বৃটিশ প্রভাবশালি দৈনিক দ্যফিন্যান্সিয়াল টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে,আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। যা অর্থপাচারের মহোৎসব হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। উন্নয়নের নামে বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আহরিত রাজস্ব হতে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটে নিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশের আর্থ-রাজনৈতিক অবস্থা যে কতটা ধ্বসে পড়েছে প্রকাশিত সংবাদ থেকে তা কিছুটা হলেও অনুমান করা যায়। অর্থ পাচারের যে পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে এটা দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়। কারণ যারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেন তারা তাদের উপার্জিত অর্থের পুরোটা বিদেশে পাচার করতে পারেননি। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থের বেশির ভাগই দেশেই রয়েছে। এক শ্রেণির মানুষ রাজনীতিকে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ারে পরিণত করেছে। জাতীয় নির্বাচনকালে অর্থের ছড়াছড়ি প্রত্যক্ষ করা যায়। এটা আসলে এক ধরনের বিনিয়োগ।

রাজনীতি এখন লাভজনক বিনিয়োগ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এমনকি যে কোন ট্রেডিশনাল ব্যবসায়ের চেয়েও রাজনীতিতে বিনিয়োগ করা অধিক লাভজনক। বিগত সরকারের আমলে কলঙ্কযুক্ত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ গঠিত হয়েছিল তার ৬২ শতাংশ সদস্যই ছিলেন ব্যবসায়ি-উদ্যোক্তা। তারা ব্যাংক ও আর্থিক খাতে প্রচলিত আন্তর্জাতিক মানের আইনগুলো এমনভাবে পরিবর্তন/সংশোধনের ব্যবস্থা করেন যাতে তাদের অন্যায় কর্ম করতে সুবিধা হয়। দ্যা ফিনান্সিয়াল টাইমস উল্লেখ করেছে, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ৩০০টির বেশে স্থাবর সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে।

বৃটিশ সরকার এর মধ্যেই বেশ কিছু সম্পত্তি জব্দ করেছে। একজন প্রতিমন্ত্রী কিভাবে এত বিপুল সম্পদের অধিকারি হন তা ভাবলেও বিস্মিত হতে হয়। বিগত সরকার আমলের অধিকাংশ মন্ত্রী,সংসদ সদস্য এভাবেই বিপুল সম্পদ ও বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন মহাপরিচালকের একজন গাড়ি চালক হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন করে এখন কারাগারে রয়েছেন। বাংলাদেশ এমন এক দুর্নীতিপ্রবণ দেশ যেখানে দুর্নীতির সঙ্গে দুর্ভাগ্য যুক্ত না হলে কারো শাস্তি হয় না। দুর্নীতিবাজরা নানাভাবে অর্থ ব্যয় করে কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে দায়মুক্তি নিয়ে নেয়। যতই দিন যাচ্ছে দুর্নীতির প্রবণতা এবং ব্যাপকতা শুধু বৃদ্ধিই পাচ্ছে।