বিশ্বের মানুষ কথামালার যুদ্ধ দেখেছে, দেখেছে মারণাস্ত্রের যুদ্ধ। এবার দেখলো গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৈতিক যুদ্ধ। এ এক অভিনব লড়াই। দখলদার ইসরাইল ফিলিস্তিনের গাজায় একদিকে নির্বিচার গণহত্যা ও জাতিগত নিধন চালাচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষুধার্ত ও আহতদের কাছে জরুরি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধের অভাবে অবরুদ্ধ গাজাবাসী এখন মৃত্যুর মুখে। এমন অবস্থাকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে আখ্যায়িত করছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এমন বাস্তবতায় ৪৫টির বেশি দেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের ৫০টি জাহাজের একটি বিশাল নৌবহর খাদ্যসহায়তা ও জরুরি ওষুধ নিয়ে গাজাভিমুখে রওনা হয়েছে। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামের এ নৌবহরের মাধ্যমে গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর চেষ্টা করছে মানবাধিকার কর্মীরা। এই আন্তর্জাতিক নৌবহরের লক্ষ্য হলো, গাজা উপত্যকায় ইসরাইল আরোপিত সর্বাত্মক অবরোধ ভাঙা।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অন্যতম অভিযাত্রী সুইডিস জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। এ অভিযাত্রায় যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের গুণী আলোকচিত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শহীদুল আলম। এছাড়া আছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রহিলরেন আখতার। তিনি বৃটেনের নিউক্যাসলের মানবতাবাদী কর্মী। এবারের ফ্লোটিলা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ এটি ফিলিস্তিনি উপত্যকায় পাঠানো বৃহত্তম নৌসহায়তা মিশন। ফ্লোটিলার গাজামুখী এই অভিযাত্রা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হয়। স্পেন ও ইতালি তাদের নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠায় ফ্লোটিলার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনে সহায়তা প্রদানের জন্য। বহরে ৫০টি বেসামরিক জাহাজ এবং পাঁচশতাধিক বেসামরিক অধিকার কর্মী ও সমর্থক অংশ নেন। তবে গত বুধবার রাত থেকে ইসরাইলি বাহিনী একে একে জাহাজগুলোকে আটকে দেয় এবং মানবাধিকার কর্মীদের আটক করে ইসরাইল নিয়ে যায়। এর মধ্যেও নানা বাধা অতিক্রম করে মিকেনো নামের একটি জাহাজ ফিলিস্তিনি জলসীমায় প্রবেশ করে গাজায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। ইসরাইল আগেই ঘোষণা করেছিল যে, তারা যে কোনো মূল্যে এ ফ্লোটিলা আটকাবে। তারা দাবি করে, এই কর্মীরা ‘বৈধ নৌ অবরোধ’ ভাঙার চেষ্টা করছে-যদিও তাদের এ দাবি আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের আগস্টে। প্রথমে স্পেন ও ইতালি বন্দর থেকে রওনা হয়ে গ্রিস ও তিউনিসিয়ায় থামে এবং সেখান থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে গাজার উদ্দেশে অগ্রসর হয়। আয়োজকরা জানান, মিশনটি শুরু হয় ৫০টির বেশি জাহাজ নিয়ে, যা অন্তত ৪৫টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছিল। এতে শত শত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাবেক, কর্মী ও সংসদ সদস্য অংশ নেন। এ অভিযাত্রায় ২৪ জন ছিলেন মার্কিন নাগরিক, এদের কয়েকজন আবার সাবেক সেনা সদস্য। ফ্লোটিলাটি প্রতীকী হলেও তাতে ছিল তাৎপর্যপূর্ণ মানবিক সাহায্য সম্ভার। ফ্লোটিলাটি মারণাস্ত্র বহন করেনি, তবে বহন করেছে অজেয় নৈতিক অস্ত্র। এ অস্ত্র মোকাবিলার সামর্থ্য ইসরাইলের নেই।