DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

সম্পাদকীয়

রমযানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুসলিম সংস্কৃতি

পত্রিকার পাতায় মাঝে মাঝে এমন শিরোনাম হয়, যা ভাবতে বাধ্য করে। যেমন ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরছে মুসলিম সংস্কৃতি।’ না এখানে ভিনদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হয়নি; বলা হয়েছে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা।

Printed Edition
Default_Image_-_DS_N0xvrM0.max-165x165

পত্রিকার পাতায় মাঝে মাঝে এমন শিরোনাম হয়, যা ভাবতে বাধ্য করে। যেমন ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরছে মুসলিম সংস্কৃতি।’ না এখানে ভিনদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হয়নি; বলা হয়েছে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। ফলে স্বাভাবিক কারণেই উঠে আসে নানা প্রশ্ন। বাংলাদেশে জনসংখ্যার চিত্রটা কেমন? যদি জনসংখ্যার ৯০ ভাগই মুসলিম হয়, তাহলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার একটা ইতিবাচক প্রভাব থাকাই স্বাভাবিক। গণতান্ত্রিক বিবেচনাবোধও এমন কথাই বলবে। কিন্তু যখন পত্রিকার শিরোনাম হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরছে মুসলিম সংস্কৃতি’, তখন প্রশ্ন জাগেÑএতদিন ছিল না কেন? কারা মুসলিম সংস্কৃতির বিরোধিতা করেছে? শুধু বিরোধিতা করেনি, উৎখাতের জন্য সন্ত্রাসী কায়দায় হামলাও করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইফতারের আয়োজন করতে গিয়েও নিষ্ঠুর হামলার শিকার হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসব সন্ত্রাসীদের পরিচয় কী? ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ছাত্রলীগ ছাড়াও ওই অপকর্মে যুক্ত ছিল অন্য একটি মহল। এ বাম মহলটি সবসময় কুপরামর্শ দিয়ে এবং নেতিকবাচক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মুসলিম সংস্কৃতির বিরোধিতা করে আসছে। এরাই আবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বেশ উৎসাহ দিয়ে থাকে এবং অংশগ্রহণও করে থাকে।

এ দ্বিচারিতা কেন? আচরণের মাধ্যমে এরা তাদের চরিত্রকে স্পষ্ট করেছে। বাম ঘরানার এ মহল আসলে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী মহল। রাজনীতি ও সংস্কৃতির নামে যত তত্ত্বকথাই বলুক না কেন, ওরা আসলে এক সাম্প্রদায়িক শক্তি। সময় এসেছে ওদের মুখোশ উন্মোচন করার। এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন যে, বিষয়টি বোঝাবার জন্য ‘সংখ্যালঘু’ শব্দটি ব্যবহার করলেও ওরা আমাদের দেশের নাগরিক। নাগরিক হিসেবে আপন ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চার পুরো অধিকার তাদের আছে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সে অধিকার থাকবে না কেন? মুসলমানরা নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চা করতে গেলে তাদের ‘সাম্প্রদায়িক’ ও ‘মৌলবাদী’ আখ্যা দেওয়া হবে কেন? এমন আখ্যা দেওয়ার পেছনে কারা জড়িত তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়, এর জন্য তেমন কোন গবেষণার প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশের মানুষকে নতজানু রাখতে পারলে যাদের স্বার্থ উদ্ধার হয়, তাদের ক্রীড়নক হিসেবেই একটি মহল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারাদেশে নানা নামে সক্রিয়া রয়েছে।

জুলাই বিপ্লবের পর দেশের পরিস্থিতিতে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মানুষ স্বাধীন চেতনায় মর্যাদাপূর্ণ জীবন চাইছে। এর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও। ১৫ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রমযান মাসকে স্মরণীয় ও বরণীয় করে তুলতে বর্ণিল আলোকসজ্জা ও রঙিন ব্যানারে সাজানো হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোকে। আয়োজন করা হচ্ছে গণইফতার, চলছে কুরআন শিক্ষা কর্মসূচি। এসবের মধ্যদিয়ে বাধাপ্রাপ্ত মুসলিম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ফিরে আসছে উচ্চশিক্ষার প্রাঙ্গণগুলোতে। পতিত আওয়ামী জাহেলিয়াতের সময় এমন চিত্র দেখা যায়নি। বরং প্রায় দেড়দশক ধরে এসব আয়োজনে বাধা দেওয়া হয়েছে। মহিমান্বিত রমযান মাসে আত্মশুদ্ধি ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। মাসব্যাপী নেওয়া হয়েছে কুরআন শিক্ষা, কুরআন উপহার ও গণইফতারের কর্মসূচি। স্বাধীনতা ও স্বকীয় সংস্কৃতির চেতনায় এবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেভাবে রমযান পালিত হচ্ছে, তার শুভ প্রভাব আমাদের জাতীয় জীবনকে সমৃদ্ধ করুক।