বহু মানুষের প্রাণের বিনিময়ে গত বছর ৫ আগস্ট আমরা স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু জুলাই আন্দোলনে নিহতদের হত্যার বিচার এখনো হয়নি। আশার কথা জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞের বিচারকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দৈনিক সংগ্রামসহ পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের বিচার দ্রুত শেষ করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এরই মধ্যে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত একাধিক মামলার অভিযোগ গঠন ও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনাসহ কয়েকটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ এসব বিচারকার্য চলছে। তবে মূল ভবনের সংস্কারকাজ শেষ না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল-২ আপাতত টিনশেড ভবনে পরিচালিত হচ্ছে।
খবরে বলা হয়েছে, গত ২ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞের বিচারকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ইতিমধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সন্তোষজনকভাবে এগোচ্ছে। প্রয়োজনে বিচার কার্যক্রম আরও দ্রুত শেষ করতে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-৩ গঠন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এ সময় আইন উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকারের হত্যা, গুম, নির্যাতনসহ সব ধরনের অপরাধের বিচারের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইন উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন সংলগ্ন টিনশেড ভবন খালি হয়ে গেলে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-৩ গঠন করতে পারি। এটি করা গেলে গুমসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার কাজ দ্রুত করা যাবে। তিনি আরো বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে বেশ আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন আমাদের বিচারকসহ প্রসিকিউশন ও তদন্ত টিম। আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশের ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে আমাদের যে ন্যায়বিচার আছে, আইনের শাসন আছে ও মানবাধিকার আছে এটাকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বার্থে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এক হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং হাজারও মানুষকে পঙ্গু করার ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার অপরিহার্য-অনিবার্য। সে বিচারকার্যের প্রথম থেকেই আমরা অবিচল আছি। বিচারের যে গতি আছে সেটা নিয়েও আমরা সন্তুষ্ট আছি। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন আজ পরিদর্শন করেন। এ সময় তাদের সাথে অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে। আর বিচারের কাজে গতি আসছে না বলে অনেকে মনে করেন।
আমার মনে করি আইন উপদেষ্টা গণমানুষের কণ্ঠের প্রতিধ্বনি করেছেন। ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের হত্যাকারীদের বিচারের ক্ষেত্রে ট্রাইবুনাল বাড়ানো ছাড়া গত্যন্তর নেই। এই কাজটি আরো আগে হওয়া উচিৎ ছিল। শেষ পর্যন্ত অন্তবর্তী সরকার সেই দিকেই অগ্রসর হচ্ছেন, আইন উপদেষ্টার কথায় সেটা স্পষ্ট হয়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে আমরা অনুরোধ জানাই। আমরা মনে করি বিচার কাজে গতি আনতে সরকারের যা যা প্রয়োজন তা করা উচিৎ। সম্পূর্ণ বিষয়টির প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস ও তার অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্ব দেবেন বলেই আমরা আশাবাদী।