ইসরাইল তো দশকের পর দশক ধরে রীতিমত মাস্তানি করে যাচ্ছে। দেশটির মাস্তানিতে পাশ্চাত্য, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র আস্কারা দিয়েছে বেশি। ফিলিস্তিনের ভূমিপুত্র ফিলিস্তিনিদের সাথে ইসরাইল যে নির্মম ও নৃশংস আচরণ করেছে, তেমন উদাহরণ ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে দেশটি। বিশ্বে যুদ্ধাপরাধী দেশ হিসেবেই এখন পরিচিত ইসরাইল। আগ্রাসন চালাতে চালাতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর রুচি ও বিবেচনাবোধ সুস্থ অবস্থায় নেই। তার সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী মনোভাব এতটাই উগ্র যে, তাকে এখন বিকারগ্রস্ত মানুষ হিসেবে অভিহিত করা যায়। এর তাজা উদাহরণ শুক্রবার ভোররাতে ইরানে নৃশংস হামলা। নেতানিয়াহু ইরানকে হয়তো আর এক গাজা ভেবেছিলেন। কিন্তু ইরান তো রীতিমত এক শক্তিশালী রাষ্ট্র। তাই ইরানে হামলা চালিয়ে ধরা খেলেন নেতানিয়াহু। এখন মার্কিন সাহায্য পেতে ভিক্ষার থালা হাতে অপেক্ষা করছেন তিনি। ইসরাইল এখন চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র যেন সরাসরি যুদ্ধে শরিক হয়ে যায়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটু দ্বিধায় পড়ে গেছেন। সিদ্ধান্ত নিতে দু’সপ্তাহ সময় নিয়েছেন তিনি।
তবে ইতিমধ্যে যা হবার তা হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট, ইকোনমিক টাইমস, আল-জাজিরায় সেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে। ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ দিনদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। উভয় পক্ষেই ক্ষতির মাত্রা বাড়ছে। গণমাধ্যমে ইসরাইলের ক্ষতির মাত্রা বিশেষভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। কারণ আগ্রাসী এ দেশটি আগে কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ যুদ্ধে ইসরাইলকে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। এ ব্যয় দেশটির অর্থনীতিতে ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করেছে। ইরান ইতিমধ্যে ৪০০-এর বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুঁড়েছে ইসরাইলে। প্রতিটি আক্রমণ প্রতিহত করতে দু’টি করে ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে হচ্ছে ইসরাইলকে। ফলে ইসরাইলের অস্ত্র ভাণ্ডার দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিস্থাপন ব্যয়ও আকাশ ছোঁয়া। ইসরাইলের হাসপাতাল ও নাগরিক স্থাপনায়ও হামলা চালিয়েছে ইরান। এ ঘটনাকে ইসরাইল সরকার যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করছে। এখানে প্রশ্ন হলো, ইসরাইল এতদিন গাজায় কী করেছে, সেটি কি যুদ্ধাপরাধ ছিল না? ইরানে ইসরাইলের হামলায় কি যুদ্ধাপরাধের ঘটনা ঘটছে না? ইরানের হামলায় ইসরাইলের বিদ্যুৎকেন্দ্র, পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট, তেলডিপো ও গ্যাস স্টোরেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। শিল্প উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। যুদ্ধের প্রভাবে ইসরাইলের সমুদ্র বন্দরে রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় থেমে গেছে। ইসরাইলের স্টক মার্কেটে ধস নেমেছে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। যুদ্ধের কারণে হাজার হাজার ইসরাইলিকে নিতে হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, বিমান চলাচল ব্যাহত। এছাড়া ইসরাইলি নাগরিকদের মধ্যে বাড়ছে ভয় ও উদ্বেগের মাত্রা।
এসবের জন্য তো ইসরাইলি নাগরিকরা নেতানিয়াহুকে ক্ষমতায় বসায়নি। এবার ইসরাইল সরকারের ইরান আক্রমণ নতুন বার্তা দিচ্ছে ইসরাইলকে। আক্রান্ত হলে জীবন কেমন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, সে অভিজ্ঞতা এবার অর্জন করেছেন ইসরাইলের নাগরিকরা। ফিলিস্তিনিদের দুর্বিষহ সে জীবনের কথা কি তারা এবার উপলব্ধি করবেন? যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহুকে কি তারা ক্ষমতায় রাখবেন? নাকি নতুন অভিজ্ঞতায় মেনে নেবেন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে?