বর্তমান সভ্যতা জালেমের জন্য বিশিষ্ট হয়ে আছে। এখানে মজলুমের আহাজারি শোনার কেউ নেই। যারা সভ্যতার শাসক তাদের কথা বলছি এখানে। তবে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে রাখা ভালো, সব ক্রিয়ারই একটি সম ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। ফিলিস্তিনে ইসরাইল যে যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে, তার প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে? মার্কিন সমরাস্ত্রের যে ধ্বংসলীলা ফিলিস্তিনে চলছে, তার দায় কত বড়? এখনো তো বিস্ফোরণে আকাশে উড়ছে ভূমিপুত্র ফিলিস্তিনিদের লাশ। এর জবাব শুধু পরকালে নয়, পৃথিবীতেই দিতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও। ইতিহাসের অমোঘ ক্যানভাসে এমন প্রক্ষেপ দেখা যায়। অবশ্য যারা অন্ধ ও বধির তাদের কথা আলাদা। তাদের কারণেই তো আজ পৃথিবীর এই দশা। জ¦লেপুড়ে ছাই হচ্ছে আমাদের প্রিয় এই ধরিত্রী।
যুদ্ধবিরতি ভেঙ্গে নতুন আগ্রাসনে গাজায় সীমাহীন নির্মমতা ও নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। গাজাবাসীকে নির্বিচারে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে নেতানিয়াহু বাহিনীর বর্বরতার বহু স্থির ও ভিডিও চিত্র। সাম্প্রতিক একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গাজার আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ একের পর এক বোমা হামলা চালাচ্ছে। বোমা বিস্ফোরণের তীব্রতায় লাশ আকাশে উড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে ভূমিতে পড়ছে। ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। গাজার স্থানীয় সাংবাদিক মোস্তফা আহমদ দালুল ভিডিওটি শেয়ার করে তার এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘ইসরাইলি দখলদারদের ব্যবহৃত মার্কিন রকেট শিশুদের আত্মা ও দেহ দু’টোকেই আসমানে পাঠিয়ে দিচ্ছে।’ ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় শনিবার তাদের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, গাজায় চলমান আগ্রাসনে শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ১৬২ জন। এনিয়ে ১৮ মার্চের পর যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরাইলি বাহিনীর নতুন হামলায় নিহত হয়েছে এক হাজার ৩০৯ জন। আহত হয়েছে আরো তিন হাজার ১৮৪ জন। সব মিলিয়ে ১৯ মার্চের আগ্রাসনে গাজায় নিহত হয়েছেন ৫০ হাজার ৬৬৯ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন এক লাখ ১৫ হাজার ২২৫ জন। এরমধ্যে শুক্রবার ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউ-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, গাজায় ১৮ মার্চের পর নতুন করে শুরু হওয়া ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রতিদিন অন্তত ১০০ শিশু হতাহত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘নতুন করে যুদ্ধ শুরুর মাধ্যমে আবার তাদের শৈশব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। গাজা শিশুদের ভূমি নয়, এ যুদ্ধ এমনটাই প্রমাণ করেছে।’ লাজারিনি বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিত মানবতায় এটি কলঙ্কের দাগ। কোনো অবস্থাতেই শিশুদের হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করা যায় না।’
গাজার পাশাপাশি অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীরেও বর্বরতা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের গ্রেফতার করছে তারা। আলজাজিরা জানায়, চলতি বছরে ইসরাইলি হামলায় পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছেন ১১৭ জন ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনজুড়ে ইসরাইলি বাহিনীর এমন বর্বতার মধ্যে তেল আবিবের জন্য ২০ হাজার অ্যাসল্ট রাইফেল পাঠাচ্ছে ওয়াশিংটন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলের কাছে প্রাণঘাতী এ অস্ত্র সরবরাহে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এ স্থগিতাদেশ তুলে দেওয়া হয়েছে। উপলব্ধি করা যায়, ভূমিপত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর আঘাত হানার জন্য অস্ত্রসরবরাহের ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসন বেশ উদার। হোক সেটা বাইডেন প্রশাসন কিংবা ট্রাম্প প্রশান। কৌশলগত কারণে কখনো কোনো প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ বাইডেন প্রশাসন স্থগিত করলেও তা আর স্থগিত থাকেনি। ট্রাম্প প্রশাসন সেটা আবার চালু করে দিয়েছে। ক্ষমতায় থাকলে বাইডেন প্রশাসনও হয়তো স্থগিতাদেশ তুলে নিত। কারণ বাইডেন প্রশাসনও তাদের মেয়াদে মারাত্মক সব অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে নেতানিয়াহুর আগ্রাসনকে। এদের মিলিত প্রয়াসেই তো ভূমিপুত্র ফিলিস্তিনিরা আজ উদ্বাস্তু। আর যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত ইসরাইল।