বিশ্ববিদ্যালয় তো নিয়ন্ত্রণ করার বিষয় নয়। বিশ্ববিদ্যালয় বরং জ্ঞান চর্চার মুক্ত অঙ্গন। ‘নিয়ন্ত্রণ’ শব্দটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যায় না। আমরা তো অনেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ সম্পর্কে জেনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো Communication of knowledge, Preservation of knowledge এবং Creation of knowledge. জ্ঞানের এ অঙ্গনে তো কোনো সরকার বা সরকার প্রধানের হস্তক্ষেপ করার কথা নয়। কিন্তু সে হস্তক্ষেপের কাজটি হচ্ছে এবং তা করছেন বর্তমান সভ্যতার শ্রেষ্ঠনেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০০ কোটি ডলারের অনুদান বাতিল করে তা এখন বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল বিষয়ক গবেষণার জন্য এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেওয়ার কথা ভাবছেন দেশটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প একথা জানান। মাত্র কয়েক দিন আগেই হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের চেষ্টা চালিয়েছিল তার প্রশাসন। তবে আদালতের আদেশে সে সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। এর আগে বিগত সপ্তাহগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের সরকরি অনুদান স্থগিত করেছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প প্রশাসনের এমন উদ্যোগে বিস্মিত হতে হয়। ট্রাম্প আসলে কী চাইছেন? পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, ট্রাম্প আসলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আনতে চাইছেন। সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় বিভিন্ন অভিযোগও তুলেছেন। হার্ভার্ডে ডেমোক্র্যাট ও কট্টর বামপন্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। অবশ্য এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ।

এদিকে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন কঠোর করার মধ্যেই মার্কিন সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, তারা যদি ক্লাস না করেন বা কাউকে না জানিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে যান, তাহলে তাদের ভিসা বাতিল হতে পারে। ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঘোষণাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে প্রকাশ করেছে।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার মামলা করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর) এবং তাদের স্থানীয় তিনটি সম্প্রচার কেন্দ্র। ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালতে মামলাটি করা হয। এনপিআর বলছে, সংবাদমাধ্যমটির সরকারি অনুদানে কাটছাঁট করতে গত মাসে ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, তা অবৈধ। উপলব্ধি করা যায়, ট্রাম্প অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন, অভিবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন ও কঠোর করছেন। প্রেসিডেন্ট এবং তার প্রশাসন তো এসব করতেই পারেন। এখানে বিবেচনার বিষয় হলো, নিয়ন্ত্রণ বা কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি কি যুক্ত রাষ্ট্রের মত একটি বহু ধর্ম, বর্ণ ও ভাষার রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হবে? বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি কি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা পছন্দ করবে? আখেরে যুক্তরাষ্ট্র তো অভিবাসীদের একটি দেশ।