ভারত খাগড়াছড়ি ও কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্ত দিয়ে ১০২ জনকে বাংলাদেশে ‘পুশইন’ করেছে বলে পত্রিকান্তরে খবর প্রকাশিত হয়েছে। জানা যায়, বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও পানছড়ি উপজেলার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে ৮১ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। এর মধ্যে মাটিরাঙ্গার গোমতীর শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে ২৭ জন, আচালং এলাকায় ২৩ জন, পানছড়ির লোগাং দিয়ে ৩০ জন এবং রামগড় সীমান্ত দিয়ে একজনকে পুশইন করা হয়। তারা সবাই ভারতের গুজরাটের মুসলিম সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশু। পুশইন করা ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে ধারণা স্থানীয়দের। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানান, তারা ভারতের গুজরাটের বাসিন্দা। বাংলা ভাষাভাষী হলেও তাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ভারতে। তাদের দাবি, বিএসএফ সদস্যরা তাদের গুজরাট থেকে উড়োজাহাজে করে ত্রিপুরায় নেন। এরপর মাটিরাঙ্গার খেদাছড়া ও যামিনীপাড়া এবং পানছড়ির সীমান্তবর্তী রুপসেনপাড়া এলাকা দিয়ে তাদের পুশইন করে।

দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ির ৩টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ৬৬ ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ (পুশইন) করিয়েছে ভারতীয় সীমন্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গত ৭ মে ভোরে জোর করে তাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। মাটিরাঙ্গা উপজেলার গুমতি ইউনিয়নের দক্ষিণ শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ৩টি পরিবারের আনুমানিক ২৭ জন ভারতীয় নাগরিক। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ভারতীয় নাগরিকরা উঠেন সীমান্তবর্তী জনৈক আবু তাহেরের বাড়িতে। আবু তাহের জানান, বর্তমানে ভারতীয় নাগরিকরা আবুল হোসেন মেম্বারের বাড়িতে রয়েছেন। একইভাবে বুধবার রাতে মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং সীমান্ত দিয়ে ১৫ জন এবং পানছড়ির লোগাং সীমান্ত দিয়ে আরও ২৪ জন ভারতীয় নাগরিককে পুশ করা হয়েছে। তারাও বিজিবির জিম্মায় রয়েছেন। এছাড়া কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্ত দিয়ে আরও ৩৬ রোহিঙ্গাকে পুশইন করার খবর পাওয়া গেছে। যেভাবেই যে সীমান্ত দিয়ে হোক পুশইন করার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের। পুশইনের নামে ভারতের নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া কেবল অমানবিকই নয়, মানবাধিকারে ঘোরতর লংঘন। এটা ভারতের কোন সৎপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ নয়।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের পুশইনের ঘটনা অগ্রহণযোগ্য। বিষয়টি নিয়ে দেশটির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। গত ৭ মে সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, আলাদাভাবে প্রতিটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আমাদের দেশের নাগরিক যদি কেউ হয়ে থাকেন আর সেটা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের আমরা গ্রহণ করবো। তবে এটা ফরমাল চ্যানেলে হতে হবে। এভাবে পুশইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়। এটা নিয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’

আমরা মনে করি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সঠিক কথাই বলেছেন। ভারত গায়ের জোরে, অন্যায়ভাবে বাংলাদেশে ‘পুশইন’-এর নামে যে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। তার বিরুদ্ধে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর এ ব্যাপারে আরো তৎপর হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমাদের সরকার যেন কোনো দুর্বলতা না দেখায় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সেই আহ্বানও থাকবে।