গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাড়িবহরে ও সমাবেশে হামলার দুঃখজনক ঘটনা সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) সমাবেশকে ঘিরে রণক্ষেত্র হয়েছে। দলটির পূর্ব নির্ধারিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ উপলক্ষে গত বুধবার দুপুরে সমাবেশ শেষ করার আগেই নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ দলটির অঙ্গ সংগঠনের সশস্ত্র শত শত নেতা-কর্মী সংঘবদ্ধ হয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। সাংবাদিক ও পুলিশসহ আহত হয়েছেন কয়েকশ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ আরও অনেকে। রাত সাড়ে ৮টা থেকে আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।
দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করতে বুধবার গোপালগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করেন এনসিপির নেতাকর্মীরা। সমাবেশ শেষ করে ফেরার পথে কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহরে হামলা চালায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ মঞ্চে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেখানে চেয়ার ভাঙচুর করে।
আমরা মনে করি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করতেই নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ তথা পতিত স্বৈরাচার এ জঘন্য কাজ করেছে। এ কাজের মধ্য দিয়ে তারা আগামী দিনের আওয়ামী মুক্ত বাংলাদেশকে সংকটে ফেলতে চায়। এই ঘটনাকে কোনক্রমেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। একটি দলের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী ভন্ডুল করা বা হামলা করা কোনক্রমেই গণতান্ত্রিক আচরণ নয়।
আমরা আরো দেখতে পেয়েছি সবাই একবাক্যে তার প্রতিবাদ ও নিন্দা করেছে। প্রতিবাদে উত্তাল সারাদেশ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ব্লকেডসহ নানা কর্মসূচী পালিত হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেছেন। তাদের এই দাবির প্রতি আমরাও একাত্মতা প্রকাশ করি।
জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক সংগঠন এনসিপির কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার নামে গোপালগঞ্জে যা হয়েছে তা লজ্জাজনক। একই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের ব্যর্থতাও লজ্জাজনক। অভ্যুত্থানের নেতারা গোপালগঞ্জে গেলে সেখানে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে এমনটা তাদের অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু প্রশাসন তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করতে আমরা অনুরোধ জানাই। কোন ব্যত্যয় রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতেও অনুরোধ জানাই।
আশার কথা, এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে তরুণদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে বাধা দেয়া তাদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।
গোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষে ফেরার পথে এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে হামলা ও সহিংসতার ঘটনা অগ্রহণযোগ্য। বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মী, পুলিশ এবং গণমাধ্যমের ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। সহিংস আক্রমণ ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ কর্মীরা এই হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করা হবে। এতে আরও বলা হয়, সেনাবাহিনী এবং পুলিশের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রশংসা করছি। পাশাপাশি হুমকি সত্ত্বেও সমাবেশ চালিয়ে যাওয়াদের সাহসেরও প্রশংসা করছি। শেষে বলা হয়, এ সহিংসতায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
বাংলাদেশে সহিংসতার কোনও স্থান নেই। ন্যায়বিচার অবশ্যই জয়ী হবে। আমরা মনে করি অন্তর্বর্তী সরকারের এই প্রতিশ্রুতি যাতে পালিত হয় তার ব্যবস্থা উপদেষ্টা পরিষদকে নিতে হবে। আর তা করতে হবে জাতির স্বার্থে।