মানবজাতির জন্য চিন্তা-ভাবনার স্বচ্ছতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে সমস্যা থাকলে কোনো চাতুর্যই মানুষকে সমস্যামুক্ত করতে পারবে না। তবে স্বচ্ছতা শুধু আকাক্সক্ষার বিষয় নয়, প্রয়োগের বিষয়ও বটে। তাই এখানে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে নৈতিকতার বিষয়। নৈতিকতার একটি শর্ত হলো যথাবিষয়কে যথাস্থানে যুক্ত করা। আমরা কি পৃথিবীটাকে সেভাবে সাজাতে পেরেছি? স্বচ্ছতার অভাবে আমাদের সভ্যতা, আমাদের বিশ্বব্যবস্থা ভারসাম্য হারিয়েছে। আমরা যথাবিষয়কে যথাস্থানে রাখতে পারছি না। ধর্ম, বর্ণ, তত্ত্ব, জাতীয়তা ও বিজ্ঞানের নামে আমরা আগ্রাসী হয়ে উঠছি। সবাইকে নিয়ে আমরা বাঁচতে চাইছি না। মানুষকে মানুষের অধিকার দিতে আমরা কুণ্ঠিত। প্রকৃতির সাথেও আমরা করছি মন্দ আচরণ। পালনবাদী মনোভাবের বদলে নির্মূলের বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীতে। এমন বাতাবরণে সৃষ্টি হয়েছে আস্থার সংকট। ফলে ধরিত্রীতে এখন সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের চাষাবাদ তেমন হয় না। যেটা হয়, তার নাম ‘মারণাস্ত্র প্রতিযোগিতা’। মারণাস্ত্র তো ফুল ফোটায় না, বরং চালায় ধ্বংসযজ্ঞ। এ ধ্বংসযজ্ঞের তা-বই তো চলছে বর্তমান পৃথিবীতে।

মারণাস্ত্র প্রসঙ্গে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কথা চলে আসে। মারণাস্ত্রের ধ্বংস ক্ষমতা এখন যে কোনো সময়ের চাইতে বৃদ্ধি পেয়েছে। পৃথিবীকে কয়েকবার ধ্বংস করার মত সক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে সভ্যতার শাসকরা। তারপরও কি আমাদের বলতে হবে, স্বচ্ছ ভাবনায় সঠিক পথে চলছে আমাদের পৃথিবী? মারণাস্ত্র বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার নিয়ামক হয়ে উঠেছে। মানববসতি ও প্রকৃতি ধ্বংস করার মত মারণাস্ত্র যার গোডাউনে যত বেশি, সে-ই তত বড় নেতা। জাতিসংঘসহ পৃথিবীর বড় বড় সংস্থাগুলোতে তারাই বসে আছেন। তারাই পরিচালনা করছেন ভূরাজনীতি। ভূরাজনীতির সাথে জড়িয়ে আছেন আঞ্চলিক বরকন্দজরা। তারাও ছড়ি ঘোরাতেন চান ছোট দেশগুলোর ওপর। মারণাস্ত্রের ভয় এরাও দেখান। ইসরাইল ও নেতানিয়াহুই বর্তমান পৃথিবীর মন্দ উদাহরণ নয়। আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও ভিন্ন পোশাকে নতুন নেতানিয়াহুর আবির্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্বচ্ছতাবিহীন পৃথিবীতে নানারূপে নেতানিয়াহুদের সংখ্যা হয়তো বাড়তেই থাকবে।

যে সভ্যতায় মারণাস্ত্র ব্যবসা বাড়তে থাকে, সে সভ্যতায় যুদ্ধ কমবে কেমন করে? ফিলিস্তিন, ইউক্রেনের পর হয়তো অন্য কোনো দেশে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে। তাই পরাশক্তির মুখে যুদ্ধ বন্ধের বয়ান প্রহসনের মত শোন যায়। ওদের বিশ্বব্যবস্থায় তো গাজা ধ্বংসের এক্সিভিশন চলছে। অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। রোববার ফিলিস্তিনী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়মিত বিবৃতিতে এই তথ্য জানায়। গত ১৭ মাসে গাজায় আহতদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৭৪ জনে। রোববার গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। এদিন ভোরে খান ইউনিসে ইসরাইলি বিমান হামলায় স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য সালাহ আল-বারদাওইল নিহত হন, নিহত হন তার স্ত্রীও। ফজরের নামাজরত অবস্থা ফিলিস্তিনী নেতাকে হত্যা করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তার রক্ত মুক্তি ও স্বাধীনতার লড়াইয়ের জ্বালানি দিয়ে যাবে। অপরাধী শত্রু কখনোই আমাদের সংকল্প ও মনোবলকে ভাঙতে পারবে না।’ ফিলিস্তিনীদের সংকল্প ও মনোবল সম্পর্কে বিশ্ববাসী অবগত। এ বিষয়টিও আজ বলা প্রয়োজন যে, স্বচ্ছতাবিহীন এই বিশ্বব্যবস্থায় মানবজাতি ধ্বংসের মুখে। শুধু গাজা নয়, আরও বহু জনপদ ধবংসের অপেক্ষায় আছে। যারা আজ ধংসযজ্ঞ চালাচ্ছেন, তারাও নিরাপদ নন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপাদানগুলো কি তাদের স্মরণে নেই? আরও বিষয় আছে। ঝড়-ঝঞ্ছা, ভূমিকম্প ও দাবানলের কথা পরাশক্তিবর্গের মনে রাখা উচিত। জালেমরা স্রষ্টার আজাব থেকে মুক্ত নন।