বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ-এখানে পবিত্র কুরআনের শিক্ষা, তিলাওয়াত ও দারস শুধু একটি ধর্মীয় চর্চাই নয়, এটি আমাদের জাতির আত্মিক পরিচয়ের অন্যতম স্তম্ভ। এ দেশে কুরআনের আলোয় মানুষ শত শত বছর ধরে মানবতা, ন্যায়, দয়া ও শান্তির শিক্ষা গ্রহণ করেছে। অথচ বিস্ময়কর ও বেদনাদায়কভাবে সম্প্রতি এমন একটি পবিত্র কুরআন শিক্ষার আসরে হামলার ঘটনা ঘটেছেÑ যেখানে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে উপস্থিত সাধারণ মানুষকে রক্তাক্ত করা হয়েছে।
একটি ধর্মীয় মাহফিল, যেখানে কুরআনের আয়াত পাঠ করা হচ্ছিল, যেখানে মানুষ আল্লাহর বাণী বুঝে নিজেদের জীবনকে আলোকিত করতে চেয়েছিল, সে স্থানে সহিংস হামলা আমাদের সমাজের বিবেককে কাঁপিয়ে তোলার মতো ঘটনা। এতে বহু মানুষ আহত হয়েছেন, ভাঙচুর করা হয়েছে যানবাহন ও সম্পদ। এটি কেবল একটি হামলা নয়, এটি ইসলাম, ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানবতা ও সামাজিক সহনশীলতার ওপর ঘৃণ্য আঘাত। এদেশের সংবিধান নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। প্রত্যেক মানুষ তার বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্ম পালন করতে পারবে-এটি মৌলিক অধিকার। সে অধিকার লঙ্ঘন করে যদি কেউ ধর্মীয় শিক্ষা, কুরআন তিলাওয়াত বা দারসের মতো পবিত্র অনুষ্ঠানে আক্রমণ চালায়, তবে তা শুধুমাত্র অপরাধ নয়, জাতির আত্মার ওপর আঘাত। এ ধরনের হামলা আমাদের ধর্মীয় সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সংস্কৃতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়।
ধর্মীয় অনুষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক বিরোধ বা দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্থান নয়। আল্লাহর বাণী শুনতে আসা মানুষ কারও শত্রু নয়। তারা সমাজে শান্তি, নৈতিকতা ও আলোকিত চেতনা ছড়িয়ে দিতে চায়। তাদের ওপর হামলা মানে শান্তির ওপর হামলা, ন্যায়ের ওপর হামলা, মানবতার ওপর হামলা। এমন নৃশংস ও নিন্দনীয় ঘটনার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।
আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে বলতে চাই-এ ধরনের হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখলে ভুল হবে। এটি আমাদের সমাজে এক ধরনের সহিংসতা, অসহিষ্ণুতা ও ধর্মবিরোধী মানসিকতার বিপজ্জনক উত্থানকে নির্দেশ করে। আজ কুরআনের দারসের ওপর হামলা, কাল হয়তো অন্য কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা আচার এর লক্ষ্য হতে পারে। এভাবেই ধর্মীয় মূল্যবোধ, মানবিকতা ও জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি ভেঙে পড়ে।
আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাই, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সাহসী তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ পবিত্র ধর্মীয় সমাবেশে আঘাত করার দুঃসাহস না দেখায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সজাগ থাকতে হবে, যাতে এ ধরনের ধর্মীয় আক্রমণ পুনরাবৃত্তি না ঘটে। বাংলাদেশের মানুষ গভীরভাবে ধর্মপ্রাণ। তারা কুরআনকে হৃদয়ে ধারণ করে জীবন পরিচালনা করে। সে পবিত্র কিতাবের শিক্ষার ওপর হামলা মানে গোটা জাতির বিশ্বাসের ওপর আঘাত। এমন অপরাধের নিন্দা করার ভাষা নেই, এটি নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক বিকৃতির ভয়াবহ নিদর্শন।
আজ আমাদের সমাজে প্রয়োজন সহনশীলতার পুনরুত্থান, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পুনর্গঠন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি গভীর সম্মান। ইসলামের নাম শুনলেই যাদের মন বিদ্বেষে জ্বলে ওঠে, তাদের বুঝতে হবে-ধর্মকে আঘাত করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হয়ে যায়।
কুরআন শান্তির কথা বলে, ন্যায় ও মানবতার কথা বলে। সে কুরআনের দারসে হামলা কোনোভাবেই ইসলামপ্রেমী বা মানবিক চেতনার মানুষদের নীরব থাকতে দিতে পারে না। এ ঘটনার নিন্দা শুধু মুখের ভাষায় নয়-অন্যায়ের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেই আমাদের প্রমাণ করতে হবে, বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মবিদ্বেষী কোনো সহিংসতার দেশ নয়, বরং বিশ্বাস, সহাবস্থান ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার দেশ। এখনই সময়-ধর্মীয় সহনশীলতা রক্ষা করে কুরআনের আলোকে সমাজে ন্যায়ের ও শান্তির চেতনা পুনরুদ্ধার করার।