আমাদের রাজনীতি কখন প্রকৃত রাজনীতি হয়ে উঠবে? কখন দেশ ও জনতার স্বার্থ রক্ষায় নৈতিকভাবে ভূমিকা নিতে সক্ষম হবে? রাজনীতিতো দলবাজির বিষয় নয়, ব্লেমগেমের বিষয় নয়। বক্তৃতার মঞ্চে তো অনেকেই বলে থাকেন-ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায়, বিশেষ করে নির্বাচনের সময় এসব কথার কোনো মূল্য থাকে কী? বরং তখন দেশের চাইতে দল বড় হয়ে ওঠে এবং দলের চাইতে বড় হয়ে ওঠে ব্যক্তি। আখেরে ব্যক্তি বাহাদুরকে যে কোনভাবে বিজয়ী হতে হবে! মানুষ আশা করেছিল, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে এবং রাজনীতিবিদদের বক্তব্যে, আচার-আচরণে তার প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে। কিন্ত সে আশার গুড়ে বালি। জুলাই বিপ্লবী ওসমান হাদিকে হত্যা প্রচেষ্টার পর, এখন এ ইস্যুটিকে নিয়ে যে দলীয় রাজনীতি হচ্ছে তা শুধু দুঃখজনক নয়, গর্হিতও বটে।
ওসমান হাদি এখনো শঙ্কামুক্ত নন, অথচ তাকে ঘিরে এখন ফেসবুক স্ট্যাটাসে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজনীতিবিদরা একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, প্রতিপক্ষকে ছোট করার চেষ্টা করছেন। হুমকি-ধমকির ভাষাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে ফ্যাসিস্টবিরোধী রাজনীতির কোনো উপকার না হলেও লাভ হচ্ছে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তার দোসরদের। তারা নতুন কৌশলও অবলম্বন করছে। এআই জেনারেটেড ছবি ও ভুয়া তথ্য দিয়ে তারা গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে বিভেদের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। তারা নিজেরাই দু’পক্ষের প্রতিনিধি সেজে হিংসাত্মক বক্তব্য ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং বিভ্রান্তির মাত্রা বৃদ্ধি করছে। বিষয়টি খুবই মারাত্মক। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সাথে জড়িত দলগুলো বিষয়টি উপলব্ধি করে সংযত ও সতর্ক না হলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা বহু আকাক্সিক্ষত জাতীয় নির্বাচন ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এখন নিজেদের আচরণের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে, দলের চাইতে দেশ বড়।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, আমাদের রাজনীতিবিদদের অনেকেই এখনো বক্তৃতা-বিবৃতি ও আচার-আচরণে তেমন সতর্ক নন। পুরনো স্টাইলেই তারা চলছেন। প্রসঙ্গত এখানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কথা উল্লেখ করা যায়। ১৩ ডিসেম্বরে এক সমাবেশে ওসমান হাদি ইস্যুতে তিনি বলেন, এটা সুপরিকল্পিত একটি বিষয়। হামলাকারী হিসেবে যাকে শনাক্ত করা হয়েছে, সে ছাত্রলীগ নেতা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি সাদেক কায়েমের সঙ্গে একই টেবিলে চা খাচ্ছে সে। এখন এর বিচার কে করবে? রিজভী এক পর্যায়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কশিনারের বরাত দিয়ে একটি বক্তব্য উল্লেখ করেন, যেখানে হাদির ওপর হামলাকারীর সঙ্গে সাদিক কায়েমের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। পরে ডিএমপি কমিশনার রিজভীর বক্তব্যকে সম্পূর্ণ ভুয়া ও এআই দিয়ে তৈরি ছবিনির্ভর বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন। এ ঘটনার পর সাদিক কায়েম আনুষ্ঠানিকভাবে রিজভীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি তোলেন। সাদিক কায়েম ফেসবুকে বলেন, আওয়ামী প্রোপাগাণ্ডা সেল কর্তৃক প্রচারিত এআই জেনারেটেড ছবিকে সত্য ধরে নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতা রুহুল কবীর রিজভী ওসমান হাদির হত্যা চেষ্টাকারীদের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে যে অপতথ্য ছড়িয়েছেন, তা কোনোভাবে প্রত্যাশিত দায়িত্বশীল আচরণ নয়। এ বিষয়ে তিনি রিজভীকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। রিজভী তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, এআই জেনারেটেড ছবি ও ভুয়া তথ্য যাচাই না করেই তিনি বক্তব্য দিয়েছিলেন। উপলব্ধির জন্য রিজভীকে ধন্যবাদ। অন্যরাও এ থেকে শিক্ষা নিলে আমাদের রাজনীতি উপকৃত হবে।