খাগড়াছড়ির কথিত ধর্ষণের ঘটনাকে পুঁজি করে পাহাড়কে অশান্ত করার পরিকল্পনা করেছে কোন কোন মহল। গত কয়েক দিনে পরিস্থিতি যথেষ্ট ঘোলা করার চেষ্টা করা হয়েছে। অবশেষে যা জানা যাচ্ছে তা হচ্ছে ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের কোন আলামতই পাওয়া যায়নি। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষার পর প্রতিবেদন জেলা সিভিল সার্জনের কাছে জমা দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। সেখানে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত মেলেনি বলে জানানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ছাবের আহম্মেদের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, সিভিল সার্জনের কাছে জমা দেওয়া ওই প্রতিবেদনে ধর্ষণের পরীক্ষার ১০টি সূচকের সব কটিতে স্বাভাবিক লেখা রয়েছে। এর অর্থ ধর্ষণের কোনো আলামত নেই। ধর্ষণের আলামত পরীক্ষায় তিন চিকিৎসক দলের নেতৃত্ব দেন খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ জয়া চাকমা। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন, নাহিদা আকতারসহ আমরা তিনজন এ কমিটিতে ছিলাম। প্রতিবেদনটি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জমা দিয়েছি। প্রতিবেদনে কী রয়েছে, বিষয়টি ওনারা জানাবেন।’ গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে কথিত ধর্ষণের জের ধরে রবিবার গুইমারায় সহিংসতায় তিনজন নিহত এবং সেনা কর্মকর্তাসহ কয়েকজন আহত হন। গুইমারায় পুড়িয়ে দেওয়া হয় রামসু বাজারসহ বহু ঘর-বাড়ি ও অফিস।

আমরা মনে করি আবেগকে পুঁজি করে নিছক একটি অভিযোগের ভিত্তিতে যে সব ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিন জনের মৃত্যসহ নিরাপত্তা বাহিনির সদস্যদের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তা দুঃখজনকই নয় নিন্দনীয়। এটা নিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার যে কোন অপচেষ্টা রোধ করা প্রয়োজন।

দৈনিক সংগ্রামে মঙ্গলবার প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিওন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ বলেছেন, খাগড়াছড়ির ধর্ষণের ঘটনাকে পুঁজি করে পাহাড়কে অশান্ত করার পরিকল্পনা করেছে ইউপিডিএফ। এর রেশ তিন পার্বত্য জেলায়ও পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি অভিযোগ করেছেন, ধর্ষণের ঘটনাকে পুঁজি করে সাধারণ পাহাড়ি নারী ও কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের সামনে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে ইউপিডিএফ। এসব কর্মসূচিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে দেশীয় ও অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে ফায়ার করা হচ্ছে। নানা অপপ্রচার ও উস্কানি সত্ত্বেও সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও অবিচ্ছেদ্য অংশ রক্ষায় সবকিছু করবে বলেও অঙ্গীকার করেছেন রিজিয়ন কমান্ডার। ইউপিডিএফকে দেশের স্বার্থে অবরোধ তুলে নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আমরা মনে করি উক্ত সেনা কর্মকর্তার এ বক্তব্য ও পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার প্রণিধানযোগ্য ও প্রশংসনীয়। যারাই অস্থিতিশীলতা তৈরির অপচেষ্টা চালাক না কেন তা রোধ করা জরুরি বলেও আমরা মনে করি।

এদিকে আরেক খবরে জানা যাচ্ছে, চার দিনের জন্য চলমান অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছে খাগড়াছড়ির জুম্ম ছাত্র-জনতা। শারদীয় দুর্গোৎসবকে সম্মান জানিয়ে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত ৮ দফা দাবির বাস্তবায়নের আশ্বাসের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় সংগঠনটির ফেসবুক পেইজে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান অবরোধ আজ রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। আমরা জুম্ম ছাত্র জনতার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।