আল-জাজিরা জানায়, ইসরাইলের কঠোর অবরোধ ও অব্যাহত হামলায় প্রয়োজনের চেয়ে কম খাবারে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে গাজার বাসিন্দাদের। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে মানবিক সহায়তা দেয়া সংগঠনগুলো জানিয়েছে, একবেলার প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাবারের চেয়েও কম খেয়ে থাকছে গাজার শিশুরা। সংগঠনগুলো জানায়, যুদ্ধের কারণে পুরো গাজায় ত্রাণ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ত্রাণ সংস্থা অক্সফামের পলিসি হেড বুশরা খালিদি জানিয়েছেন, একবেলা খাবারের চেয়ে কম খাচ্ছে শিশুরা এবং পরবর্তী খাবারের জন্য তাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেককেই টিনজাত খাবার খেতে হচ্ছে। পুষ্টিহীনতা ও দুর্ভিক্ষ গাজাকে ছেয়ে ফেলেছে।’ দাতব্য সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডার-এর গাজা বিষয়ক জরুরি সমন্বয়ক আমান্ডে ব্যাজেরল বলছেন, খাবারের অভাবে নারী ও শিশুসহ মানুষের কষ্ট ও মারা যাওয়া দেখতে বাধ্য হচ্ছেন ত্রাণ সরবরাহকারী কর্মীরা। তিনি বলেন, ‘এটি কোনো মানবিক বিপর্যয় নয়, এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও মানুষের বেঁচে থাকার সক্ষমতার ওপর দায় মুক্তির সঙ্গে স্বেচ্ছায় হামলা।’ গাজার বাসিন্দা ফাদি আহমদ আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, পুষ্টিহীনতার কারণে তাঁর ছেলেকে হারিয়েছেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলের ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ হয়েছিল। ফলে তার রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হয়। ইনতিসার হামদান নামের এক বৃদ্ধা জানান, নাতির জন্য তিন দিনেও কোনো দুধ জোগাড় করতে পারেননি তাঁরা। ফলে তাঁর নাতি মারা গেছে। এমন পরিস্থিতির জন্য কি শুধু ইসরাইল দায়ী, নাকি আর কারও দায় আছে?
আল জাজিরা জানিয়েছে, জাতিসংঘের খাদ্য অধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি মাইকেল ফাখরি বলেছেন, গাজায় অনাহার ও গণহত্যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িত। শনিবার আল জাজিরার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। ফাখরি বলেন, অঞ্চলটির বেসামরিক লোকদের অনাহারের জন্য ওয়াশিংটন দায়ী? তিনি বলেন, ‘গত এক মাসেই শিশুদেই তীব্র পুষ্টিহীনতা বেড়েছে ৮০ ভাগ। আলোচনার জন্য তারা শিশুদের জীবন ও হাজার হাজার লোকের মৃত্যুকে ব্যবহার করছে।’ ফাখরি বলেন, এজন্য ইসরাইলকে দায়মুক্তি দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই কোনো রাজনৈতিক অজুহাত দিয়ে বেসামরিক লোকদের জন্য মানবিক ত্রাণ আপনি বন্ধ করতে পারেন না।’ গাজায় ইসরাইলী বাহিনী ৫০ দিনের বেশি সময় ধরে খাবার, পানি ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বলে জানান ফাখরি। তিনি বলেছেন, ‘২০২৪ সালের জানুয়ারি ও মার্চে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত নিশ্চিত করে যে, গণহত্যার জেরে গাজায় অনাহার ও দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, বেসামরিক লোকদের জন্য কোনো পরিস্থিতিতেই মানবিক ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করার সুযোগ নেই। সুতরাং ইসরাইল স্বীকার করে নিচ্ছে যে, এটি বেসামরিক নাগরিকদের দেয়া মানবিক সহায়তাকে চাপ প্রয়োগের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।’ উপলব্ধি করা যায়, কি কারণে ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইনকানুন ও মানবাধিকার লংঘনের সাহস পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র যে ইসরাইলকে দায়মুক্তি দিয়ে রেখেছে। ফলে ইতিহাসের কাঠগড়ায় শুধু ইসরাইল নয়, দাঁড়াতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকেও। বিষয়টি কি ট্রাম্প মহাশয় একটু ভেবে দেখবেন?