DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

সম্পাদকীয়

ভোটার বাড়াতে কেন বাইরের অর্থ

বড় বড় দেশগুলো বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক কিছুই করে থাকে। নির্বাচনে ভোটার বাড়াতে অর্থ খরচও করে। এমন কথাই তো বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

Printed Edition

বড় বড় দেশগুলো বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক কিছুই করে থাকে। নির্বাচনে ভোটার বাড়াতে অর্থ খরচও করে। এমন কথাই তো বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার মিয়ামিতে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ভারতের নির্বাচনে ভোটের হার বাড়াতে তার দেশ ২ কোটি ১০ লাখ ডলার খরচ করেছে। ট্রাম্পের এমন দাবির পর ভারতের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয় অন্য কাউকে নির্বাচিত করার জন্য চেষ্টা হয়েছিল। আমাদের ভারত সরকারকে জানানোর অনেক কথা রয়েছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের এক সপ্তাহের মাথায় এমন দাবি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর আগে ইলেন মাক্সের নেতৃত্বাধীন ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি-ডিওজিই-এর পক্ষ থেকে গত রোববার জানানো হয়, আমেরিকা সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে সহায়তার জন্য অর্থ বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন দেশে নির্বাচন কাঠামো ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে ৪৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের অর্থ বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। ভারতে নির্বাচনে ভোটদান বাড়াতে ২ কোটি ১০ লাখ ডলারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে আমেরিকার দিক থেকে এর পক্ষে কোন প্রমাণ সরবরাহ করা হয়নি।

ভারতের নির্বাচনে ভোটার বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ প্রদানের বিষয়টি কি খুব সরলভাবে নেওয়া যায়? একটি দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্য দেশ অর্থ সরবরাহ করবে কেন? এরপর প্রশ্ন আসতে পারেÑকে কাকে অর্থ দিল, সে অর্থ কিভাবে খরচ হলো? এখানে স্বচ্ছতার বিষয়টিও খুবই প্রাসঙ্গিক। এদিকে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি, কথিত এ অর্থ সরবরাহকে ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ’ দাবি করে এর জন্য বিরোধী দল জাতীয় কংগ্রেসকে অভিযুক্ত করেছে। তবে ট্রাম্পের দাবিকে ‘অর্থহীন’ দাবি করে কংগ্রেস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। উল্লেখ্য যে, আমেরিকার অর্থনীতি সবল করার লক্ষ্যে ট্রাম্প ইলন মাস্ককে দায়িত্ব দিয়ে ডিওজিই প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অপ্রয়োজনীয়’ খরচ কমানো ও চাকরি বাতিলের কাজ করা হচ্ছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিজেপি নেতা অমিত মালব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর একটি ভিডিও শেয়ার করে তার পোস্টে বলেন, ‘লন্ডনে রাহুল গান্ধী আমেরিকা থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিদেশি শক্তিগুলোকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছেন।’ কগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ভারত সরকার মোদির আমলে আমেরিকা প্রদত্ত সব ধরনের সহায়তার তথ্য প্রকাশের ব্যবস্থা করুক।

ভারতের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মার্কিন অর্থ সংযোগের বিষয়টি নিয়ে বোলচাল এক রকম নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য এক রকম, বিজেপি এবং কংগ্রেসের বক্তব্যেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে ভিন্নতা। বিষয়টায় আসলে ‘পলিটিক্স’ ঢুকে গেছে। কারো বক্তব্যই তেমন সরল নয়। এখানে বলার মত বিষয় হলো, মার্কিন অর্থ শুধু ভারতে নয়, ছোট ছোট আরও বহু দেশে গেছে। প্রশ্ন হলো, একটি দেশে নির্বাচন হবে, সেখানে ভিন্ন দেশ অর্থ দিতে যাবে কেন? আর হাত পেতে সে অর্থ নিতে যাবে কেন গ্রহীতা দেশ। এমন হলে তো জিজ্ঞেস করতে হয়, অর্থ গ্রহীতা দেশের নির্বাচন করার আদৌ যোগ্যতা আছে কি? কথিত এ অর্থ প্রদানকে বিজেপি ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছে। মন্তব্যটা ভালোই হয়েছে। অর্থাৎ বিজেপি মার্কিন অর্থ নেবে না। কংগ্রেস নেবে কি? তাহলে তো নির্বাচনে ভোটার বাড়ানোর কাজে মার্কিন অর্থ সরবরাহের কোনো প্রয়োজনই নেই। ফলে বলা চলে, ট্রাম্প প্রশাসন অর্থ বরাদ্দ বাতিল করে ঠিক কাজই করেছেন। এতে মার্কিন অর্থনীতি সবল হবে এবং ‘হস্তক্ষেপ’-এর অভিযোগ থেকেও বাঁচা যাবে। আমরা মনে করি, প্রত্যেকটি স্বাধীন দেশেরই আত্মমর্যাদা থাকা প্রয়োজন। যে ভোটের মাধ্যমে দেশের সরকার নির্বাচিত হবে, সেখানে বিদেশের অর্থ সংযোগ ঘটবে কেন? অনেক সময় অর্থের সাথে অনর্থও যোগ হয়ে যায়। এ কারণেই হয়তো মার্কিন অর্থ নিয়ে এখন বিতর্ক চলছে ভারতে। বিষয়টি থেকে অন্য দেশেরও শেখার বিষয় আছে।