জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ষষ্ঠবারের মতো গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিল ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিনের গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে গত বৃহস্পতিবার উত্থাপন করা প্রস্তাবটি আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র। এভাবেই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন নিজেদের সভ্যতার শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিশ্বের মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের এমন তৎপরতাকে সমর্থন করছে, নাকি ঘৃণা করছে? বিভিন্ন দেশের রাজপথে আমরা ছাত্র-জনতার ঘৃণার ধ্বনি শুনতে পেরেছি। এ ধ্বনি জুলুমের বিরুদ্ধে এবং মজলুমের পক্ষে। এদিকে ইসরাইলের স্থল অভিযানের মুখে গাজানগরী ছাড়ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। অভিযান শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিক গাজা ছেড়ে গেছেন বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। উল্লেখ্য, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের ১০ সদস্যদেশ গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি তুলেছিল। শুধু স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে। ফলে প্রস্তাবটি পাস হলো না। সর্বশেষ প্রস্তাবে গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছিল। সে সঙ্গে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলের সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং ত্রাণ সরবরাহ করতে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। এর বিপরীতে প্রস্তাবটিতে গাজায় জিম্মি অবস্থায় থাকা ইসরাইলিদের অবিলম্বে সম্মানজনক মুক্তির কথা বলা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে হামাস একে ‘গণহত্যার অপরাধের সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে জড়িত থাকা’ বলে মন্তব্য করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, উত্থাপিত প্রস্তাবে হামাসের নিন্দা সেভাবে জানানো হয়নি এবং ইসরাইলের আত্মরক্ষার বিষয়টির স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ভোটাভুটির আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিনা মার্কুস লাসেন নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, ‘গাজায় দুর্ভিক্ষ এখন নিশ্চিত একটি বিষয়। অনুমান নয়, গোষণা নয়-এটা এখন নিশ্চিত। তিনি আরও বলেন, ‘গাজানগরীতে সামরিক অভিযান বাড়িয়েছে ইসরাইল। এতে বেসামরিক মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। এ মানবিক বিপর্যয়, এ মানবিক ব্যর্থতা আমাদের আজকের এ পদক্ষে নিতে বাধ্য করেছে।’ কিন্তু বিবেচনার বিষয় হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠের আকাক্সক্ষা ব্যর্থ হয়ে গেল এক যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে। ফলে এই ভেটো পাওয়ার একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। বহু বছর থেকেই এই পাওয়ারকে বিশ্বের মানুষ অপছন্দ করে আসছে।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজা সিটিকে কয়েকদিন ধরে সর্বাত্মক হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। শহরটিতে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান চালাচ্ছে দেশটি। হামলার মুখে সেখান থেকে বাসিন্দারা দলে দলে পায়ে হেঁটে গাজার আরও দক্ষিণে সরে যাচ্ছেন। আসলে ভূমিহীন যাযাবরদের মত জীবন কাটাতে এখন বাধ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনীরা। অথচ তারা ভূমিপুত্র। আগ্রাসী ইসরাইল তাদের ওপর এমন জুলুম চালাতে পারছে যুক্তরাষ্ট্রের কারণে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে ইতিহাস।