ইসরাইল শুধু যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র নয়, দাম্ভিকও বটে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানের কথা সে মানে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথেও নেতানিয়াহু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করে। কাতারে ইসরাইলি হামলার পর এমন দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। তবে এমন দৃশ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আসলেই কি ট্রাম্পকে তোয়াক্কা করে না ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু? এটা কেমন করে হয়? মার্কিন সাহায্য ছাড়া তো ইসরাইলকে খুঁড়িয়ে চলতে হবে। তাহলে ট্রাম্পের সাথে নেতানিয়াহুর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে অভিনয়ের কোনো বিষয় নেই তো? আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তো অনেক কিছুই হয়। তবে ইসরাইলের নৃশংস ও আগ্রাসী আচরণে বিশ্ববাসী বিরক্ত, ক্রোধান্বিত এবং কঠোর শাস্তিকামী। অনেকেই মনে করেন, ইসরাইলের সাথে অস্ত্রের ভাষায় কথা বলা প্রয়োজন। কারণ, দেশটি এ ভাষাটাই বোঝে। এ ব্যাপারে এখন নানা ইঙ্গিতও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের আগ্রাসন ঠেকাতে যদি জাতিসংঘের বাইরে কোন ঐক্যবদ্ধ শক্তি গঠিত হয়, তাহলে পাকিস্তান তাতে অংশ নেবে কিনা, আলজাজিরার এমন প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, ‘পাকিস্তানের খুবই বড় এবং কার্যকর সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে, যারা প্রচলিত যুদ্ধে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।’ কাতারে ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার পর আরব-ইসলামি সম্মেলনের আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ওই সাক্ষাৎকারটি রেকর্ড করা হয়েছিল। ইসহাক দার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আরব দেশগুলোর এবং আরব লীগের আলোচনায় ‘একটি যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের’ কথা উঠেছে। তিনি বলেন, এটা কেন নয়? এতে সমস্যা কী? তাদের অবশ্যই এমন একটি বাহিনী থাকা উচিত। নিজেদের সক্ষমতা এবং শক্তি অনুযায়ী একটি ব্যবস্থা তৈরি করা উচিত। এটি আক্রমণের জন্য নয়, বরং শান্তির জন্য করা উচিত; আগ্রাসী শক্তিকে থামাতে, দখলদারকে থামাতে এবং এমন কাউকে থামাতে যে কারও কথা শুনতে চায় না। এরপর উপস্থাপক প্রশ্ন করেন, যদি এমন বাহনী গঠন করা হয়, তখন পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে পাকিস্তানের অবস্থান কী হবে? জবাবে ইসহাক দার বলেন, পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান অবশ্যই উম্মাহর সদস্য হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করবে।
সাক্ষাৎকারে কাতারে ইসরাইলের হামলা প্রসঙ্গে ইসহাক দার বলেন, বলা হচ্ছে সেখানে হামাসের নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে হামলার ইসরাইলি এ অজুহাত একেবারে ভিত্তিহীন। কাতার তখন গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের সঙ্গে মধ্যস্থতা করছিল। সে সময় দেশটিতে ইসরাইলি হামলা ‘দস্যুবৃত্তি’ ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি বলেন, ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশে হামলা চালিয়েছে। এরপরও ইসরাইলের ওপর আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার নীতিমালা ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলোর কোনো প্রভাবই নেই। ইসহাক দার বলেন, এতে বোঝা যায়, বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় এখনই বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। বর্তমানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও জাতিসংঘ ব্যবস্থারই বড়ধরনের সংস্কার দরকার। জাতিসংঘ এখন আসলে কার্যকর কোন সংস্থা নয়। তাইতো মধ্যপ্রাচ্যে একটি যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের কথা উঠেছে। বিষয়টিকে সময়ের দাবি বলে বিবেচনা করা যায়।