নেতানিয়াহুর সরকার ইসরাইল নামক রাষ্ট্রটিকে বিশ্বের শীর্ষ ঘৃণিত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এখন ইসরাইলি সেনা সদস্য এবং কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন যে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশেই ত্রাণ নিতে আসা ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলের প্রভাবশালী হারেৎজ পত্রিকা কয়েকজন সেনা সদস্য ও কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে শুক্রবার একথা জানিয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ থেকে গাজায় সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরাইলি বাহিনী। অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল পরিচালিত তথাকথিত ‘গাজা মানবিক ফাউণ্ডেশন’ (জিএইচএফ) দক্ষিণাঞ্চলীয় কয়েকটি জায়গায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করে। বিতর্কিত এ সংস্থাটির ত্রাণ নিতে গিয়ে গত চার সপ্তাহে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে অন্তত ৫৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজা সরকারের গণমাধ্যম দফতর জানিয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৬ জন।

গাজার বাসিন্দারা বলেছেন, জিএইচএফ-এর এসব ত্রাণকেন্দ্র এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ত্রাণ সংস্থাগুলোর মতে, ফিলিস্তিনিদের সামনে এখন দু’টি পথ- হয় না খেয়ে মরবে, না হয় খাবার আনতে গিয়ে মরবে। জিএইচএফ নিয়ে শুরু থেকেই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা সন্দেহ প্রকাশ করছিল। কারা এ সংস্থা চালায়, কারা অর্থ দেয়, কেন চালায়-কোনো কিছুই পরিষ্কার নয়। অনেকেই বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইসরাইলই এ ত্রাণ সংস্থা চালাচ্ছে, যাতে তারা ত্রাণের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রেখে গাজার বেতরে ঢোকার সুযোগ পায়। হারেৎজ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রাণকেন্দ্রে নিহত ব্যক্তিদের সবাইকে গুলি করেছেন ইসরাইলি সেনারা। আর গুলি চালাতে সেনাদের সরাসরি আদেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে যুদ্ধাপরাধ ঘটেছে কিনা, তা তদন্ত করতে সেনাবাহিনীর আইন শাখা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্র্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এ যে আহ্বান, এটা কি সত্যানুসন্ধানের আহ্বান, নাকি আন্তর্জাতিক মহলকে প্রবোধ দেওয়ার কোনো কৌশল, সে ব্যাপারে পর্যবেক্ষকদের সন্দেহ রয়েছে।

এক ইসরাইলি সেনা বলেন, ‘এটি যেন এক হত্যার জায়গা। আমি যেখানে ছিলাম, সেখানে প্রতিদিন এক থেকে পাঁচজন মারা যেতেন’। ওই সেনা সদস্য আরও বলেন, ‘ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর এমনভাবে গুলি চালানো হয়, যেন তারা আমাদের আক্রমণ করছেন। আমরা দাঙ্গা দমন করার অস্ত্র ব্যবহার করি না, কাঁদানে গ্যাস ছুড়ি না। আমরা শুধু ভারী মেশিনগান থেকে গুলি করি, গ্রেনেড বা মর্টারের গোলা ছুড়ি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ওদের সঙ্গে কথা বলি গুলির মাথ্যমে।’ ত্রাণকেন্দ্রে গুলি করে মানুষ মারার যে সাক্ষ্য ইসরাইলি সেনা দিলেন তা শুধু ভয়াবহ নয়, অবিশ্বাস্যও বটে। এরা নিজেদের ইহুদি দাবি করে। ইহুদিদের তো ধর্মগ্রন্থ আছে। ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাসী মানুষ কি ত্রাণপ্রার্থীদের এভাবে হত্যা করতে পারে? এরা আসলে ধর্মবোধ ও মানবিকবোধ শূন্য কিছু বিকৃত মানুষ। নৃশংস ও চক্রান্তমূলক আচরণের জন্য ইতিহাসের পাতায় এরা অভিশপ্ত জাতি হিসেবে পরিচিত। এখন ইসরাইলের নেতানিয়াহু সরকার যে বাড়াবাড়ি করছে, তার পরিণাম পতন ছাড়া আর কিছু নয়।