চিকিৎসাসেবা মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু দেশের মানুষ এ অধিকার কতটা পায়? দেশের অধিকাংশ মানুষের বাসতো গ্রাম-গঞ্জ ও উপজেলায়। সেখানে চিকিৎসার চিত্রটা কেমন? সামর্থ্যবানরাতো রাজধানীর চিকিৎসা ব্যবস্থায়ও সন্তুষ্ট নন। ফলে তাঁরা উড়াল দেন বিদেশে। মন্ত্রী, সচিব, ব্যবসায়ীরা বিদেশনির্ভর না হয়ে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়নে আন্তরিক হলে মানুষের মঙ্গল হতো। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার হাল-হকিকত সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসা সেবার দিকে। ৯ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ভেঙে পড়েছে উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসা সেবা’। এমন শিরোনামে ফুটে উঠেছে আমাদের চিকিৎসা সেবার বাস্তবচিত্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন বছর ধরে বিভাগীয় একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন এক চিকিৎসক। গত বছরের ডিসেম্বর দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয় তাঁকে। কিন্তু কর্মস্থলে যোগদান করেই তিনদিনের মাথায় আরেক মেডিকেল কলেজে বদলির জন্য তিনি আবেদন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। ব্যবহার করেন রাজনৈতিক দলের নেতার সুপারিশ, সফলও হন তিনি। কারণ জানতে চাইলে চিকিৎসক সাংবাদিককে জানান, ‘উপজেলায় কাজের পরিবেশের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। রোগীর চাপতো আছেই, সঙ্গে কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতা একটা বড় কারণ। পাশাপাশি বছরের পর বছর এখানে থাকলেও পদোন্নতি মেলে না। তাহলে কেন থাকবো সেখানে?’ গ্রামে থাকতে না চাওয়ার এমন মনোভাব শুধু এ ডাক্তারেরই নয়, অধিকাংশেরই মনোভাব এমন। এমনিতেই গ্রামে রয়েছে চিকিৎসক সংকট, তার ওর বড় অংশ রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। কেউ আবার সংযুক্তি নিয়ে চলে গেছেন ঢাকাসহ সুবিধাজনক শহরের হাসপাতালে। এভাবে ভেঙে পড়েছে উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসা সেবা।
উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসাসেবা এমন করুণ অবস্থায় ফেলে রাখা যায় না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানসম্মত চিকিৎসা দিতে হলে সবার আগে উপজেলায় বাড়াতে হবে চিকিৎসকের পদ। প্রতিবছর পাঁচ হাজারের বেশি চিকিৎসক উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটিতে থাকেন, যার খেসারত দিতে হয় কর্মস্থলে থাকা চিকিৎসক ও রোগীদের। পাশাপাশি নিরাপদ কর্মস্থলের অভাব, বছরের পর বছর ধরে পদোন্নতিবঞ্চনা ও পারিপার্শ্বিক চাপের কারণে চিকিৎসকরা গ্রামে থাকতে চান না। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অবকাঠামোগত সমস্যা, সামাজিক মর্যাদার অভাব, কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতা, বৈষম্য ও পদায়নজনিত অনিয়মের কারণে চিকিৎসকরা গ্রামে থাকতে চান না। এসব কারণেই মূলত শহরমুখো প্রবণতা বাড়ছে চিকিৎসকদের মধ্যে। বড় সমস্যা হলো- পাঁচ হাজার চিকিৎসক প্রতিবছর উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি থাকেন। এসব পদ সৃষ্টি করা গেলে সমস্যা থাকবে না। তাহলে পদ সৃষ্টি করা হোক এবং রক্ষা হোক উপজেলা চিকিৎসাব্যবস্থা।