পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর, দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের করোনা শনাক্ত-এরকম খবরও পাওয়া যাচ্ছে। পাঁচ বছর আগে করোনা ভাইরাসের এক ভয়াবহ রূপ দেখেছিল বিশ্ববাসী। সে মহামারি ফের নতুন রূপে দেখা দিচ্ছে কি না সেটাই এখন প্রশ্ন। একটি দৈনিকের খবরে বুধবার বলা হচ্ছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১০৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এ ১০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ জনে। গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের প্রত্যেকেই ঢাকা মহানগরী এলাকার বাসিন্দা। এর আগে গত ১০ জুন ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন দু’জন। এর ফলে এ সংখ্যা ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৮০ জনে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাত নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বুধবার দুপুরে মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর এ নির্দেশনার কথা জানান। এতে জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা, মাস্ক ব্যবহার, হাঁচি/কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখা, ঘনঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া, আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ফিরে আসার বিষয়টি সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। জানা যাচ্ছে, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ সংক্রমণ বাড়ছে। বাংলাদেশেও হঠাৎ করোনা বাড়তে শুরু করেছে। করোনার ভয়াবহতার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। আমাদের মতো জনবহুল দেশে তা বাড়তি বিপদ নিয়ে হাজির হয় তা বলাই বাহুল্য। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত আরেকটি খবরে বলা হযেছে, সংক্রমণ রোধে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা কিটের মজুতের কথা বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। কিন্তু বাস্তবচিত্র ভিন্ন। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিট নেই। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সভাপতিত্বে করোনা প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে সম্প্রতি মিটিং হয়েছে। সেখানে দ্রুত কিট সরবরাহ করার নির্দেশনা দিয়েছেন উপদেষ্টা।

আমরা মনে করি সরকারের এ নির্দেশনা যেন বাস্তবায়িত হয় তা দেখভাল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশার কথা, সতর্কমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকার সব স্থল, নৌ এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে। বিদেশফেরত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত গমন না করার পাশাপাশি বাস, ট্রেন ও পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নিয়ন্ত্রণে ত্রিমুখী ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, এ বছর করোনায় ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। যারা টিকার তিন ডোজ নিয়েছেন তারাও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হবেন। এ কারণে করোনা প্রতিরোধে ত্রিমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এখনই। বিমানপথ, নৌপথ, স্থলপথ দিয়ে যারা বিদেশ থেকে আসবেন, তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনা একবার হয়েছে, আর হবে না, এ ধরনের আত্মতৃপ্তির কোন সুযোগ নেই। নতুন ভ্যারিয়েন্টে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। তাই সবার মাস্ক পরতে হবে। হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের ভিড় না করা ভাল। শুধু মাস্ক পরলে ৯৯ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে জানান তারা। স্কুলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে হবে। জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।

আমরা মনে করি এসব পরামর্শ সবারই মেনে চলা উচিৎ। সরকারের প্রতি অনুরোধ থাকবে, প্রশাসনের তরফ থেকে যেন কোন ঘাটতি না থাকে। করোনার প্রয়োজনীয় কীট দ্রুত সংগ্রহ করা ও সরকারী হাসপাতালগুলোতে তা সরবরাহ করার অনুরোধ জানাই। অন্তর্বর্তী সরকার করোনা রোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা আশাবাদী।