১২ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিক শিরোনাম করেছে, ‘সবকিছুই ধ্বংস করেছে ইসরাইলি বাহিনী।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দু’বছর ধরে গাজায় ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনের পর শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে যুদ্ধবিরতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় সম্মত হয় ইসরাইল ও হামাস। চুক্তি অনুযায়ী গাজা উপত্যকার নির্দিষ্ট এলাকা থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে নিয়েছে ইসরাইল। যুদ্ধবিরতির খবরে দক্ষিণ গাজায় পালিয়ে যাওয়া হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজা সিটিতে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে শহরটির বেশিরভাগ অংশই ইসরাইলের বোমার আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, উত্তর দিকে ক্ষতিগ্রস্ত সরু উপকূলীয় রাস্তা ধরে হেঁটে মূল ভূখণ্ডে প্রবশ করছেন বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি। সন্তান ও পরিজনসহ হাসিুমখে নিজগৃহে ফিরছেন তারা। তাদের অনেকেই ২০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ হেঁটেছেন। কেউ পিঠে করে মালামাল বহন করছেন, কেউবা গাজার গাড়ি কিংবা ছোট ট্রাক ভাড়া করেছেন। এখানে কেউ ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়েছেন, কেউ বা উড়িয়েছেন বিজয়ের প্রতীক। তাদের ক্লান্ত চেহারায় ছিল খুশির ঝিলিক। বাস্তুচ্যুতি, ক্ষুধা ও আতংকের কারণে তাদের অনেকেই দুর্বলতা ও অপুষ্টিতে ভুগছেন।

বিবিসিকে আলা সালেহ নামের এক শিক্ষক জানিয়েছেন, বোমা হামলার সময় গাজা সিটি থেকে খান ইউনিসে পালিয়ে গিয়েছিলেন তারা। এখন আবার ফিরছেন। রাস্তা ছিল দীর্ঘ ও কঠিন, ছিল না খাবার ও পানি। যারা ফিরছেন, তাদের মুখে হাসি থাকলেও নেই স্বস্তি। কারণ, তাদের বাড়িঘর বলতে কেছুই অবশিষ্ট নেই। প্রায় সাত লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। কারণ গাজা সিটিকে হামাসের ‘শেষ শক্ত ঘাঁটি’ হিসেবে বর্ণনা করে এখানে তীব্র বোমা হামলা চালায় ইসরাইল। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজেদের ঘরবাড়িসহ বেশিরভাগ অবকাঠামোর এমন নিশ্চিহ্ন অবস্থা দেখে হতবাক তারা। এদিকে হামাসসহ বিভিন্ন ফিলিস্তিনি সংগঠন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, গাজার ভবিষ্যৎ শাসন ব্যবস্থার যে কোনো সিদ্ধান্ত একান্তই ফিলিস্তিনিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কারণ এ ভূখন্ডে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে।

এদিকে শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে হামাস, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ এবং পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) জানিয়েছে, গাজাবাসীর দৃঢ়তা ও ঐক্যের ফলেই গাজা থেকে তাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতিতে ইসরাইলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, তারা যে কোনো বিদেশি অভিভাবকত্বকে প্রত্যাখ্যান করছে। একই সঙ্গে জোর দিয়ে বলেছে, গাজা উপত্যকা এবং এর প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসনের প্রকৃতি ফিলিস্তিনিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, যা এ ভূখণ্ডের জাতীয় প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্বই সরাসরি নির্ধারণ করবে। দলগুলো আরো জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য একটি ‘জরুরি জাতীয় বৈঠক’-এর প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। আমরা জরুরি জাতীয় বৈঠকের সাফল্য কামনা করি। কারণ বর্তমান সেক্যুলার সভ্যতা ও বর্ণবাদী বিশ্বব্যবস্থায় ফিলিস্তিনিদের পথচলা বেশ কঠিন। ধৈর্যের সাথে বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করে যেতে হবে সব ফিলিস্তিনিকে। এ জন্যই হয়তো যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় ওদের মুখে হাসি থাকলেও স্বাস্তি নেই।