গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতার সাক্ষী পুরো পৃথিবী। এমন অপরাধের উপযুক্ত বিচার প্রয়োজন, প্রয়োজন শাস্তির। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যথাযথ তদন্ত। জেরুসালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গাজায় ইসরাইলের নৃশংসতা তদন্তে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে গাজা সরকারের গণমাধ্যম দপ্তর। একই সঙ্গে নৃশংসতার জন্য ইসরাইলি নেতাদের জবাবদিহির আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়েছে। গত শুক্রবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গণমাধ্যম দপ্তরের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতা এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুদ্ধ শেষে বিধস্ত গাজা পুনর্গঠনের নিশ্চয়তার বিষয়টি। বিবৃতিতে আল-থাওয়াবতা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ এবং সব আন্তর্জাতিক আইনগত প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে ইসরাইলি নেতাদের শাস্তি প্রদান করার আহ্বান জানাই। এছাড়া তাদের কোনো আইনগত বা রাজনৈতকি দায়মুক্তি যেন না দেওয়া হয়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘আমরা আহ্বান জানাই-একটি আন্তর্জাতিক, স্বাধীন কমিশন গঠনের জন্য; যা যুদ্ধাপরাধ ও জাতিগত নিধনের বিষয়টি তদন্ত করবে এবং সব বাস্তুচ্যুতকে প্রত্যাবর্তন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করবে।’
উল্লেখ্য, গত বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ান জারি করেন। অভিযোগের মধ্যে ছিল, যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহার করার বিষয়টিও। কিন্তু নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট এখনো মুক্ত অবস্থায় আছেন। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ গাজায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সত্ত্বেও ইসরাইলের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। যদিও ওইসব দেশের জনগণ যুদ্ধাপরাধী ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য, ইসরাইল তার সামরিক অভিযানে গাজার অধিকাংশ এলাকাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে, যা শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জাতিগত নিধন হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
শুক্রবার মধ্য গাজার নুসেইরাত এলাকা থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানান, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পায়ে হেঁটে উত্তর গাজায় নিজেদের ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। এসব ফিলিস্তিনিদের বেশির ভাগকেই বোমাবর্ষণের মধ্যে ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য করা হয়েছিল। এখন তারা হাসিমুখে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন, কিন্তু ফিরে কিছুই আর খুঁজে পাবেন না। গত কয়েক সপ্তাহে ইসরাইলি বাহিনী পুরো আবাসিক এলাকাগুলো উড়িয়ে দিয়েছে ও ধ্বংস করেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার আগে ইসরাইল গাজা শহরে স্থল অভিযান চালাচ্ছিল, যার লক্ষ্য ছিল নগর এলাকার অবশিষ্ট অংশ সম্পূর্ণ সমতল করে দেওয়া। গাজাজুড়ে ব্যাপক ধ্বসংযজ্ঞের ফলে এখন সেখানে নির্মাণসামগ্রী, যন্ত্রপাতি এবং অস্থায়ী আশ্রয়ের তীব্র প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ বছরের শুরুতে ৬০ দিনের এক যুদ্ধবিরতির সময়ও ইসরাইল গাজায় পুর্নগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রবেশে বাধা দিয়েছিল। এরপর মার্চ মাসে আবার একতরফাভাবে যুদ্ধ শুরু করে ইসরাইল।
যুদ্ধবিরতির বর্তমান সময়ে গাজা সরকারের গণমাধ্যম দপ্তরের প্রধান আল-থাওয়াবতা বলেন, ‘অবরোধ শেষ করতে হবে, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে হবে। যুদ্ধবিরতির এ সময়ে এমন দাবি খুবই প্রাসঙ্গিক বলে আমরা মনে করি। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় সবার চোখের সামনে একটি জনপদকে ধ্বংস করা হলো, ফিলিস্তিনের ভূমিপুত্রদের দেশ থেকে উচ্ছেদ করা হলো, হত্যাযজ্ঞ চালানো হলো-এর কি কোনো প্রতিকার হবে না? গাজায় এখন ফিলিস্তিনিরা ফিরে আসছে, অবরোধ তুলে এখন সেখানে সৃষ্টি করতে হবে মুক্ত পরিবেশ। ধ্বংসস্তূপে গড়ে তুলতে হবে নতুন আবাসন এবং প্রয়োজনীয় বিভিন্ন স্থাপনা। মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে হবে ফিলিস্তিনের। গাজায় নৃশংসতা, উচ্ছেদ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার কাম্য বিশ্ববাসীর; যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এমন আগ্রাসন ও যুদ্ধাপরাধ চালানোর সাহস না পায়। তবে এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হবে যথাযথ তদন্তের। বর্তমান সভ্যতা যেন এ কাজে ব্যর্থ না হয়।