জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন ২০২৫ বর্তমানে চলমান। ২০২৫ সালের ইউনাইটেড নেশনস ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স বা ইউনাইটেড ন্যাশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) এর পক্ষগুলোর সম্মেলন, যা সাধারণত কপ ৩০ (COP 30) নামে পরিচিত। ৩০ তম জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন ১০ থেকে ২১ নভেম্বর ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন হল জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কাঠামো কনভেনশন (ইউএনএফসিসিসি)-এর আওতায় অনুষ্ঠিত বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য এবং ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে উন্নত দেশগুলোর গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের জন্য কিয়োটো প্রোটোকল নিয়ে আলোচনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এদিকে জলবায়ু সংকটই এখন স্বাস্থ্য সংকট বলে পরিগণিত হচ্ছে।
গতকাল দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জলবায়ু সংকটই এখন স্বাস্থ্য সংকট বলে পরিগণিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর পড়ছে। আর তাই এখন সময় এসেছে জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা শুরু করার। গত বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস গত সপ্তাহে ব্রাজিলের বেলেমে জাতিসংঘের চলমান কপ-৩০ সম্মেলনে অংশ নেন। সেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আলোচনায় স্বাস্থ্যকে আরও গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান।
জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে টেড্রোস বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি হলো মানুষের স্বাস্থ্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু আলোচনায় স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “মানুষকে নিজেদের বা সন্তানদের স্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা বোঝানো অনেক সহজ, কিন্তু হিমবাহ বা জীববৈচিত্র্য রক্ষার জরুরি বিষয়টি বোঝানো ততটা সহজ নয়। দুটোই গুরুত্বপূর্ণ, তবে স্বাস্থ্য মানুষের কাছের বিষয়।” টেড্রোস জানান, বৃহস্পতিবার কপ-৩০-এর স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালিত হবে। এদিন আয়োজক দেশ ব্রাজিল স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা ঘোষণা করবে। আর এটি অন্য দেশগুলোকে তাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রস্তুত করতে ও জলবায়ুজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকির মোকাবিলা করতে সহায়তা করবে।
টেড্রোস আরও বলেন, “জলবায়ু সংকট আসলে একটি স্বাস্থ্য সংকট।” এদিকে ডব্লিউএইচও’র পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রধান রুডিগার ক্রেখ বলেন, “যদিও জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, তবু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আলোচনার কোনো নির্দিষ্ট স্থান তৈরি হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “এখন সময় এসেছে স্বাস্থ্যকে আনুষ্ঠানিক আলোচনার অংশ করার এবং আমরা আশা করছি আগামী বছর কপ-৩১-এ এটি বাস্তবে পরিণত হবে।” এ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনটি শুধু আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত না হয়ে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে তা ভাবার সময় হয়েছে।
আমরা মনে করি, জলবায়ু সংকট আসলে স্বাস্থ্য সংকট : ডব্লিউএইচও-এর এইি বক্তব্য সঠিক ও আমরা এ বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি উন্নত দেশগুলো যদি অধিক মাত্রায় কার্বণ নিঃসরণ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয় এবং অনুন্নত দেশগুলোর স্বার্থ না দেখে তা হলে এ সম্মেলন থেকে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র দেশগুলোর প্রতিনিধিদের বক্তব্য সম্মেলনে গুরুত্ব পাওয়া উচিত বলেও আমরা মনে করি।