বর্তমান সভ্যতায় সৃষ্টি হয়েছে অনেক আপদ, এরমধ্যে ‘ভূরাজনীতি’ এক বড় আপদ। এ আপদের কবলে পড়ে গাজা ধ্বংসপ্রায়। যুদ্ধবিরতির ফলে নিঃশ্বাস নেওয়ার যে একটু সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, তা আবার বন্ধ হওয়ার শংকা সৃষ্টি হয়েছে। রয়টার্স পরিবেশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ পরবর্তী গাজা নিরাপদ রাখতে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের জন্য নিজেদের প্রস্তাবে সমর্থন চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজা প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন প্রস্তাব দেয় ওয়াশিংটন। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের মিশন জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন এক মাস ধরে কাতার, মিসর, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতামত নিয়ে প্রস্তাবটি তৈরি করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে রাশিয়া, চীনসহ কয়েকটি আরব দেশ। দেশগুলোর উদ্বেগের কারণ, অস্থায়ীভাবে গাজা শাসন করবে, এমন কোনো বোর্ড এখনো গঠন করা হয়নি। এছাড়া গাজা শাসন প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো অন্তর্বর্তী ভূমিকাও রাখা হয়নি। উল্লেখ্য, চীন ও রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি দেশ। তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার অধীনে থাকা ‘বোর্ড অব পিস’ অংশটি প্রস্তাব থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তবে গত বুধবার রাতে প্রকাশিত সর্বশেষ খসড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ‘বোর্ড’ গঠনের বিষয়টি বহাল রেখেছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে কিছু অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতি যোগ করেছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স গত বৃহস্পতিবার জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জ করে জাতিসংঘে নিজস্ব খসড়া প্রস্তাব পেশ করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার জাতিসংঘ মিশন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের কাছে নিজেদের প্রস্তাবে বলেছে, ‘আমাদের খসড়ার উদ্দেশ্য হলো-নিরাপত্তা পরিষদকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও অভিন্ন অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম করা, যাতে টেকসই যুদ্ধবিরতি অর্জন সম্ভব হয়।’ আর যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাব অনুসারে, গাজা-২০২৭ সালের শেষ পর্যন্ত দু’বছরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনিক সংস্থা বা বোর্ড অব পিসের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এর নেতৃত্ব দেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় ২০ হাজার সদস্যের একটি আন্তর্জাতকি বাহিনী (আইএসএফ) নিরাপত্তা, জিম্মিদের মুক্তি এবং পুনর্গঠনের কাজ করবে। তবে এ বাহিনীতে কোনো মার্কিন সেনা মোতায়েন হবে না। তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও মিসরের মতো দেশগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে। এদিকে রাশিয়ার খসড়ায় মার্কিন ‘বোর্ড অব পিস’ ধারণাটিকে প্রথ্যাখ্যান করা হয়েছে। এর বদলে জাতিসংঘ মহাসচিবকে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনে ধারণা দিতে বলা হয়েছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির জন্য আরও ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা নেওয়া সম্ভব হবে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত প্রথম খসড়া ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে পাঠানো হয়। তাতে ২০২৭ সালের শেষ পর্যন্ত গাজায় নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক বাহিনীকে সমর্থন দেওয়ার কথা বলা হয়। এ বাহিনী বোর্ড অব পিসের সঙ্গে কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে রাশিয়া, চীন ও আলজেরিয়া।
মহাবিপর্যয়কর এক পরিস্থিতির মধ্যে আছে গাজাবাসী। তাদের নিয়ে ভূরাজনীতি হচ্ছে, পরাশক্তিবর্গের বলয়ের দাপট চলছে, কিন্তু কাক্সিক্ষত কাজটি হচ্ছে না। গাজাবাসী স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাচ্ছে না, ফিলিস্তিন পাচ্ছে না স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। বিষয়টি তো দু’এক বছরের নয়, যুগযুগ ধরে চলছে এ অপরাজনীতি। সভ্যতার শাসকরা নিজেদের মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। দিনে দিনে তাদের দেনা অনেক বেড়ে গেছে। তারা সভ্যতার নামে, বিশ্বব্যবস্থার নামে অনেক চাতুর্য করেছেন, সার্থান্ধ তৎপরতা চালিয়েছেন-এর মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনসহ দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর দুঃখের মাত্রা বাড়িয়েছেন। এখন গাজায় যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা এবং শাসন-প্রশাসন নিয়ে চলছে পরাশক্তিবর্গের নতুন রাজনীতি। যারা ফিলিস্তিনের ভূমিপুত্র তাদের যেন এখানে বলার কিছু নেই। সব কথাই যেন বলতে খলনায়করা ও সভ্যতার শাসকরা। অভিশাপ এ সভ্যতাকে, অভিশাপ সভ্যতার ভ্রষ্ট শাসকদেরও।