অবশেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হলো। ডাকসুর মত জাকসুর নির্বাচনেও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল নিরঙ্কুশ বিজয় লাভে সমর্থ হয়েছে। অবশ্য নির্বাচন নিয়ে অনেক অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের বিষয় লক্ষ্য করা গেছে। এতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সফল করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা ধৈর্যের সাথে যৌক্তিক ভূমিকাও পালন করেছেন। এতে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। এজন্য তাদের জানাই ধন্যবাদ। জাসকু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে বিশেষ প্রাণচাঞ্চল্য ও উদ্দীপনা। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত জাকসুর ভোটে ছিল স্বচ্ছতা। তবে নির্বাচনের ফল ঘোষণার কাজটি বেশ কঠিন হয়ে উঠেছিল। এর পেছনে সক্রিয় ছিল নানা অপতৎপরতা।

এবার জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল ও বাম ছাত্র সংগঠনের নির্বাচন বর্জনসহ নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা গেছে। তবে সব ছাড়িয়ে গেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের অপরাজনীতি। ফলে তিনদিনে গড়ালো জাকসু নির্বাচনের ফল প্রকাশের কার্যক্রম। সব মিলিয়ে জাকসু নির্বাচন বানচালের নির্লজ্জ কর্মকাণ্ডগুলো এতটাই স্পষ্ট যে, বিষয়টি জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গেও আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গণমাধ্যমের শিরোনামে যখন লেখা হয়, ‘ভোট গণনা নিয়ে তামাশা কিংবা ‘দলবাজ’ শিক্ষকদের কারণে জাকসু নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা,’ তখন সহজেই আমরা পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারি।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাকসু নির্বাচনে ভোট গণনায় এত সময় লাগা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। এর পেছনে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন যুক্তি দেখালেও ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের নেতিবাচক কার্যক্রমের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও বিশেষ ঘরানার কিছু শিক্ষকের অপতৎপরতাকে দায়ী করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় জাকসু নির্বাচনের ভোট গণনার সাথে সংশ্লিষ্টদের পড়তে হয়েছে বিপাকে, আর ফল প্রত্যাশিদের চাতক পাখির মতো থাকতে হয়েছে দীর্ঘ প্রতীক্ষায়। ভোট গণনা ও ফল প্রকাশে অস্বাভিক বিলম্বের কারণে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ সামনে এসেছে। প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেড়েছে উদ্বেগ ও ক্ষোভ। লক্ষণীয় বিষয় হলো, স্বতঃস্ফূর্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হলেও ফল প্রকাশে লক্ষ্য করা যাচ্ছে জটিল অবস্থা। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থা ও দলবাজ শিক্ষকদের অপতৎপরতাকে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, কোনো একটি প্যানেলের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা মেশিনে না করার সিদ্ধান্ত ছিল অযৌক্তিক ও অপরিপক্ক। এদিকে জাকসু নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থাপনার কারণে শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সুলতানা আক্তার। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ অব্যবস্থার জন্য দায় নিতে হবে। একই সঙ্গে তিনি জান্নাতুল ফেরদৌসের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি জানান।

জাকসু নির্বাচনের ফল প্রকাশের কাজটি এতটা কঠিন হওয়ার কথা ছিল না। কঠিন হওয়ার পেছনে কাজ করেছে দলবাজ শিক্ষকদের তৎপরতা। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, অব্যবস্থাপনার দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকরা ছাত্র দলের নির্বাচন বর্জনের পর শেষ মুহূর্তে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। পদত্যাগকারী সবাই বিএনপিপন্থী শিক্ষক ও বর্তমান ভিসির বিরোধী পক্ষের। এছাড়া ভোটে অব্যবস্থাপনার দায় মাথায় নিয়ে শুক্রবার পদত্যাগ করেন নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকার পরও কতিপয় শিক্ষক রাজনৈতিক বিবেচনায় নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার নজিরবিহীন কর্মটি সম্পন্ন করেছেন মূলত বর্তমান ভিসি অধ্যাপক কামরুল আহসানকে বেকায়দায় ফেলতে। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচন কেন্দ্র করে উপাচার্য কামরুল আহসানকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে কূটকৌশলের আশ্রয় নেন বিএনপিপন্থী কিছু শিক্ষক। এ জটিলতার গভীরে রয়েছে উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত পুরোনো দ্বন্দ্ব। যেসব শিক্ষক তখন ভিসি পদে নিয়োগ পাননি, পরবর্তী সময়ে তারা নানা ষড়যন্ত্রে জড়ান। যার সর্বশেষ উদাহরণ জাকসু নির্বাচন। এসব ঘটনা ও অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার প্রয়োজন। যাতে জাকসু নির্বাচন নিয়ে ভবিষ্যতে কেউ আর তামাশা করার সাহস না পান।