মাদকদ্রব্য ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। মাদককে কেউ ভালো বলেন না, বরং সবাই ‘না’ বলে থাকেন। তারপরও মাদকের এত ছড়াছড়ি কেন? বেআইনি এমন পণ্যের কারবারে তো ক্ষমতা প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের তেমন ক্ষমতা নেই। তাহলে ক্ষমতাবান সে বিশেষ মানুষ কারা? বিভিন্ন সময় মাদকব্যবসার সাথে জড়িত ক্ষমতাবানদের পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে শুধু পেশাদার সন্ত্রাসীদের নামই ছিল না, ছিল রাজনীতিবিদ, এমপি এবং কিছু ছাত্র নেতাদের নামও। ক্ষমতা ও অর্থলিপ্সা এদের পথভ্রষ্ট করেছে।

আরও দুঃখজনক চিত্র হলো, মুখে মুখে সবাই মাদকবিরোধী বক্তব্য রাখলেও বাস্তবে এর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তেমন কেউ এগিয়ে আসে না। মাঝে মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু রুটিন তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও তাতে কাক্সিক্ষত ফল আসে না। আসলে মাদকের মত জিনিসের উৎখাতের জন্য প্রয়োজন সমন্বয়ধর্মী বহুমাত্রিক অভিযান ও ধারাবাহিক তৎপরতা। কোনো ঘটনাকেন্দ্রিক তাৎক্ষণিক তৎপরতায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ বা উৎখাত সম্ভব নয়। কারণ এ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে সমাজের নানা পক্ষের স্বার্থ।

সাম্যের কথা হয়তো আমাদের মনে আছে। মাস ছয়েক আগে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা এস এম শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহত হয়েছিলেন। পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা সাম্য হত্যা ঘটনায় মাদক কারবারিদের দায় পেয়েছেন। অভিযোগপত্রে তিনি বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্য ও তার বন্ধুরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বেচতে নিষেধ করায় মাদক কারবারিদের আক্রমণের শিকার হন। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, অভিযোগপত্রে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করায় সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।

সাম্য হত্যার ঘটনায় মাদকের মন্দপ্রভাব এবং মাদকব্যবসার নৃশংসতার বিষয়টি উপলব্ধি করা যায়। ডাকসু নেতৃবৃন্দেরও বিষয়টি উপলব্ধি করার কথা। ভিপি সাদেক কায়েমের নেতৃত্বাধীন ডাকসু এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এ অভিযানকে বিপুলভাবে সমর্থন করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন অনেকটাই মাদকচর্চা ও এর ব্যবসা থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। তবে দুঃখের বিষয় হলো, কোনো কোনো ছাত্র সংগঠন এবং কোনো কোনো শিক্ষক কৌশলে ডাকসুর মাদকবিরোধী অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। তারা বলেছেন, মাদক কারবারিদের উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। প্রশ্ন হলো, ওদের পুনর্বাসনের দায় কি ডাকসুর ওপর বর্তায়? আসলে দলীয় ক্ষুদ্র রাজনীতির কারণেই আমাদের শুদ্ধির কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হয়।