ফিলিস্তিনের গাজায় ২ বছরের ইসরাইলী বর্বরতার পর অবশেষে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হয়েছে। বিশ্ববাসী এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। আমরাও স্বাগত জানাই। দৈনিক সংগ্রাম জানায়, স্থানীয় সময় বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেন। ইসরাইল ও হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এ চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্প জানান, চুক্তির অধীনে সব জিম্মিদের শিগগিরই মুক্তি দেয়া হবে এবং ইসরাইল তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি গর্বিত যে ইসরাইল ও হামাস উভয়েই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সই করেছে। এটি আরব ও মুসলিম বিশ্ব, ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। তিনি আরও বলেন, গাজা পুনর্নির্মিত হবে, মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে চলবে একটি নতুন বিশ্ব শুরু হবে।

গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসনের দু’বছরে আর্থিক ক্ষতি ৬৮০০ কোটি ডলার, নিহত ৬৭ হাজার ও আহত কয়েক লাখ ফিলিস্তিনী। ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক দল হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ফলে রাতেই আনন্দ মিছিল বের করেন গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের বাসিন্দারা। কিশোর তরুণরা বাঁশি-খঞ্জনি-ড্রাম বাজিয়ে, নেচে গেয়ে উল্লাস শুরু করেন। অন্যদিকে ইসরাইলের তেলআবিব শহর থেকেও পাওয়া গেছে আনন্দ উদযাপনের সংবাদ। চুক্তির বিষয়ে হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা এমন এক চুক্তিতে পৌঁছেছে, যা গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাবে। পাশাপাশি দখলদার ইসরাইলী বাহিনী প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তা প্রবেশ ও বন্দি বিনিময়ের পথ সুগম করবে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ চুক্তি সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত তথ্য উঠে আসছে। চুক্তির আওতায় প্রায় ২০ ইসরাইলী জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হবে। এরপর মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ পর্যায়ক্রমে হস্তান্তর করা হবে। অপরদিকে ইসরাইল এক হাজার ৯৫০ ফিলিস্তিনী বন্দিকে মুক্তি দেবে, যার মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। এখন এ চুক্তির অন্যান্য অংশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ কীভাবে ঘটবে এবং কখন ঘটবে সে সম্পর্কে এখনো অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। যুদ্ধ বিরতির এ খবরে উচ্ছ্বাসের জোয়ার বইছে গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনীদের মধ্যে।

জানা যাচ্ছে, দু’বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধ শেষ করতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে গাজা উপত্যকায় অব্যাহত রয়েছে ইসরাইলের হামলা। গাজা সিটি ও খান ইউনিসে ইসরাইলী বিমান ও আর্টিলারির ব্যাপক গোলাবর্ষণে অন্তত নয়জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এ খবর হতাশাজনক। দেখা যাচ্ছে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও ইসরাইলী হামলা থেমে নেই। চুক্তির পর এ ঘটনা কেন ঘটছে তা নির্ণয় করা দরকার। ট্রাম্পের উদ্যোগে এ চুক্তি হয়েছে বিধায় তাকেই এর বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হবে।

আমরা মনে করি জাতিসংঘ ও বিশ্ব সম্প্রদায়কে গাজার শিশু ও নারীসহ অসহায় নিরপরাধ লোকগুলোর প্রাণ বাঁচাতে যথাযোগ্য চেষ্টা চালাতে হবে। নিরন্ন মানুষের জন্য ত্রাণসামগ্রী প্রেরণ নিশ্চিত করা, গাজার অবকাঠামো পুনর্গঠন, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনা পুননির্মাণ এবং ঘর বাড়িহারা গাজাবাসীকে গৃহ নির্মাণসহ জীবনের সামগ্রিক দিকগুলোকে পূরণ করার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ করতে হবে। গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের উপর ইসরাইলের এ হামলা চূড়ান্তভাবে বন্ধ করতে হবে। ইসরাইলী সেনা গাজা থেকে ফিরিয়ে নিয়ে গাজাবাসীকে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে হবে। তা না হলে এ চুক্তির কোন মূল্য থাকবে না।

আমরা মনে করি যে কোন মূল্যে এ যুদ্ধ বিরতিকে কার্যকর রাখতে ইসরাইলকে সম্মত করানোই হবে একটি বড় কাজ। সকল পক্ষকে যুদ্ধ বিরতি মেনে চলার বিষয়ে আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাই। গাজা পুনর্নির্মিত হবে, মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে চলবে একটি নতুন বিশ্ব শুরু হবে বলে ট্রাম্প যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তার বাস্তব নমুনা আমরা দেখতে চাই।