মানুষ ভ্রষ্ট না হলে তার মধ্যে ন্যায় থাকে, থাকে মানবিকতা। মানুষটি যে ধর্মের বা যে দেশের হোক না কেন। এ কারণেই হয়তো ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হাজারো সেনা গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। ৩ মে মুদ্রিত প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের যুদ্ধ থামানোর কোনো লক্ষণ নেই। অথচ এ যুদ্ধের বিরোধিতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সব শাখার হাজারো রিজার্ভ সেনা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহ সরকারের কাছে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। যুদ্ধের পরিবর্তে হামাসের কাছে জিম্মি বাকি ৫৯ জনকে মুক্ত করার জন্য একটি চুক্তি করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

উল্লেখ্য, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে গত জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি এবং ৩০ জনের বেশি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি অনেকের মধ্যে আশা জাগিয়েছিল যে, শিগগিরই এ যুদ্ধের অবসান ঘটতে পারে। কিন্তু গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ভেঙ্গে গাজায় আবার ভয়াবহ হামলা শুরু করলে আশাভঙ্গ হয়। ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান ড্যানি ইয়াতম বলেন, ‘আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, ইসরাইল খুব খারাপ অবস্থার দিকে এগোচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি, নেতানিয়াহু মূলত নিজের স্বার্থ নিয়েই বেশি ভাবছেন। তার অগ্রাধিকারের তালিকায় জিম্মিরা নন, বরং নিজের ও তার সরকারকে স্থিতিশীল রাখাই বড় হয়ে উঠেছে।’ ড্যানি ইয়াতম বলেন, ‘আমি চিঠিতে সই করেছি। আমি এ প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছি রাজনৈতিক কারণে নয়; জাতীয় স্বার্থের কারণে। আমি উদ্বিগ্ন যে, আমার দেশ পথ হারাতে যাচ্ছে?’

ইসরাইলের সরকারের কাছে এপ্রিলের প্রথম দিকে পাঠানো প্রথম খোলা চিঠিতে বিমানবাহিনীর এক হাজার রিজার্ভ সেনা ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা স্বাক্ষর করেছিলেন। চিঠিতে সেনারা লিখেছেন, ‘যুদ্ধ জারি রাখার বিষয়টি সরকার ঘোষিত লক্ষ্যগুলোর কোনোটি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছে না; বরং এটি জিম্মিদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’ পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে প্রায় প্রতিটি শাখার সেনারা, এমনকি বিশেষ বাহিনী এবং গোয়েন্দা শাখাও খোলা চিঠি দিয়েছে। সব মিলিয়ে চিঠিতে স্বাক্ষরকারীর সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর হাজারো ইসরাইলি রিজার্ভ সেনা নেতানিয়াহু সরকারের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন এরচেয়ে বেশি সেনা এ ডাক প্রত্যাখ্যান করছেন। বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলের রিজার্ভ সেনার সংখ্যা ৫০-৬০ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য এক বড় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ, কোনো যুদ্ধে সেনাবাহিনীকে রিজার্ভ সেনাদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হয়।

১৯৮২ সালে ইসরাইলের এথম লেবানন যুদ্ধের পর আর কখনো এমন সংকট দেখা যায়নি। আসলে ইসরাইল এখন গোটা বিশ্বে ইমেজ সংকটে পড়েছে। কে-ইবা যুদ্ধাপরাধী দেশের নাগরিক হতে চাইবে। ভূমিপুত্র ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনা তো প্রকাশ্য অপরাধ। এমন অপরাধের দায়ে আজ ইসরাইলীরা ভারাক্রান্ত। এ ভার বহন করার ক্ষমতা ইসরাইলীদের আছে কি?