চাতুর্য ও শঠতার চাষাবাস বেশি হচ্ছে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায়। যেসব গুণে মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়, সেসব গুণের চর্চা এখন কমই হয়। ফলে অবয়বের মানুষের সংখ্যাই পৃথিবীতে বেশি। প্রবৃত্তির তাড়নায় এরা বেশ গতিশীল এবং প্রাণবন্ত। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য চর্চায় এরা বেশ পটু। সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থায় নানা ক্ষেত্রে, নানা পর্যায়ে এদের অবস্থান চোখে পড়ার মত। বলা যায়, এ ঘরানার মানুষরা এখন হর্তা-কর্তার আসনেও অধিষ্ঠিত। কিছু ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয়, তবে ব্যতিক্রম তো ব্যতিক্রমই। আমরা জানি, লোভের পরিণাম কখনো ভালো হয় না। অবশ্য বর্তমান সভ্যতায় লোভের চর্চা এবং এর আদান-প্রদান বেশ পরিশীলিত ও বর্ণাঢ্যভাবে হয়। অনেক সময় এর পরিবেশনটা এমন নান্দনিবকভাবে হয় যে, তখন লোভকে লোভ বলতে কিংবা ঘুষকে ঘুষ বলতে কন্ঠে কম্পন সৃষ্টি হয়। তবে এতকিছুর পরও লোভ তো লোভই, ঘুষ তো ঘুষই। রূপের তারতম্যের কারণে শব্দের ব্যুৎপত্তিতে তো পরিবর্তন ঘটবে না। তবুও অনেক সময় ধাঁধার দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে বড় বড় দেশ ও বড় বড় ব্যক্তির ক্ষেত্রে এসব ঘটে যায়। আবার উচিত কথনও শ্রবণ করা যায়।

প্রতিবেদনটির শিনোম ‘ট্রাম্পকে কাতারের উপহার নিয়ে যা বললেন হিলারি।’ ১৮ মে মুদ্রিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বিলাসবহুল বিমান (বোয়িং জেট) উপহার হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন দেশটির ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। হিলারি গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লেখেন, কেউ ৪০০ মিলিয়ন (৪০ কোটি) ডলারের একটি উড়োজাহাজ বিনামূল্যে কাউকে দেয় না। এর বিনিময়ে কিছু না কিছু প্রত্যাশা অবশ্যই থাকে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে বলেছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি। কাতারের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে ট্রাম্পকে ব্যবহারের জন্য ৪০ কোটি ডলার মূল্যের একটি বোয়িং ৭৪৭-৮ উড়োজাহাজ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ট্রাম্পের ওই উপজার গ্রহণ এবং বর্তমান এয়ারফোর্সে ওয়ানের পরিবর্তে সেটি ব্যবহারের পরিকল্পনার খবর ক্যাপিটল হিলে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের বহনে ব্যবহৃত সরকারি উড়োজাহাজকে ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’ বলা হয়। মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতারা ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তারা একে দুর্নীতির প্রমাণ বলেও উল্লেখ করেন। এ সপ্তাহে নয়জন ডেমোক্রেটিক সিনেটর পেন্টাগণকে প্রেসিডেন্টের ওই উড়োজাহাজ গ্রহণের সম্ভাব্য পরিকল্পনা এবং এতে প্রতিরক্ষা বিভাগের ভূমিকা কী হবে তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও কথা আছে। ট্রাম্প কাতারের উপহারের উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহার এবং প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেটি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের জন্য রেখে দেওয়ার কথা বলেছেন বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছেন। ট্রাম্পের এমন ইচ্ছার ব্যাপারে তার দলের কয়েকজন সিনেটরও আপত্তি তুলেছেন। উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টকে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ব্যবহার করা সবকিছু প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরিতে হস্তান্তর করতে হয়। ট্রাম্প কি করবেন সেটাই দেখা বিষয়।