অস্ত্র ও অর্থ কোন কাজে লেগেছে তা দেশটির নেতৃবৃন্দ বেশ ভালো করেই জানেন। ইসরাইলের নেতারাও জানেন, তারা কি কি অপরাধ করেছেন। সে কারণে তুরস্ক এদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে কি কোনো ভুল করেছে?