DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

সম্পাদকীয়

জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করতে হবে

জুলাই বিপ্লবের পর জনআকাক্সক্ষার ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হবে এটাই সবাই মনে করে। সে জায়গা থেকে নিকট প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বিগত ১৬ বছরে করা অসম চুক্তিগুলো পর্যালোচনার দাবি আসছে বহুদিন থেকে।

Default Image - DS

জুলাই বিপ্লবের পর জনআকাক্সক্ষার ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হবে এটাই সবাই মনে করে। সে জায়গা থেকে নিকট প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বিগত ১৬ বছরে করা অসম চুক্তিগুলো পর্যালোচনার দাবি আসছে বহুদিন থেকে। এ দাবি নতুন করে উত্থাপিত হয়েছে, পত্রিকান্তারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তা দেখা যাচ্ছে।

এতে বলা হয়েছে, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা দিল্লিতে আশ্রয় নেয়ার পর দু দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে ভারতে একটা অস্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ এক দশকের অনির্বাচিত আওয়ামী সরকার ও স্বৈরশাসনে ছিল বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্য বিস্তারের প্রধান অবলম্বন। বাংলাদেশে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে প্রতিবেশী দেশ ভারত নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ট্রানজিট, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসম ৮৬টি চুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে তারা এমন আধিপত্য সৃষ্টি করেছে। তাদের সে আধিপত্য রুখতে সব কটি চুক্তি সরকারকে প্রকাশ করতে হবে ও দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিল করতে হবে বলে বারবার দাবি উঠেছে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় তথ্য বাতায়নের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন পাওয়া গেলেও সরকারি ওয়েবসাইট কিংবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত বিশদ তথ্য পাওয়া যায় না।

বর্তমান ভারত ও ভারতীয় সরকার চাণক্যের নীতিতে বিশ্বাসী আর এ থিওরি মোতাবেক তারা উপমহাদেশের অন্যান্য রাষ্ট্রকে নানাভাবে অসুবিধায় ফেলে সুবিধা নিতে সদা তৎপর। সে সুবিধা কী তারা পেতেই থাকবে এমন একটা প্রশ্ন আছে জনমনে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘আধিপত্যবিরোধী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে আয়োজিত মশাল মিছিল পূর্ববর্তী সমাবেশে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানায় একদল শিক্ষার্থী।

দেখা যাচ্ছে, নিজের স্বার্থে আওয়ামী লীগ প্রথম ভারতের সাথে গোপন গোলামির চুক্তি করে। পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে এই প্রভাব অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। এ সময়টায় দিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথা উঠেছে। এসব চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকে ভারতের অতিলাভের বিপরীতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূন্য বলেই মনে হয়েছে পর্যবেক্ষকদের কাছে। এমনকি ২০১৮ সালের মে মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা ‘ভারতকে যা দিয়েছি সারা জীবন মনে রাখবে’ মন্তব্য করলে চুক্তি-সমঝোতা স্মারকের স্বচ্ছতা নিয়ে জোর আলোচনা ওঠে।

১৯৭১ সালের বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি বা সাত দফা গোপন চুক্তি হলো মুজিবনগর সরকার ও ভারত সরকার মধ্যকার একটি কথিত গোপন মৈত্রী চুক্তি। ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ২০টি চুক্তি হয়েছে। আর সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে ৬৭টি। এসব ছিল ট্রানজিট, যোগাযোগ, বন্দর, বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতা শুধু পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে হয়নি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও হয়েছে। এসব মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান চাইলে তাদের চুক্তি -সমঝোতা পর্যালোচনা ও পুনর্বিবেচনা করতে পারে। জনদাবি অনুযায়ী সেগুলো বাতিল করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমরা সে অনুরোধই জানাই।