নানাভাবে চেষ্টা করা সত্ত্বেও দেশের পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে না। হঠাৎ হঠাৎ পুঁজি বাজারে শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি এবং হ্রাস ঘটছে। যে কোনো দেশের পুঁজি বাজারে অস্থিতিশীলতা বা অনিশ্চয়তা লক্ষ্য করা যায়। পুঁজি বাজারের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হচ্ছে অনিশ্চয়তা। তবে তা বাংলাদেশের পুঁজি বাজারে যে অস্থিতিশীলতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে তা আর কোনো দেশে লক্ষ্য করা যায় না। একটি শক্তিশালি মহল নানাভাবে পুঁজি বাজারকে প্রভাবিত করে নিজস্ব ফায়দা লুটে নিচ্ছে। কিন্তু এ মহলের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়না। কারণ যারা পুঁজি বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে তৎপর রয়েছেন তারা কোনো না কোনো ভাবে সরকারের ছত্র ছায়ায় থাকেন। এমনকি সরকার পরিবর্তন হলেও তাদের কোনো অসুবিধা হয় না। কারণ তারা পরিবর্তিত সরকারকেও ম্যানেজ করে ফেলতে পারেন।
১৯৯৬ এবং ২০১০ সালে দেশের পুঁজি বাজার ধ্বংসের জন্য যে ব্যক্তিটি সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে মনে করা হতো সে ব্যক্তিটিই বিগত সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছিলেন। তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েই দেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে ধ্বংসের তৎপরতায় লিপ্ত হন। আর পুঁজি বাজারের অভ্যন্তরে একটি শক্তিশালী মহল রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে প্রায়শই দুর্নীতি এবং মার্কেট ম্যানিপুলেট করার অভিযোগ উত্থাপিত হয় কিন্তু সরকারিভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। পুঁজিবাজারের অবস্থা উন্নয়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে ৫টি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যেসব বিদেশি কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার রয়েছে সেগুলো দ্রুত পুঁজি বাজারে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার মাধ্যমে বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানাধীন যেসব কোম্পানি রয়েছে তাদের পুঁজি বাজারে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। পুঁজিবাজারে ভালো ভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের অভাব রয়েছে। পুঁজি বাজারের অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি ভালো কোম্পানির শেয়ার নিয়ে আসা গেলে বিনিয়োগকারিদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। বিগত সরকার আমলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ২৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে নিয়ে আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি। রাষ্ট্র কখনোই ভালো উৎপাদনকারী হতে পারে না। রাষ্ট্র উৎপাদন কার্যে যুক্ত হলে করাপশন বাড়ে। তাই একান্ত প্রয়োজন না হলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার বাজারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে।