চাঁদাবাজি বিষয়টা আসলে কী? এর পেছনে কাজ করে কোন্্ মনস্তত্ত্ব? কর্মী মানুষ কাজ করবে, পরিশ্রম করবে, ব্যবসার পেছনে ঘাম ঝরাবে, কিছু উপার্জন করবে। আর অলস ভঙ্গিতে তা চেয়ে চেয়ে দেখবে কিছু মানুষ। তবে তাদের মস্তিষ্ক ক্রিয়াশীল। অলসদের মস্তিষ্ক নাকি মন্দকর্মে পক্ক বেশি। ওই মস্তিষ্ক তখন অপরের উপার্জিত অর্থে ভাগ বসাতে চাইবে। তবে পরিশ্রমলব্ধ অর্থ কি কেউ এমনিতে কাউকে দিতে চায়? তখন পেশিশক্তি দেখিয়ে অপরের অর্থ ছিনিয়ে নেওয়ার তৎপরতা চলে, যার এক নাম ‘চাঁদাবাজি’। চাঁদাবাজদের জোর-জবরদস্তিমূলক মনস্তত্ত্ব খুবই গর্হিত বিষয়। যার নিষ্ঠুর ও নৃশংস শিকার হয়েছেন মিটফোর্ড এলাকার ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯)। সোহাগ ‘মেসার্স সোহানা মেটাল’ নামের একটি দোকান পরিচালনা করতেন পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরে ওই দোকান থেকে প্রতিমাসে দু’লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল একটি সন্ত্রাসী চক্র। নিহত সোহাগের স্ত্রী লাকি বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, আমার স্বামী ওই দু’লাখ টাকা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওই সন্ত্রাসীচক্রের রাজনৈতিক পরিচয়ও জানা গেছে। পুলিশ তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের চার নেতাকে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা হবে, এমনটাই জনগণের কাম্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো; এভাবেই কি দেশে চাঁদাবাজির নৃশংস দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে।
না, দেশে চাঁদাবাজি বন্ধের লক্ষণ দৃশ্যমান নয়। সারাদেশে চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে বিভিন্ন অঙ্গনে। এরমধ্যে পরিবহন খাতের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। একটি জাতীয় দৈনিকে শরীয়তপুর প্রতিনিধির একটি প্রতিবেদন মুদ্রিত হয় ১৩ জুলাইতে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে চলাচলকারী একটি পরিবহন কোম্পানির কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে। চাঁদা না পেয়ে গত বুধবার থেকে ওই নেতার সমর্থকেরা ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামের ওই কোম্পানির বাস যাত্রাবাড়ীতে ঢুকতে দিচ্ছে না। এ ঘটনার প্রতিবাদে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়। শনিবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শরীয়তপুরের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ কর্মসূচির শুরু হয়। ৪৫ মিনিটের কর্মসূচিতে ঢাকা-ভাঙা এক্সপ্রেস ওয়েতে এক কিলোমটিারের বেশি যানজট তৈরি হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুর জেলার আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির বলেন, যাত্রাবাড়ীতে যুবদলের এক নেতা শরীয়তপুরের একটি পরিবহন কোম্পানির কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিচ্ছেন। ওই নেতা ও তার লোকজন আরও বেশি চাঁদার দাবিতে তিনদিন ধরে শরীয়তপুরের বাস যাত্রাবাড়ীতে যেতে দিচ্ছে না। শরীয়তপুরের বেশ কয়েকজন পরিবহন শ্রমিককে তারা মারধরও করেছে। তাদের যানবাহন ভাঙচুর করেছে। কোনো রাজনৈতিক দলের লোকদের এভাবে চাঁদাবাজি করে মানুষকে জিম্মি করার ঘটনা বাংলাদেশে আর ঘটতে দেওয়া হবে না। তারা চাঁদাবাজ চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। এদিকে শরিয়তপুর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার বলেন, ‘চাঁদাবাজ ফাহিমের কারণে, আমরা বাস নিয়ে যাত্রাবাড়ী যেতে পারছি না।’
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, ফাহিম নামের একজনের বিরুদ্ধে বাস চলাচলে বাধা দেওয়া, চাঁদাদাবি, শ্রমিকদের মারধর করে বাস ভাঙচুর করার অভিযোগ করেছেন এক বাস মালিক। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। পুলিশ হয়তো তদন্ত করবে, আগেও বহু তদন্ত হয়েছে। কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। চাঁদাবাজির কারণে শুধু বাসের মালিক ও শ্রমিকই ক্ষতিগ্রস্ত হন না, ক্ষতিগ্রস্ত হন যাত্রীসাধারণও। কারণ, চাঁদাবাজির চাপটা তাদের ওপরও পড়ে। এখানে প্রশ্ন, দুই-চারজন চাঁদাবাজই কি চাঁদাবাজির মত ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সক্ষম? নাকি তাদের পেছনে আছে কোনো সংঘবদ্ধ শক্তি তথা রাজনৈতিক সমর্থন।’ এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।