বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি কালো ছায়া দেখা যাচ্ছে যা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। এখানে খুব দ্রুততার সাথে একের পর এক ঘটনা ঘটছে, যে ঘটনাপ্রবাহের সর্বশেষ সংযোজন-অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন। বিষয়টি নিয়ে দেশের আত্মসচেতন মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। আর উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের বিদায়ের পর দেশের মানুষ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। আর বর্তমানে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে, আর্থিক ব্যবস্থায় উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং অপরাধীদের শাস্তির বিধান ও ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্বাচন করার আগে কিছু সংস্কার নিয়ে কাজ চলছে। কারণ জনগণ এসব সংস্কার দেখতে চায় এবং তার পর নির্বাচন হবে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার বিরোধী আন্দোলনের স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে কিছু কিছু ভুল বোঝাবুঝির সুযোগে বড় বিপর্যয় সৃষ্টির শংকা তৈরি হয়েছে। আর তাই ছাত্রদের দাবির মুখে ক্ষমতা গ্রহণকারী ড. ইউনূস পদত্যাগ করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ভাবছেন। এটা দেশের সাধারণ জনগণের কাম্য নয়। তারা বর্তমান সরকারের আরো সাফল্য দেখতে চায় এবং দেশটির সঠিকভাবে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটুক সেটাও তারা চান। এমন পরিস্থিতিতে ফ্যাসিস্ট বিরোধী ও গণতন্ত্রকামী সকল দলকে নিয়ে আলাপ আলোচনার কোন বিকল্প দেখছি না। আশার কথা দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অনুরূপ আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন এমন খবর পেয়ে তার সাথে দেখা করেছেন তিনি। একইদিন সন্ধ্যায় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের ‘বিতর্কিত উপদেষ্টাদের’ সরানোর দাবি তোলে বিএনপি। এর আগে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ঢাকার রাজপথে বিক্ষোভও করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা আন্দোলন শুরু করে। এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করে পদত্যাগে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এনসিপির এক শীর্ষ নেতা। এমন ডামাডোলের মাঝেই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ করতে চাওয়ার ওই গুঞ্জন উঠে। এ খবরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উদ্বিগ্ন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, দেশ ও জাতির স্বার্থে অপ্রত্যাশিতভাবে আসা বিভাজন মিটিয়ে ফেলতে হবে। তার ভাষ্য, আমরা সবাই এক হয়েছিলাম বলে দীর্ঘ দেড় যুগের শক্তিশালী ফ্যাসিবাদকে তছনছ করতে পেরেছিলাম। আমরা খণ্ড বিখণ্ড হলে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশী-বিদেশী দোসরেরা আমাদের তছনছ করার হীন পাঁয়তারা করবে। দেশ ও জাতির প্রতি দায় এবং দরদ আছে বলেই আমরা এক হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম। দেশ ও জাতির জন্যই এবার আমাদেরকে এক হয়ে আমাদের স্বদেশকে বিনির্মাণ করতে হবে।
আমাদের প্রধান একটি নির্ভরতার যায়গা হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী। গুজবে কান না দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুক্রবার নিজেদের ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলা হয়, ‘সম্প্রতি, একটি স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর লোগো ব্যবহার করে একটি ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরির অপচেষ্টা চলছে।’
আমরা মনে করি জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত ৯/১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে সাফল্য যেমন আছে, কিছু কিছু ব্যর্থতাও থেকে থাকবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেসবকে প্রাধান্য না দিয়ে সরকারকে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করাই হবে বড় কাজ। আমরা মনে করি সব দলের বৈঠকে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহা করা এখন সময়ের দাবি।