ভারতে সদ্য পাস হওয়া ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে দেশের নানা প্রান্তে তীব্র বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ দানা বাঁধছে। মুসলমানদের পাশাপাশি প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন ভিন্ন ধর্মীরাও। এ বিলের মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। যা মুসলিম নির্যাতনের নতুন অস্ত্র হয়ে উঠেছে। ভারতের শীর্ষ আদালতেও আইনটি বাতিল করার দাবিতে একাধিক পিটিশন জমা পড়েছে। তারই আলোকে ভারতের সুপ্রীম কোর্ট একটি যুগান্তকারী আদেশ দিয়েছে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, ১৯৯৫ সালের আইনে নথিভুক্ত ওয়াকফ সম্পত্তিতে কোনো বদল ঘটানো যাবে না। পাশাপাশি, নিয়োগ করা যাবে না ওয়াকফ বোর্ড বা পর্ষদেও। নতুন ওয়াকফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে করা মামলার শুনানিতে এ নির্দেশ দেয় দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে সাত দিনের মধ্যে নিজেদের বক্তব্য জানাতে বলেছে শীর্ষ আদালত। এ মামলায় পরবর্তী শুনানি আগামী ৫ মে। ওইদিন প্রয়োজনে কোনো নির্দেশ দেয়া হলেও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। ওয়াকফ বিলের মাধ্যমে মুসলমানদের স্থাপনা, মসজিদ, মাদরাসা ভাঙা শুরু হয়েছিল, চলছিল মুসলিম নির্যাতন। সুপ্রীম কোর্ট তার আদেশে এসব কাজ যে বে আইনি তা সুস্পষ্ট বলে দিয়েছে। এদিকে, ভারত সরকারও জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট যে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছে, তা তারা মানবে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার শুনানির শুরুতে প্রথমে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সরকারের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি জানান, কেন্দ্রের কাছে প্রচুর তথ্য জমা পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বহু জমি ওয়াকফ জমি হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছে। নিজেদের সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বহু মানুষের মনে। এর পরেই সুপ্রিম কোর্টের কাছে রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য সময় চায় কেন্দ্র। তার ভিত্তিতে কেন্দ্রকে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছে শীর্ষ আদালত। নতুন ওয়াকফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলা হয়েছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রকে জবাব দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সংশোধিত মুসলিম ওয়াকফ বিল নিয়ে উত্তাল ভারত। এ পরিস্থিতিকে আরো উসকে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে। যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, দাঙ্গাকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনার একমাত্র মাধ্যম বলপ্রয়োগ। এদিকে মুসলিমদের ছোট করে কথা বলেছেন নরেদ্র মোদি। সবই করা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আঁটা ভারতে। দেখা যাচ্ছে মুসলিমদের দলনে এই ধর্মনিরপেক্ষতার বালাই নেই। আদালত স্থগিতাদেশ দেয়ার পর সরকারের তরফ থেকে মুসলিম দলন বন্ধ হবে সেটাই আশা করা হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি সাংবিধানিক আদালত গত বুধবার শুনানি করে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, ওয়াকফ বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কমিটির সব সদস্য মুসলিম হতে হবে, ব্যতিক্রম শুধু পদাধিকার বলে বোর্ডের সদস্যপদ পাওয়া ব্যক্তিরা। শুধু তাই নয়, হিন্দুদের ধর্মীয় ট্রাস্টে মুসলিমদের জায়গা দেয়া হবে কি, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন শীর্ষ আদালত। এটা সরকারকে ব্যঙ্গ করে করা হয়েছে, বলাইবাহুল্য। শুনানি চলাকালীন কেন্দ্রের আইন নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন আদালত। ওয়াকফ বোর্ডের ২২ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৮ জন কেন মুসলিম, প্রশ্ন তোলা হয়। এতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার সঙ্গে কার্যত বাগযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার। সে নিরিখে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে মামলার শুনানি হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন মেহতা। এতে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারপতির আসনে যখন বসি আমরা, ধর্ম থাকে না আমাদের। আমাদের কাছে সবপক্ষই সমান। এর পরই তিনি জানতে চান, “তার মানে কি বলতে চাইছেন, হিন্দুদের ধর্মীয় ট্রাস্টের বোর্ডে মুসলিমদের জায়গা হবে? প্রকাশ্যে বলুন।” প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “২৬ নং ধারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। এটা সব সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য।”

সুপ্রীম কোর্ট যথার্থ প্রশ্নই করেছেন আর এর মাধ্যমে মোদি সরকারের কার্যক্রমকে কার্যত অকার্যকর করা হয়েছে। আমরা মনে করি ওয়াকফ বিলের নামে ভারতে মুসলিম নির্যাতন বন্ধ করা দরকার। মোদি সরকার বিষয়টি মেনে চলবে বলে আশা করি।