DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

সম্পাদকীয়

শিশুটি কেন লাইফ সাপোর্টে

শিশুটি লাইফ সাপোর্টে! এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। শিশুটি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়তো। মাগুরা শহরে বোনের বাড়িতে আট বছরের শিশুটি বেড়াতে এসেছিল পবিত্র রমজানের ছুটিতে। কিন্তু এ কেমন আতিথ্য?

Printed Edition
Default Image - DS

শিশুটি লাইফ সাপোর্টে! এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। শিশুটি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়তো। মাগুরা শহরে বোনের বাড়িতে আট বছরের শিশুটি বেড়াতে এসেছিল পবিত্র রমজানের ছুটিতে। কিন্তু এ কেমন আতিথ্য? ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থার অবনতি ঘটলে শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। পুলিশ ও ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে আনা হয়। সেখান থেকে দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শিশুটি এখন সিএমএইচে।

মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তাৎক্ষণিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, শিশুটির গলায় দাগ আছে। মনে হচ্ছে কিছু দিয়ে চেপে ধরা হয়েছিল। শরীরের কিছু জায়গায় আঁচড় আছে। তার যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়েছে। মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী গণমাধ্যমকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তার পরিবারের সবাই ঢাকা থাকে। শিশুটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুলাভাই মো: সজিব শেখ ও দুলাইভাইয়ের বাবা হিটু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে জুমার পর মাগুরা সদরে মহাসড়ক অবরোধ ও থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা থানার মূল ফটক ঘেরাও করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান। পরে সেনাবাহিনী এসে বিক্ষোভকারীদের ছাত্রভঙ্গ করে দেয়।

পবিত্র রমযান মাসে নিষ্পাপ একটি শিশুর সাথে যে নিষ্ঠুর ও পাশবিক ঘটনা ঘটে গেল তা শুধু দু:খজনক নয়, মর্মান্তিকও বটে। এ কেমন আপনজন, যারা একটি শিশুর সম্ভ্রম ও মানবিক মর্যাদা রক্ষা করতে পারে না? এরা তো শত্রুর চাইতেও অধম। মানুষ মানুষ থাকলে কি এমন ঘটনা ঘটাতে পারে? তাহলে কী কারণে মানুষ অমানুষ হয়ে যায়? রিপুর তাড়নায় সংযমের অভাবে? রমজানের সিয়াম তো মানুষকে রিপু দমনে এবং সংযমে সমৃদ্ধ হতে শিক্ষা দেয়। কিন্তু এর বিপরীত ঘটনাই তো সমাজে ঘটছে। তাহলে কি রমজানের মর্মবাণী গ্রহণে আমরা ব্যর্থ, আনুষ্ঠানিকতাই কি আমাদের জীবনে বড় হয়ে উঠছে? আর একটি বিষয় হলো, আধুনিকতার দোহাই দিয়ে আমরা কি ক্রমেই ধর্মের মৌলিক বিধিবিধান থেকে দূরে সরে যাচ্ছি? প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে; আনন্দ-বিনোদন, মেলামেশা ও সফরের ক্ষেত্রে ইসলামের রয়েছে বাস্তবসম্মত সঙ্গত বিধিবিধান। সবাই সব জায়গায়, সবার সাথে যেতে পারেন না, থাকতে পারেন না। মেয়েদের জন্য মাহরামের বিধান রয়েছে। আর পর্দার বিধান রয়েছে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই। এখন বান্দা যদি স্রষ্টার বিধান লংঘন করে, তাহলে তো মন্দ ফল অনিবার্য হয়ে উঠবে। আমাদের সমাজে শ্যালিকা-দুলাইভাইয়ের অবাধ মেলামেশার বিষফল তো কারো অজানা নয়। তবুও চলছে সীমালংঘনের অনাচার। অবস্থা এমন পর্যায়ে পেঁৗঁছেছে যে, শিশুরাও এখন নিরাপদ নয়। বিষয়টি কি অভিভাবকরা উপলব্ধি করছেন? সচেতন হোন এবং বান্দা হিসেবে স্রষ্টার বিধান মান্য করুনÑএটাই সময়ের দাবী।